শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:২৯ পূর্বাহ্ন

রয়টার্সের বিশ্লেষণে শেখ হাসিনা সম্পর্কে যা বলা হয়েছে

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ৯ জানুয়ারী, ২০২৪
  • ১১৩ Time View

ডেস্ক নিউজ : দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একসময় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের অগ্রসারির সৈনিক, যিনি বিরোধীদের সঙ্গে যুগপৎভাবে গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করেছিলেন এবং এখন যার বিরুদ্ধে বাক স্বাধীনতা হরণ এবং বিরোধীদের দমনপীড়নের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জনক শেখ মুজিবুর রহমান, যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন— ১৯৭৫ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানে পরিবারের প্রায় সব সদস্যসহ নিহত হন। সে সময় ইউরোপে অবস্থানের কারণে সৌভাগ্যবশত সেই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড থেকে বেঁচে যান তিনি। ১৯৪৭ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে জন্মগ্রহণ করা শেখ হাসিনা তার পিতা-মাতার ৫ সন্তানের মধ্যে সর্বজেষ্ঠ্য। ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন তিনি।

শিক্ষার্থী জীবনে ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন হাসিনা। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান এবং ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের যে অংশটি তার বাবা শেখ মুজিবুর রহমানের অনুসারী ছিলেন, সেটির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ছিল তার। ১৯৮১ সালের আগ পর্যন্ত মূলত এটিই ছিল শেখ হাসিনার প্রধান রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা।

১৯৭৫ সালের সেই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের পর ছয় বছর দিল্লিতে নির্বাসিত জীবন কাটানো শেখ হাসিনা দেশে ফেরেন ১৯৮১ সালে; দায়িত্ব গ্রহণ করেন আওয়ামী লীগের। ১৯৮১ সালে যখন শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসেন, বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান সে সময় ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল জিয়াউর রহমান। হাসিনা ফিরে আসার কয়েক মাস পর চট্টগ্রামে এক সামরিক অভুত্থানে নিহত হন জেনারেল জিয়া। জিয়া নিহত হওয়ার পর তার প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপির প্রধান নেতার পদে আসীন হন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া।

এদিকে জিয়া নিহত হওয়ার পর ক্ষমতায় আসেন আরেক সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তার পতনের দাবিতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে হাত মিলিয়ে যুগপৎভাবে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন শুরু করেন শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ। সেই আন্দোলনের জনপ্রিয়তাই মূলত ১৯৯০ সালে পতন ঘটায় এরশাদের ৯ বছরের শাসনের।

তবে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার যে মৈত্রী স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনকে সফল করেছিল— অল্প সময়ের মধ্যেই তা শেষ হয়ে যায়। পরস্পরের প্রতি এক গভীর বৈরীতাপূর্ণ মনোভাব দেখা দেয় দুই নেত্রীর মধ্যে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তারা উভয়ে পরিচিতি পান ‘ব্যাটেলিং বেগমস’ নামে। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেছে দুই নেত্রীর পারস্পরিক বৈরীতাপূর্ণ মনোভাব।

হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ প্রথমবার নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করেছিল ১৯৯৬ সালে। পরে ২০০১ সালের নির্বাচনে পরাজিত হয়ে বিরোধী দল হয়, তারপর ২০০৯ সালের নির্বাচনে ফের জয় পেয়ে সরকার গঠন করে। তারপর থেকে এ পর্যন্ত যে চারটি নির্বাচন হয়েছে, তার প্রতিটিতেই জয়ী হয়েছেন শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ।

কিন্তু আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, ২০০৯ সালের পর থেকে যত সময় গড়িয়েছে— তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সেই অনুপাতেই কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠেছেন হাসিনা। তার গত ১৫ বছরের শাসনামলকে গণগ্রেপ্তার, গুম এবং বিচার বহির্ভূত হত্যাকণ্ডের আমল বলে চিহ্নিত করেন বাংলাদেশি এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকদের একাংশ।

বাংলাদেশের বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার ভাষ্য, গত প্রায় দেড়যুগে বাংলাদেশে কার্যত একদলীয় শাসন কায়েম করেছে আওয়ামী লীগ। দুর্নীতি মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে ২০১৮ সালে কারাগারে যেতে হয়েছিল বিএনপি চেয়ার পারসন খালেদা জিয়াকে। পরে করোনা মহামারির সময় তাকে কারাগারের পরিবর্তে বাসভবনে বসবাসের অনুমতি প্রদান করা হয়, তবে শর্ত দেওয়া হয় যে রাজনীতি এবং নিজের রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখতে পারবেন না তিনি। খালেদা জিয়া সেই শর্ত মেনে চলছেন।

খালেদা জিয়ার পুত্র এবং বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গত বেশ কয়েক বছর ধরে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা রয়েছে এবং যদি তিনি দেশে ফেরেন, তাহলে ঢাকা পা রাখামাত্র যে কোনো সময় গ্রেপ্তার হতে পারেন তিনি। দলটির পরবর্তী জেষ্ঠ্য নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও বিএনপির প্রথম সারির বেশিরভাগ নেতা অগত অক্টোবরের শেষ পর্যায় থেকে বিভিন্ন মামলায় কারাগারের অভ্যন্তরে ও বাইরে দিন কাটাচ্ছেন।

বিএনপি এবং বিএনপিপন্থি বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দাবি, আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে  দলটির প্রায় ১০ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছে বিএনপি। কিন্তু এই দাবি বরাবরই প্রত্যাখ্যান করে আসছেন শেখ হাসিনা। দাবি আদায়ের জন্য গত অক্টোবরের শেষ দিক থেকে আন্দোলন শুরু করেছে বিএনপি এবং তার জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামি, সেই আন্দোলনে ইতোমধ্যে ১৪ জনের মৃত্যুও হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ যে নির্বাচন মেনে নিয়েছে— নতুন করে তার স্বচ্ছতা প্রমাণের কোনো প্রয়োজন তিনি বোধ করেন না। ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেটি— তা হলো বাংলাদেশের জনগণ এই নির্বাচন গ্রহণ করবে কিনা,’ নির্বাচনের আগে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন আওয়ামী লীগ প্রধান।

এদিকে সমালোচকরা যদিও গত ১৫ বছরকে তার কর্তৃত্ববাদী শাসনের আমল বলে চিহ্নিত করেছেন, তবে আরও একটি সত্য হলো—গত ১৫ বছরে গার্মেন্ট শিল্প এবং বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, তার কৃতিত্বও শেখ হাসিনার। মূলত তার নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়েই এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতির দেশের কাতারে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ।

সূত্র: রয়টার্স

 

 

কিউএনবি/আয়শা/০৯ জানুয়ারী ২০২৪,/বিকাল ৪:৩৪

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

December 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit