বাদল আহাম্মদ খান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি : কখনো পড়শী তো কখনো স্বজন। এগিয়ে এসেছিলেন একজন জনপ্রতিনিধি। শিক্ষকরাও বিনা বেতনে প্রাইভেট পড়িয়ে সহায়তা করেছেন। সহযোগিতা করেছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এবার এগিয়ে এসেছেন একজন সরকারি কর্মকর্তা, তিনি জেলা প্রশাসক। আনিকা আক্তার এখন উদ্যমী। নতুন এ সহযোগিতা তাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। এখন এগিয়ে যেতে চান লড়াই করে। বললেন, ‘সামনের পথটা আরো অনেক বেশি সংগ্রামের। যে করেই হোক এটাতে জয়ী হবে। প্রয়োজনে টিউশনী করবো। তবুও পড়াশুনা চালিয়ে যাবো।’
আনিকা এবার এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে। সুযোগ পেয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের পড়ার। তবে দু’মুঠোর ভাতের অভাবের সংসারে এ সুযোগ যেন নিছক ‘স্বপ্নই’। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলমের দেওয়া ২০ হাজার টাকার আর্থিক সহযোগিতা সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে যাচ্ছে। স্থানীয় সংবাদকর্মীর মাধ্যমে জানতে পেরে রবিবার দুপুরে আনিকার হাতে নগদ টাকা তুলে দেন জেলা প্রশাসক। আনিকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার ভোলাচং এর কাজীমাবাদ শালকান্দি গ্রামের প্রয়াত মো. ফারুকুল ইসলামের একমাত্র মেয়ে। বাবাকে হারানোর পর মায়ের ত্যাগ আর লড়াইয়ের জীবনের সংগ্রামে একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছেন আনিকা। বাবার রেখে যাওয়া এক শতক জায়গায় জরাজীর্ণ ও ভাঙাচোরা একটি টিনের ঘরে মা আয়েশা খাতুনকে নিয়ে তার বসবাস।
আনিকা আক্তার যখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ত তখন না ফেরার দেশে চলে যান তার বাবা মো. ফারুকুল ইসলাম। এরপর দারিদ্রের সংসারে আনিকাকে নিয়ে একাই পাঁচটি বছর পাড়ি দেন মা আয়েশা খাতুন। বই কেনা, বিদ্যালয়ের বেতন, পরীক্ষার ফি ও ফরম পূরণের টাকা দেওয়ার মতো টাকা ছিল না। কষ্টের সংসারে দারিদ্রতা কাছ থেকে দেখে বড় হয়েছে আনিকা। ২০২৩ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার ভোলাচং উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অংশ নিয়ে বিজ্ঞান বিভাগে সকল বিষয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে আনিকা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়ে পড়াশোনার খরচ চালানো নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান।
আনিকা বলে, ‘বাবার আদর স্নেহ পেলেও সে কথা মনে নেই। মা আমার সব। এক চাচী পরীক্ষার ফি জোগাড় করে দিতেন। বই কেনাসহ অন্যান্য টাকা মামা দিতেন। বাবার আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না বলে সৌদিপ্রবাসী মামা আমজাদ হোসেনের বাড়িতে থেকে তৃতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। নবীনগর পৌরসভার মেয়র শিব সংকর দাস বিদ্যালয়ের বেতন ও এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে ফি মওকুফ করিয়েছেন। শিক্ষকরা বিনা টাকা পড়িয়েছেন। আমি অসংখ্য দিন না খেয়ে কাটিয়েছি। না খেয়ে স্কুলে গিয়েছি। কারণ ঘরে ভাত ছিলো না। জেলা প্রশাসকের কাছে কৃতজ্ঞ আমাকে নতুন করে পড়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। এখন কলেজ হোস্টেলে সিট পেয়ে গেলে টিউশনী শুরু করবো।’
জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থী যেহেতু ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে, তাই সেখানে পড়াশোনার খরচ তেমন হবে না। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই কৃতি শিক্ষার্থীকে ২০ হাজার টাকার সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।’আনিকার মা আয়েশা খাতুন বলেন, ‘আমার স্বামী বেঁচে নেই। আমাদের আয়ের কোনো উৎস্য নেই। এইচএসসিতে পড়ার খরচ চালানো সম্ভব ছিলো না। জেলা প্রশাসক এগিয়ে আসায় ওনার প্রতি কৃতজ্ঞতা। আমি চাই মেয়ে পড়াশোনা করে সামনে এগিয়ে যাক।’