বিনোদন ডেস্ক : দেশের ১৫৩ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনীনির্ভর সিনেমা ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’। সিনেমাটির প্রতিটি দৃশ্যে রূপায়ণ করা হয়েছে বাংলাদেশের মহান স্থপতির ঐতিহাসিক জীবনকে। ছবিটির কেন্দ্রীয় তথা মুজিব চরিত্রে অভিনয় করেছেন চিত্রনায়ক আরিফিন শুভ।
বঙ্গবন্ধুর চরিত্র ধারণ করাটা তার জন্য সহজ ছিলনা। এমনকি চরিত্রটির জন্য যে তাকে নির্বাচন করা হয়েছে সেটি নিজেকে এখনও বিশ্বাস করাতে পারেন না শুভ। তিনি বলেন, ‘তখন আমি ‘মিশন এক্সট্রিম’ সিনেমার শুটিং সদ্য শেষ করেছি, ২০১৮ এর শেষের দিকে। সিনেমাটি করতে গিয়ে আমি পায়ে চোট পেয়েছিলাম, আমাকে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে হয়েছে। আমাকে যখন ‘মুজিব’-এর জন্য ফোন করা হয় এবং কলকাতায় ডাকা হয়। বিশ্বাসই হচ্ছিল না যে এই চরিত্রটির জন্য আমাকে চূড়ান্ত করা হয়েছে। আমি পরের ফ্লাইটেই চলে গেলাম। সেখানে আমি যখন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে শ্যাম বেনেগাল স্যারের সামনে গেলাম তখন তিনি আমাকে দেখে বলেন, ‘আওয়ার লিম্পিং মুজিব। তা এভাবে লিম্পিং করলে কাজ কীভাবে করবা।’ তখন আমি বললাম, স্যার, এটা তো ইনজুরি। ঠিক হয়ে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই সিনেমার অডিশন বাংলাদেশ ও ভারত মিলিয়ে পাঁচ ধাপে হয়েছে। প্রথম ধাপের অডিশন যখন ঢাকায় হয় তখন দেখি যে, বাংলাদেশের প্রায় সব শিল্পী-ই বিভিন্ন চরিত্রের জন্য অডিশন দিয়ে ফেলেছে। কিন্তু তখনও তারা ‘মুজিব’কে পাননি। পুরো টিম ভারত ফিরে যায়। ভাগ্যক্রমে ঠিক সেসময়েই আমার ‘আহারে’ সিনেমাটা মুম্বাই ফিল্ম সিটিতে চলছিল। সে ছবিটা দেখেন ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’-এর চিত্রনাট্যকার শ্যামা জাইদি। সেখানে আমাকে দেখে তারা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং আমাকে অডিশনে ডাকে।’
‘যার পরিবারের সঙ্গে ঘটনাটা ঘটেছে সেই বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা যখন ২ ঘণ্টা ৫৮ মিনিটের এ সিনেমাটা যখন ফিল্ম আর্কাইভে দেখেন একদম নিস্তব্দ হয়ে ছিলেন, আমরা দেখতে পারছিলাম উনার নিজের মধ্যে ফিরতে কিছুটা সময় লেগেছে। উনি তখন শুধু আমাকে বলেছেন, ‘তুমি এটা কীভাবে করেছো, কীভাবে করেছো এটা’। জাস্ট এটুকুই। এমনটা যদি আমার সঙ্গে হতো আমি মেন্টালি ইমব্যালেন্স হয়ে মেন্টাল হসপিটালে থাকতাম। এটা নিতে পারতাম না, শতভাগ নিশ্চিত আমি মানসিক হাসপাতালে থাকতাম।’-যোগ করেন আরিফিন শুভ।
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের সেই ঐতিহাসিক ভাষণের দৃশ্যধারণ এবং সেই মুহূর্তে আপনার জন্য বিষয়টা কেমন ছিল! ট্রেলারে আপনার ভাষণ দেওয়া নিয়ে অনেকে সমালোচনাও করেছেন, এমন প্রশ্নে অভিনেতা বলেন, ‘দেখুন, আমি শেখ মুজিবুর রহমান নই। এটা খুব আবেগী একটা বিষয়। এই ছবিটা সিন সাউন্ডে শুটিং করা হয়েছে। শুটিংয়ে যে সাউন্ড নেওয়া হয় সেটা নিয়েই করা হয়েছে। ছবিটির জন্য কোনো ডাবিং করা হয়নি। বঙ্গবন্ধুর রূপ, কণ্ঠ, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ বা যদি ওই ভাষণের কথাই বলি-সেটা আমাদের চোখে আটকে আছে। কেউ যদি সিনেমাটা না দেখে তার আগ পর্যন্ত তাকে কনভিন্স করাটা খুব কঠিন। যখন তিনি টুঙ্গিপাড়ায় তখন খোকা, তারপর মুজিব, তারপর মুজিব ভাই এবং তারও অনেক পরে গিয়ে তিনি বঙ্গবন্ধু খেতাব পান। খোকা থেকে মুজিব হয়ে উঠার মুহূর্তে আমার এন্ট্রি। বয়স অনুযায়ী ভয়েজও পরিবর্তন করতে হয়েছে। বায়োপিক মানে হচ্ছে একটা বিখ্যাত মানুষের গল্পকে একটা সাদৃশ্যতার মাধ্যমে দেখানো বা বলে যাওয়া। ট্রান্সফরমেশন করাটা আমার জন্য সহজ ছিল না। এই চরিত্রটাতে ঢুকার জন্য আমাকে যা যা করতে হয়েছে সেটার মধ্য দিয়ে আমি আর যেতে চাই না। সেখান বের হওয়াটা এতটাও সহজ ছিল না।’
‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন শ্যাম বেনেগাল। এর চিত্রনাট্য রচনা করেছেন শ্যামা জাইদি ও অতুল তিওয়ারি। ৮৩ কোটি টাকা বাজেটে সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদ্যোগে। সিনেমাটির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের ‘বিএফডিসি’ (বাংলাদেশ) ও ভারতের ‘এনএফডিসি’। এটি বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজি তিনটি ভাষায় করা হয়েছে।
সিনেমাটিতে রেণু (শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব) চরিত্রে অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা, শেখ হাসিনা চরিত্রে নুসরাত ফারিয়া, শেখ রেহানা চরিত্রে সাবিলা নূর, মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী চরিত্রে রাইসুল ইসলাম আসাদ, তাজউদ্দীন আহমদ চরিত্রে রিয়াজ, এ কে ফজলুল হক চরিত্রে শহীদুল আলম সাচ্চুসহ অনেকেই অভিনয় করেছেন।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন খায়রুল আলম সবুজ (লুৎফর রহমান), দিলারা জামান (সাহেরা খাতুন), সায়েম সামাদ (সৈয়দ নজরুল ইসলাম), শহীদুল আলম সাচ্চু (এ কে ফজলুল হক), প্রার্থনা ফারদিন দীঘি (ছোট রেনু), গাজী রাকায়েত (আবদুল হামিদ), তৌকীর আহমেদ (সোহরাওয়ার্দী), সিয়াম আহমেদ (শওকত মিয়া), মিশা সওদাগর (জেনারেল আইয়ুব খান), এলিনা (বেগম খালেদা জিয়া) ও জায়েদ খান (টিক্কা খান)।
কিউএনবি/আয়শা/১৬ অক্টোবর ২০২৩,/বিকাল ৪:৪০