যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়টা অনেকটা ইসরাইলের ওপর নির্ভর করছে। দেশটির নেতা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যদিও যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে যুদ্ধবিরতির কথাও বলছেন তিনি। আল জাজিরার প্রতিবেদন মতে, নেতানিয়াহু মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে বলেছেন, প্রতি ১০ জন জিম্মির মুক্তির বিনিময়ে একদিন করে যুদ্ধবিরতি দেবেন। হামাসও নেতানিয়াহুর প্রস্তাবের সঙ্গে একমত বলেই মনে হচ্ছে। ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী গোষ্ঠী বলেছে, তারাও যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াতে চায়। তবে তাদের শর্ত ইসরাইলি কারাগার থেকে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দিতে হবে।
গাজায় যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানো নিয়ে ইসরাইলি মন্ত্রিসভায় আলোচনাও হয়েছে। স্থানীয় সময় রোববার (২৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বৈঠকে বসে ইসরাইলি মন্ত্রিসভা। সংশ্লিষ্ট এক সূত্রের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির পূর্ণাঙ্গ চুক্তির শর্তপূরণ সাপেক্ষে এর মেয়াদ বাড়াতে রাজি ইসরাইল সরকার। সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে একটি শর্তানুযায়ী, হামাস যদি প্রতিদিন ১০ জন করে জিম্মিকে মুক্তি দেয়, তাহলে একদিন করে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানো হতে পারে। এই শর্তের কথাই বলেছে ইসরাইলের মন্ত্রিসভা।
গত ৭ অক্টোবর নতুন করে শুরু হয় হামাস-ইসরাইল সংঘাত। এরপর টানা প্রায় ৭ সপ্তাহ ধরে গাজায় বিমান হামলা ও স্থল অভিযান চালায় ইসরাইল। এতে ইসরাইলের ১ হাজার ২০০ জন নিহত ও কয়েক হাজার আহত হয়েছে। অন্যদিকে ইসরাইলের হামলায় গাজায় প্রায় ১৫ হাজার নিহত ও ৩৫ হাজার আহত হয়েছে। সেই সঙ্গে গাজা উপত্যকা কার্যত ধ্বংস হয়ে গেছে।
গত মাসে হাসাম-ইসরাইল সংঘাত শুরু হওয়ার পরই মূলত যুদ্ধবিরতির আলোচনা শুরু হয়। প্রধানত কাতারের মধ্যস্থতায় চলতি সপ্তাহে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হয় উভয় পক্ষ। চুক্তির প্রধান শর্ত ছিল, গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধ ও ত্রাণের ট্রাক প্রবেশের সুযোগ দেয়া এবং বন্দি বিনিময়।
এরপর গত শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) সকাল ৭টায় চারদিনের যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। চুক্তি অনুযায়ী যুদ্ধবিরতির মধ্যে এ পর্যন্ত তিন দফায় বন্দি বিনিময় হয়েছে। আল জাজিরার প্রতিবেদন মতে, শুক্রবার যুদ্ধবিরতির প্রথম দিনে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ১৩ জন ইসরাইলি শিশু ও বৃদ্ধকে মুক্তি দেয়। অপরদিকে নারী-শিশুসহ ৩৯ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেয় ইসরাইল।
এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার (২৫ নভেম্বর) যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় দিন হামাস নারী-শিশুসহ ১৩ জন ইসরাইলিকে মুক্তি দেয়। যার মধ্যে ছয়জন নারী ও সাতটি শিশু। বিপরীতে নারী ও শিশুসহ ৩৯ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেয় ইসরাইল। যার মধ্যে ছয়জন নারী ও ৩৩ শিশু।
এরপর যুদ্ধবিরতির তৃতীয় দিন রোববার ( ২৬ নভেম্বর) তৃতীয় দফায় ১৩ ইসরাইলি ও ৪ বিদেশি নাগরিককে মুক্তি দেয় হামাস। আর তার বিনিময়েই আরও ৩৯ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেয় ইসরাইল। সোমবার (২৭ নভেম্বর) চতুর্থ দফায় বন্দি বিনিময়ের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, মঙ্গলবার (২৮৮ নভেম্বর) সকাল ৭টায় যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার কথা।