রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১২:২৬ অপরাহ্ন

সিন্ডিকেট ভাঙলে কেজিপ্রতি ৫০০ টাকায়ও গরুর মাংস বিক্রি সম্ভব

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৩
  • ২১১ Time View

ডেস্ক নিউজ : গরুর মাংসের দাম নিয়ে খামারি ও ব্যবসায়ীরা দ্বিমুখী অবস্থান নিয়েছেন। ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ দাম প্রস্তাবের পর বিরোধিতা করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন-যখন গরুর মাংসের কেজি ৬০০ টাকার নিচে বিক্রি হচ্ছে, ঠিক তখনই কম দামে মাংস বিক্রি রোধে ৬৫০ টাকা নির্ধারণ করেছে। যা অযৌক্তিক। তাদের মতে, মাংসের বাজারে সিন্ডিকেট রোধ করা গেলে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৫০০ টাকায় বিক্রি সম্ভব হবে। বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

এদিকে বেশ কয়েকদিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৫৫০ থেকে ৫৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর এই দামে মাংস কিনতে পেরে যেমন ক্রেতার স্বস্তি ছিল, ঠিক তেমনি বিক্রি বাড়ায় বিক্রেতাদেরও লাভ বেশি হয়েছে। এমন সময় বুধবার প্রতি কেজি ৬৫০ টাকা নির্ধারণের ঘোষণায় ক্রেতা ও বিক্রেতা দুপক্ষ অসন্তোষ জানিয়েছেন। 

এমন পরিস্থিতিতে গরুর মাংসের দাম কেজিপ্রতি কত টাকা হবে তা পর্যালোচনার জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সহযোগিতা নিচ্ছে জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তর। ইতোমধ্যে পর্যালোচনার জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সংস্থাটি বলছে-বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে তারা যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করবে।

রাজধানীর শাহজাহানপুরের মাংস ব্যবসায়ী খলিল যুগান্তরকে জানান, ৫৫০-৫৯৫ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি করার মধ্যে একটি শান্তি আছে। কারণ ক্রেতারাও কিনতে পারছেন আর আমার বিক্রিও বেশি হচ্ছে। যেখানে ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতাম সে সময় দুই থেকে তিনটি গরু বিক্রি হতো। এখন ২০-২৫টি গরু জবাই হয়। আমি কম টাকায় গরুর মাংস বিক্রি করছি এতে কি আমার লোকসান হচ্ছে? আমার লাভ না হলে আমি কিভাবে বিক্রি করি। 

তিনি জানান, গরুর মাংসের বাজারে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট কাজ করে। তাদের জন্য মূলত দাম বাড়ে। এখন তাদের কথা না শুনে ব্যবসা করছি এটা তাদের ভালো লাগছে না।

একই স্থানে মাংস কিনতে আসা মো. আসলাম যুগান্তরকে বলেন, আমি এক কেজি গরুর মাংস ৬০০ টাকায় পেলে কেন ৬৫০ টাকায় কিনতে যাব। অনেকেই ৫৫০ টাকায়ও বিক্রি করছেন। তারা যদি এ টাকায় বিক্রি করে লাভ করতে পারেন, তবে যারা ৭০০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি করেন তাদের কোনো লাভ হচ্ছে না? এসবই ভাঁওতাবাজি। ক্রেতার পকেট মারার ধান্ধা। এ সব থেকে ক্রেতাদের রক্ষার জন্য যেসব সরকারি সংস্থা কাজ করে তাদের নজরদারি বাড়াতে হবে। কোন পর্যায়ে কারসাজি হচ্ছে তা বের করে কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এতে অসাধুদের থাবা থেকে ভোক্তা সুরক্ষা পাবে।

তবে নয়াবাজারের মাংস বিক্রেতা মো. শাহ আলম বলেন, আমি পশু পালন করি না। পশু কিনে এনে মাংস বিক্রি করি। বা মাংস কিনে এনে বিক্রি করি। আমি ৬৫০ টাকা করে কেজি কিনে এনেছি। এখন আমি কত টাকা বিক্রি করব? তিনি জানান, মাংস বিক্রি নিয়ে এক প্রকার ধোঁয়াশা চলছে।

এদিকে গরুর মাংসের মূল্য নির্ধারণ নিয়ে কথা হয় বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিটির মহাসচিব রবিউল ইসলামের সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম ৬৫০ টাকা বিক্রির যে ঘোষণা এটার আমি তীব্র বিরোধিতা করছি। কারণ অনেকেই ৫৫০-৫৯৫ টাকা কেজিতে মাংস বিক্রি করছেন। মূল্য ঘোষণা দিয়ে তাদের কম দামে মাংস বিক্রি বন্ধ করা হচ্ছে। 

এতে ক্রেতারা কম দামে মাংস কেনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। যেহেতু এই মুহূর্তে মাংসের দাম নিম্নমুখী তাই বাজার পর্যবেক্ষণ করবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। কেজিপ্রতি ৬০০ টাকার উপরে যাতে গরুর মাংস বিক্রি করতে না পারে সেদিকে সংস্থাটি তদারকি করা উচিত। এতে ক্রেতার উপকার হবে। 

তিনি বলেন, মাংসের বাজারে সিন্ডিকেট রয়েছে। আর এই সিন্ডিকেট ভাঙতে পারলে কেজিপ্রতি ৫০০ টাকায়ও গরুর মাংস বিক্রি সম্ভব।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. ইমরান হোসেন বলেন, মূল্য নির্ধারণ ক্রেতার স্বার্থেই করা হয়েছে। কারণ কম দামে মাংস বিক্রিতে বিক্রেতারা মাথা, কলিজা, চর্বি ও পায়ের হাড় দিয়ে বিক্রি করছে। এতে ক্রেতারা মাংসের পরিমাণ কম পাচ্ছেন। তাই কেজিপ্রতি ৬৫০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। যেখানে এক কেজি মাংস বিক্রিতে সাড়ে ৭০০ গ্রাম মাংস দিতে হবে। সঙ্গে ২০০ গ্রামের বেশি হাড় ও ৫০ গ্রামের বেশি চর্বি দিতে পারবে না। সঙ্গে মাথার মাংস, পায়ের হাড়, ভুড়ি, চর্বি এগুলো দিতে পারবে না। এসব কিছু চিন্তা করে কেজিপ্রতি ৬৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যাতে ক্রেতারা ভালোমানের মাংস কিনতে পারেন। 

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, গরুর মাংসের যে দাম নির্ধারণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, সেটা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এর পর বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের মতামত নেব। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের যদি কোনো কাজ করতে হয় সেখানে চিঠি দেওয়া হবে। আমি কোনো দাম নির্ধারণ করে দেব না। সবকিছু পর্যালোচনা করে তারা একটি যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করবেন। 

 

 

কিউএনবি/আয়শা/০৭ ডিসেম্বর ২০২৩,/রাত ১১:২৫

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit