জালাল আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি : গত ১৫ নভেম্বর (২০২৩ ) তারিখে সন্ধ্যায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল কর্তৃক আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা এবং এর মাধ্যমে আবারো একটি একতরফা নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন “সাদা দল”। আজ ১৮ নভেম্বর(২০২৩) শনিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান , যুগ্ন আহবায়ক অধ্যাপক মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান খান এবং যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক মোঃ আব্দুস সালাম স্বাক্ষরিত এক যৌথ বিবৃতিতে তারা এ প্রতিবাদ জানান।
তাঁরা আরও বলেন, “বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থার মাধ্যমে নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনে দেশের মানুষের দাবি এবং আন্তর্জাতিক মহলের পরামর্শ উপেক্ষা করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আমরা তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি”।
চলমান রাজনৈতিক সংকট সম্পর্কে তাঁরা আরও বলেন ,”বিগত দেড় দশকে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকার দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহ ও নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ফেলেছে। মানবাধিকার ও সুশাসন আজ সুদূরপরাহত। বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং তাদের জোটভুক্ত রাজনৈতিক
দলসমুহ ছাড়া এদেশের ক্রিয়াশীল সকল রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবর্গ, গণতান্ত্রিক বিশ্ব,আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এবং জাতিসংঘসহ বিভিন্নদেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশে আসন্নদ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ এবং গ্রহণযোগ্য করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য দাবি জানিয়ে আসছে”।
বর্তমান সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত অতীতে নির্বাচনের তিক্ত অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তাঁরা আরও বলেন ,”বর্তমান সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে এদেশের মানুষ বুঝতে পেরেছে এই সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও লক্ষ্মীপুরের দুটি উপনির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রকাশ্যে ভোট জালিয়াতির ঘটনায় এটি আবারো প্রমাণিত হয়েছে যে, তাদের অধীনে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের পক্ষে কোনো সুষ্ঠুনির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব নয়। এ ঘটনা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর একটি
দল-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের আন্দোলনের যৌক্তিকতাকে আরো জোরালো করেছে। কিন্তু জনদাবি এবং আন্তর্জাতিক মহলের একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের পরামর্শ উপেক্ষা করে বর্তমান ফ্যাসিস্ট ও অগণতান্ত্রিক আওয়ামী সরকার আবারো একটি প্রহসনের একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের অপচেষ্টা করছে”।
সরকার বিএনপির সিনিয়র নেতাদের কে দমন-পীড়ন করে একতরফা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তাঁরা আরও বলেন ,”এজন্য গত ২৮ অক্টোবর পরিকল্পিতভাবে বিএনপির মহাসমাবেশ পন্ড করা এবং পরবর্তীতে বিএনপি মহাসচিব জনাব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ এবং নেতা-কর্মীদের গণহারে গ্রেপ্তার করে কারাগারে আবদ্ধ করেছে। বস্তুত বিএনপি
এবং বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের কারারুদ্ধ করে তারা ফাঁকা মাঠে একতরফা নির্বাচন আয়োজনের চেষ্টা করছে। এরই অংশ হিসেবে বর্তমান আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে”। একতরফা নির্বাচনের ভবিষ্যৎ পরিণতি সম্পর্কে তাঁরা বলেন, “আমরা মনে করি, সরকার কম্বোডিয়ান স্টাইলে একটি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকতে চাইছে। আমরা আওয়ামী সরকারের এ
ধরণের হীন রাজনৈতিক অপকৌশলের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। রাজনৈতিক সমঝোতার পথ পরিহার করে তফসিল ঘোষণা এবং একতরফা নির্বাচন আয়োজনে সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে এটি দেশের রাজনৈতিক সংকটকে আরো ঘনীভুত করবে এবং এতে দেশে নৈরাজ্য আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে আমরা মনে করি। এ অবস্থা আমাদের কাছে কোনোভাবেই কাম্য নয়। বর্তমানে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা অনেক নাজুক। আাবারো একটি বিতর্কিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ কেবল সংঘাতময়ই হবে না, বরং দেশ দীর্ঘস্থায়ী সংকটের আবর্তে নিপতিত হতে পারে বলে আমাদের আশঙ্কা”।
তফসিল বাতিল করে দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে তাঁরা বলেন,“তাই দেশের বৃহত্তর কল্যাণে আসন্নজাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল বাতিল করে রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে একটি দল-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি”।
কিউএনবি/আয়শা/১৮ নভেম্বর ২০২৩,/রাত ৯:৫৫