এম,এ, রহিম চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছায় সোহেল আক্তার নামে এক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন মা। প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক মা অভিযোগে অত্যাচার ও চার হাত-পা ভেঙ্গে দেয়ার হুমকি থেকে রক্ষা পেতে আকুতি জানিয়েছেন। বুধবার (১৬ আগস্ট) ওই শিক্ষক মা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে সাক্ষাৎ করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন।জানা যায়, মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) মা তার অবাধ্য ছেলের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ও প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দপ্তরে এই অভিযোগ পত্র দাখিল করেন। অভিযুক্ত সোহেল আক্তার উপজেলার স্বরুপদাহ গ্রামের মৃত আব্দুল গণি মাস্টারের ছেলে ও কদমতলা সরকারিপ্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করে তার মরহুম পিতার পোষ্য কোটায় সহকারী শিক্ষক হিসেবে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি ওই স্কুলে যোগদান করেন।
অভিযোগকারী মা শাহানা বেগম উপজেলার স্বরুপদাহ পশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। তার বড় ছেলে এবং বড় ছেলের স্ত্রী উপজেলার অন্য দুইটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। স্বামী পশ্চিম স্বরুপদাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। প্রায় তিন বছর আগেতিনি নানা জটিল রোগে ভূগে মারা যান। তারা সবাই উপজেলার স্বরুপদাহ পশ্চিম পাড়ার বাসিন্দা।অভিযোগ কারী মা বলেন, আমি আমার স্বামীর মৃত্যুর পর দুই পূত্র ও পুত্রবধূ (বড় ছেলের স্ত্রী) নিয়ে একই বাসায় বসবাস করে আসছি। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে আমার বড় ছেলে ও আমি সংসার চালায়। আমার ছোট ছেলে সোহেল আক্তার উপজেলার কদমতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। সে আমাদের সংসারে থাকলেও খরচ বাবদ কোন টাকা দেয় না। বরংপ্রতিনিয়ত আমাকে সে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে। মাঝে মধ্যে মারধর করতে উদ্যত হয়। আমাকে বাসা থেকে বের করে দেয়ার চেষ্টাকরে। সে আমাকে মারার জন্য নিজের ঘরের মধ্যে জিআই পাইপ এনে রেখেছে।
প্রতিনিয়ত সে এরকম ঘটনা ঘটাচ্ছে। সে আমাকে মেরে চার হাত-পা ভেঙ্গে দেয়ার হুমকি দিয়ে আসছে। মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) দুপুরে সে নিজের ঘর থেকে জিআই পাইপ নিয়ে কোনো কারণ ছাড়াই আমাকে মারতে উদ্যত হয়। আমি কোনোমতে রক্ষা পেলেও পাইপের আঘাত ডাইনিং টেবিলের ওপর পড়ে। এ সময় সে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। আমি তাকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার (ডিপিও) কাছে অভিযোগ দেয়ার ভয়দেখায়। এতে সে তাদেরকেও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। বলে আমারকারও গোনার সময় নেই। আমি তার অত্যাচারে ব্যাপক ভাবে জীবনের ঝুঁকিতে আছি। দয়া করে আপনারাআমাকে বাঁচান।
এ বিষয়ে শিক্ষক মা শাহানা বেগম বলেন, ছোট ছেলের অত্যাচারে আমি অতিষ্ট। সে আমাকে বড় ছেলে ও পুত্রবধূর সাথে কথা বলতে দেবে না। তাদের সাথে কথা বললেই অকথ্য ভাষায় আমাকে ও পুত্রবধূকে গালিগালাজ করে। জিআই পাইপ দিয়ে মারতে আসে। হুমকি দেয় চার হাত পা ভেঙে দেবে। নানাভাবে তার নির্দেশ মানতে বাধ্য করে। ৬/৭ মাস চাকরি পেলেও সে সংসারে এক টাকাও দেয় নি। আমাদের খরচে খায়। গতকাল কোনো কারন ছাড়াই জিআই পাইপ দিয়ে আমাকে মারতে আসে। আমি সরে গেলে পাইপের আঘাত ডাইনিং টেবিলে লাগে। বাসার ফ্রিজ ও গেইটেও আঘাত করেছে। আপনারা সরেজমিনে আসলে দেখতে পাবেন। তিনি বলেন, ওর বাবা দীর্ঘদিন অসুস্থ থেকে ২ বছর ৮ মাস আগে মারা গেছেন। আমি দেশ ও ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালে তার চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছি। স্বামীর মৃত্যুর শোকে আমি অসুস্থ হয়েপড়েছি। ছেলের শারিরিক ও মানসিকসহ নানা অত্যাচারে আমি আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছি। নিজের জীবনের নিরাপত্তার অভাব বোধ করছি।তবে মার সব অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে সহ-শিক্ষক সোহেল আক্তার বলেন, আমার ঘরে জিআই পাইপ নিয়ে রাখা আছে এটা সত্য। মা কি সন্তানের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেন প্রশ্ন করলে সোহেল বলেন, আমি ছোট বেলা থেকে শিক্ষা, অর্থসহ সব বিষয়ে বঞ্চিত। এসব কথা বলার কারণেই মা এমন অভিযোগ করেছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও কয়ারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূর ই আলম মুক্তি বলেন, সে খুবই উগ্র মেজাজের। আগেও বিভিন্ন সময়ে পরিবারে এ ধরনের ঝামেলা করেছে। কয়েকবার তার মায়ের অভিযোগে আমি দুই ভাইয়ের সাথে কথা বলে মিটিয়ে দিয়েছি। তবে এবারের বিষয়টি তার মা আমাকে জানাইনি।উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সোহেলের মায়ের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তিনি সাক্ষাৎ করে আরো কিছু বিষয়ে অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে তিনজন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাকে (এটিও) নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদেরকে ৭ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। একজন সর্বোচ্চ শিক্ষিত এবং সরকারি চাকুরিজীবী শিক্ষক মাকে নির্যাতন করবে এটা চরম অন্যায়। দ্রুত এ বিষয়ে শুনানি করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। সেই সাথে কঠোর বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হবে।
কিউএনবি/অনিমা/১৮ অগাস্ট ২০২৩,/বিকাল ৪:১৩