বাদল আহাম্মদ খান ,ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি : ৫০০ ফুট রাস্তা। আরসিসি ঢালাই। ব্যয় প্রায় সাত লাখ টাকা। নির্মাণ করছেন ইউনিয়ন পরিষদের একজন সদস্য (মেম্বার)। খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যাওয়া। মেম্বার খোঁজ নেওয়া। কয়েকজন মিলে হাত উঁচিয়ে দেখিয়ে দিলেন। চোখ ছানাবড়া। অন্য শ্রমিকদের সঙ্গে কাজ করছেন মেম্বার। কখনো ঢালাইয়ের কাজে ব্যস্ত। কখনো কাজের নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন।সামনে এগিয়ে যেতেই মো. সুমন মিয়া নামে এক শ্রমিক বললেন, ‘আমডা গরীবের বন্ধু কামরুল মেম্বারের লগে উন্নয়নের কাম করি।’ মো. জামির হোসেন পারভেজ বলেন, ‘কামরুল মেম্বারের মত মেম্বারের লগে কাম কইরা মনডাত শান্তিত লাগে।’ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বিদ্যাক‚ট ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড এর মেম্বার মো. কামরুল হাসান। এলাকার উন্নয়নে নিজ ঘাটের টাকা খরচ করে রাস্তা, ড্রেনসহ অন্যান্য উন্নয়ন কাজ করে যাচ্ছেন। এলাকায় এখন তিনি মহৎ প্রাণ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। কামরুল ইসলাম বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আলীর ছেলে। সৌদি প্রবাসী তিনি। বছরে একবার গিয়ে এক মাসের মতো থাকেন। সেখান থাকা দোকানের হিসেব-নিকেশ করে লাভাংশ নিয়ে আসেন। আর ওই লভ্যাংশ থেকেই তিনি জনগণের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সরজমিনে গিয়ে ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিদ্যাকুট ইউনিয়নের সেমন্তঘর গ্রামের একটি মন্দিরের সামনে থেকে গ্রামের ভেতরে ঢোকার রাস্তায় ঢালাই কাজ চলছে। সেখানে দিক নির্দেশনা দেওয়ার পাশাপাশি কামরুল হাসান নিজেও কাজ করে যাচ্ছেন। রাস্তাটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৫০০ ফুট। আগে এ রাস্তাটি ছিলো একেবারেই কাঁচা। বর্ষায় হাঁটু পানি লেগে থাকতো। ইউপি মেম্বার কামরুল প্রথমে মাটি ফেলে রাস্তাটি উঁচু করেন। এখন নিচে রড বিছিয়ে সিমেন্ট, কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে রাস্তাটি করছেন।কামরুল হাসানের কাজ এখানেই শেষ নয়। তিনি সরকারিভাবে তিন লাখ টাকা পেয়ে সাত লাখ টাকার বেশি ব্যয়ে একটি ড্রেন নির্মাণ করে দিয়েছেন। বাকি চার লাখ টাকা দিয়েছেন নিজের পকেট থেকে। সেমন্তঘর বাজার সংলগ্ন ওই ড্রেনটি। এছাড়া এলজিইডি’র সড়ক থেকে এরশাদ মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত ৩০০ ফুট, এলজিইডির সড়ক থেকে সাবুদ মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত ৬০০ ফুট রাস্তা নির্মাণ করে দিয়েছেন নিজের টাকায়।আব্দুল হান্নান নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘যে রাস্তাটি এখন হচ্ছে এটি দিয়ে হাঁটা চলাই দায় ছিলো। এখন চাইলে কেউ গাড়ি নিয়েও যেতে পারবে।’ তাজুল ইসলাম, কুদ্দুস মিয়া জানান, শুধু এ রাস্তা না আরো একাধিক উন্নয়ন কাজ নিজের পকেটের টাকায় করেছেন মেম্বার কামরুল।
স্থানীয় বাসিন্দা ও জেলা ছাত্রলীগ নেতা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘একজন মেম্বারের হাত ধরে একটি এলাকার যে কত পরিবর্তন হতে পারে এর অন্যতম উদারহরণ হতে পারে কামরুল হাসান। এলাকার মানুষ তার এ কাজে খুবই খুশি। আমরা তাকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করবো।কথা হয় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জাকির হোসেন ভুইয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি কামরুল মেম্বারের হাত ধরে মডেল হবে সেমন্তগর গ্রাম। আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে রাস্তাটির কাজটি দেখে গেছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ফয়জুর রহমান বাদল। মেম্বারের ব্যক্তি টাকায় এমন কাজ দেখে তিনিও বাহবা দিয়েছেন।কামরুল হাসান বলেন, ‘ছোট বেলা থেকেই মানুষের সেবা করতাম। এখন আল্লাহ আমাকে ভালো কিছু করার সুযোগ করে দিয়েছেন। আমি চেষ্টা করি সরকারি বরাদ্দের দিকে না তাকিয়ে নিজের পকেটের টাকা খরচ করে এলাকার উন্নয়ন করার। আমি সকলের সহযোগিতা নিয়ে এসব উন্নয়ন কাজগুলো করি।