ডেস্ক নিউজ : গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে জেব্রা পালে এক দম্পতি আবারও একটা শাবকের জন্ম দিয়েছে। শনিবার ( ২৯ জুলাই) শাবকটির জন্ম হলেও রবিবার (৩০ জুলাই) রাতে কর্তৃপক্ষের নজরে আসে বিষয়টি। তবে সদ্য জন্ম নেওয়া শাবকটির লিঙ্গ নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে পার্ক কর্তৃপক্ষ।
শাবক জন্মের পরই মা জেব্রা ছোট্ট শাবককে নিয়ে নিরাপত্তার প্রয়োজনে পার্কের গভীর জঙ্গলের ঝোপঝাড়ের ভেতরে শাবক নিয়ে লুকিয়ে ছিল। পরে সুযোগ বুঝে মা জেব্রা খাবার খেতে আসলে শাবক জন্মের বিষয়টি নজরে আসে।
সাফারি পার্কের আফ্রিকান সাফারি জোনে জেব্রা পালের সঙ্গে মা জেব্রা শাবকটি নিয়ে দলবদ্ধ হয়ে আছে। অন্য জেব্রা সদস্যরা শাবকটির নিরাপত্তায় নজর রাখছে। এ শাবক জন্মে পর পার্কে জেব্রাপালে সদস্য দাঁড়ালো ২৭ টিতে। সুযোগ বুঝে মায়ের সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছে শাবকটি। কখনও কখনও পালের সঙ্গে খোলা স্থানে বের হয়ে আসে। ফের আবার গভীর বনে চলে যায় পালের সঙ্গে।
পার্ক কতৃপক্ষ জানায়, ২০১৩ সালের পর থেকে কয়েক দফায় দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানসবার্গ থেকে পশুপাখি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ফ্যালকন ট্রেডার্সের মাধ্যমে জেব্রাগুলো আনা হয় পার্কে। এখানে অফ্রিকান সাফারি বেষ্টনীতে অবাধে বিচরণ করছে জেব্রাগুলো। এ বেষ্টনীতে আরও বেশ কিছু আফ্রিকান প্রাণী বসবাস করে। এ বেষ্টনীতে গ্যাজেল,কমনইলান্ড,মায়া হরিণ,জিরাফ, ব্লু ওয়াইল্ডবিস্টসহ বহু প্রাণীর অবাধ বিচরণ রয়েছে।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বন্যপ্রাণী পরিদর্শক নিগার সুলতানা জানান, জেব্রা হলো ইকুইডি পরিবারের আফ্রিকান ক্ষুরযুক্ত চতুষ্পদ স্তন্যপায়ী প্রাণী। যারা তাদের স্বতন্ত্র সাদা-কালো ডোরার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। পার্কের একই বেষ্টনীতে জেব্রার সঙ্গে অরিক্স,ওয়াইলবিস্ট,জিরাফ,গ্যাজেল কমনইলান্ড বসবাস করে। গভীর অরণ্যে অবাধে বিচরণ করে এসব প্রাণী।
তিনি জানান, জেব্রা শাবক সাত থেকে আট মাস মায়ের দুধ পান করে । জেব্রা ১২ থেকে ১৩ মাস গর্ভকালীন সময় পার করে। প্রকৃতিতে ২০ বছর বাঁচলেও আবদ্ধ জোনে (ক্যাপটিবে) ৪০ বছর পযর্ন্ত বেঁচে থাকে জেব্রা। সাধারণত একটি বাচ্চাই প্রসব করে জেব্রা। তবে দুটি বাচ্চা জন্মের রের্কডও আছে। তিনি বলেন, নারী জেব্রা ২ থেকে ৩ বছরে প্রাপ্তবয়স্ক হয়। অপর দিকে পুরুষ জেব্রা ৫ থেকে ৬ বছরে প্রাপ্ত বয়স্ক হয়। এরা লম্বায় আট ফিট ও উচ্চতায় পাঁচ ফিট হতে পারে। ওজন হয় ৩০০ কেজি। ঘোড়া পোষ মানলেও জ্রেবা কখনও পোষ মানে না। জেব্রা দল বেধে চলে। এ দলে একজন নেতা থাকে, যাকে সবাই অনুসরণ করে থাকে। কোনো শাবকের জন্ম হলে পালের অন্য সদস্যরা সে শাবকের নিরাপত্তায় বিশেষ নজর রাখে।
ওয়াইল্ড লাইফ সুপারভাইজার আনিসুর রহমান জানান, ঘাস মূলত এদের প্রধান খাদ্য। মা জেব্রার পুষ্টি গুণের কথা চিন্তা করে খাবারে বেশ পরিবর্তন আনা হয়েছে। ঘাসের পাশাপাশি তাদের ছোলা, গাজর, ভুট্টা ও ভুসি দেওয়া হচ্ছে নিয়মিত। তিনি বলেন, এখন পার্কে ১৩ টি নারী ও ১৩ টি পুরুষ জেব্রা রয়েছে। তবে সদ্য জন্ম নেওয়া শাবকের লিঙ্গ নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি এখনও। এ শাবক নিয়ে মোট ২৭ টি জেব্রা এখন পার্কের জেব্রা পালে।
সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, শনিবারের কোনো এক সময় শাবকটির জন্ম হয়ে থাকতে পারে। অন্তঃসত্ত্বা মা জ্রেব্রা আমাদের নজরদারিতে ছিল। পরে রবিবার আমাদের নজরে আসে। উপযুক্ত পরিবেশ পেয়ে বেশ কিছু প্রাণী বাচ্চার জন্ম দিচ্ছে। এক বছরের কম সময়ে আমাদের পার্কে ৯ টি জেব্রা শাবকের জন্ম হয়েছে।
ঢাকা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, বেশ কিছু প্রাণীর শাবক জন্মে আমাদের কাজের পরিধি বাড়ছে। পার্ক উন্নয়নে আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আশা করি সাফারি পার্ক দর্শনার্থীদের জন্য এক ভিন্ন বিনোদন কেন্দ্র হবে দেশের ভেতরেই। যা সব বয়সী পর্যটকদের আনন্দ বাড়াবে। সম্প্রতি আমাদের পার্কে অল্প সময়ে বেশ কিছু জেব্রা শাবকের জন্ম হয়েছে।
কিউএনবি/অনিমা/০১ অগাস্ট ২০২৩,/সকাল ১০:৫৫