রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০২:৪৮ অপরাহ্ন

উলিপুরে খাদ্য গুদামে রাতের আধারে দায়সারা তদন্ত

শিমুল দেব, উলিপুর, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি।
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই, ২০২৩
  • ২০০ Time View

শিমুল দেব উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামের উলিপুর সরকারি খাদ্য গুদামে ধান সংগ্রহে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে নড়ে চড়ে বসে খাদ্য বিভাগ। এরপর জেলা খাদ্য বিভাগ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ ঘটনায় বুধবার (১৯ জুলাই) রাতের আধারে অনিয়মের সাথে জড়িত সিন্ডিকেট চক্রের সদস্যদের সাথে নিয়ে দায়সারা ভাবে তদন্ত করার অভিযোগ উঠেছে খোদ তদন্তকারী কর্মকর্তা বিরুদ্ধে।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ শ্রমিকরা জানান, উলিপুর খাদ্য গুদামে ধান সংগ্রহে অনিয়মের অভিযোগ উঠায় কুড়িগ্রাম খাদ্য বিভাগ দুই সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত টিম গঠন করেন। তারা হলেন, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক নাজমুল হক এবং সদর উপজেলার খাদ্য পরিদর্শক (কারিগরি) হাবিবুর রহমান। তারা বুধবার সন্ধ্যায় সরেজমিনে তদন্ত করতে আসেন উলিপুর সরকারি খাদ্য গুদামে।

রাতের আঁধারে তদন্তে মিল চাতাল মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকায় সুষ্ঠু তদন্ত নিয়েও জনমনে দেখা দেয় নানা প্রশ্ন। তদন্ত চলাকালীন সময় খাদ্য গুদামের প্রধান ফটক বন্ধ করে রাখা হয়। তদন্ত কালীন সময় সিন্ডিকেট সদস্যরা সেখানে উপস্থিত থাকলেও অন্য কাউকে উপস্থিত থাকতে দেয়া হয়নি। প্রায় তিন ঘন্টা পর রাত ৯টার পরে তদন্ত টিম, মিল চাতাল মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দসহ সিন্ডিকেট সদস্যরা মোটরসাইকেল যোগে গুদাম থেকে বেরিয়ে আসেন।

সূত্রটি আরও নিশ্চিত করে বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা ২০২১ সালে মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত উলিপুরে খাদ্য নিয়ন্ত্রক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার আমলেও উলিপুরে মিল মালিক সমিতির সিন্ডিকেট সদস্যরা অসুধাপায় অবলম্বন করে সরকারের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল। তদন্তের সময় উপস্থিত কয়েকজন কৃষক বলেন, এটা লোক দেখানো তদন্ত ছাড়া আর কিছুই না। শুধু সরকারের টাকা গচ্ছা যাচ্ছে। অনিয়মের সাথে জড়িত থাকা সিন্ডিকেট আর খাদ্য গুদাম কর্মকর্তাকে বাঁচানোর জন্য সব চেষ্টা করছেন তদন্ত কারী টিম।

নিরপেক্ষ তদন্ত আর জড়িত দের শাস্তি আওতায় না আনলে সরকার যে কৃষক বাঁচাতে উদ্যোগ নিয়েছে তা সফল হবেনা। উল্লেখ্য, উলিপুর সরকারিখাদ্য গুদামে সিন্ডিকেট চক্রের সদস্যরা নানা কারসাজির মাধ্যমে ভূমিহীন, দিনমজুর ও অস্বচ্ছল ব্যক্তিদের লটারিতে বিজয়ী দেখিয়ে তাদের নামে গুদামে ধান দিচ্ছে ওই চক্রটি। তালিকার সূত্র ধরে উপজেলার ধামশ্রেণী, গুনাইগাছ ও থেতরাই ইউনিয়নসহ পৌরসভা এলাকায় অনুসন্ধান করলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসে।

লটারিতে উপজেলা মিলচাতাল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহফুজার রহমান বুলেটের পরিবারের একাধিক সদস্যর নাম রয়েছে। এছাড়াও তালিকায় রয়েছে প্রভাশালী সিন্ডিকেট চক্রের সদস্যদের স্বজন, প্রতিবেশি, বাড়ির কাজের লোকসহ অনেকেই। এছাড়াও প্রকৃত কৃষকের নিকট হতে ৫শ থেকে দু’হাজার টাকার বিনিময়ে আইডি কার্ড সংগ্রহ করে ব্যবসায়ী সিন্ডিকে চক্রটি খাদ্য গুদামে ধান দেন। অভিযোগে আরও জানা যায়, গুাদামে কোন কৃষক ধান দেয়নি। সব বড় বড় ব্যবসায়ীরা ধান দিয়েছেন। খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার সহযোগিতায় নিয়ম না মেনে ১৬-১৭ ময়েশ্চারযুক্ত ধান দিয়েছে সিন্ডিকেট সদস্যরা।

এসব অনিয়ম নিয়ে গত সপ্তাহে দেশের বিভিন্নগণমাধ্যমে উলিপুর খাদ্য গুদামে কৃষকের পরিবর্তে সিন্ডিকেট সদস্যরা ধান দিচ্ছেন শিরোনামে সংবাদ প্রচার হয়। গত ১৮ মে থেকে চলতি মৌসুমে আমন-বোরো খাদ্যশস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়। সরকারের নির্ধারিত ৩০টাকা কেজি দরে লটারিতে বিজয়ী প্রতি কৃষক তিন টন করে ধান দিতে পারবেন। কিন্তু কারসাজির মাধ্যমে ভূমিহীন ও অকৃষকদের তালিকাতে বিজয়ী দেখিয়ে গুদামে ধান দেন মিল চাতাল মালিক সমিতির একটি সিন্ডিকেট চক্র। কৃষকের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে ধান ক্রয় ডিজিটালাইজড করা হলেও সেখানে রয়েছে শুভঙ্করের ফাঁকি। লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত কৃষককের তালিকাতে রয়েছে সিন্ডিকেট চক্রের স্বজনসহ জমি-জমা না থাকা সাধারণ মানুষের নাম।

উপজেলা মিল চাতাল মালিক সমিতির সভাপতি রেজাউল করিম রাজা তদন্তের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, রাতে কিছু কৃষক উপস্থিত ছিল। তাদের সাথে তদন্তকারী কর্মকর্তা কথা বলেছেন। এরবেশি আর কিছু বলতে তিনি রাজি হননি। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নাজমুল হক বলেন, বিধি অনুযায়ী ধান সংগ্রহ করা, প্রকৃত কৃষকধান দিয়েছে এবং বিল উত্তোলন করেছে কিনা সেই বিষয়ে আমরা কাজ করছি।

রাতে তদন্তের বিষয়ে তিনি স্বীকার করে বলেন,আমাদের নিজের অফিসিয়াল কাজ শেষ করে পৌছাতে দেরি হয়েছে। তবে তিনি দাবী করেন, এলএসডি গুডাউন ২৪ ঘন্টাই খোলা থাকে। আর মিল মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ তদন্ত উপস্থিত থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা কৃষকের সাথে কথা বলেছি। সেখানে কে কোন কমিটিতে আছে সেটা জানা নেই। এখনও তদন্ত শেষ হয়নি। আরও কাজ বাকি রয়েছে। কুড়িগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মাহমুদুল হাছান বলেন, তদন্ত নয় প্রাথমিকভাবে খোঁজ নিতে বলা হয়েছে। বিধি অনুযায়ী ধান সংগ্রহ করা হচ্ছে কিনা? বিস্তারিত পড়ে জানানো হবে।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/২০ জুলাই ২০২৩,/রাত ১০:৫২

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit