বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:১৫ অপরাহ্ন

শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের দৃষ্টান্ত

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ২৩ জুন, ২০২৩
  • ৮৮ Time View

ডেস্ক নিউজ : দেশের রাজনীতিতে ক্ষমতায় গিয়ে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখার চেষ্টা সব সময়ই ছিল, সব দলই করেছে।রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি সেনা শাসকরা ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার নজির আছে। স্বৈরশাসককে হটাতে গিয়ে রাজপথে রক্ত ঝরেছে। কিংবা পাল্টা ক্যু হয়েছে। শুধু একবারই শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছে, আর সেটা করেছিল আওয়ামী লীগ ২০০১ সালে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশে সেনাশাসন আসে। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সেনা শাসকরাই ক্ষমতা দখল করে রাখে। ৯০ সালে এরশাদের পতনের মধ্য দিয়ে দেশে সেনাশাসনের অবসান ঘটে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক ধারা ফিরে আসে। ১৯৯১ সালে হওয়া জাতীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় আসে। এরপর আওয়ামী লীগসহ বিরোধী দলগুলো সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সংযোজনের দাবি তোলে।

উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও নির্বাচনের সামগ্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবমুক্ত করার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তোলা হয়। কিন্তু বিএনপি প্রথম থেকেই এ দাবি অসাংবিধানিক বলে অগ্রাহ্য করতে থাকে। ১৯৯৪ সালের ২৭ জুন সংসদ ভবনে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ ও জামায়াত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ওই রূপরেখাকে অসাংবিধানিক ও অবাস্তব বলে ঘোষণা করেন।

তিনি বলেছিলেন, ‘একমাত্র পাগল ও শিশু ছাড়া কোনো মানুষের পক্ষে নিরপেক্ষ হওয়া সম্ভব নয়।’ বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করায় আওয়ামী লীগ আন্দোলনে নামে। একপর্যায়ে সংসদ বর্জন করে। ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি একতরফা নির্বাচন করে আবার ক্ষমতায় বসে। কিন্তু আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য বিরোধী দলের আন্দোলনের মুখে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান যুক্ত করা হয় এবং বিএনপি ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়। পরে সব দলের অংশগ্রহণে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পায় আওয়ামী লীগ। কিন্তু ক্ষমতা ধরে রাখতে কোনো ছলচাতুরী করেনি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। শান্তিপূর্ণভাবে ও বিনা রক্তপাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে দেশের ইতিহাসে ব্যতিক্রম নজির সৃষ্টি করেন তিনি।

২০০১ সালে মেয়াদ শেষ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেয় শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। ওই বছর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে বিএনপি-জামায়াত জোট। কারচুপির অভিযোগ করলেও ভোটের ফল মেনে নেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। ওই সময় বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালানো হয়। আক্রান্ত হয় সংখ্যালঘুরা। ওই অবস্থায় সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসে রাজনীতিতে আবারও সক্রিয় হয় আওয়ামী লীগ। অত্যাচার-নির্যাতনের মুখে পড়ে তৎকালীন বিরোধী দলে থাকা আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকর্মী মারা যান। ইতিহাসের সবচেয়ে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট।

বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা হয়। ওই হামলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও আওয়ামী লীগের মহিলা সম্পাদক আইভী রহমানসহ ২৪ জন নেতাকর্মী মারা যান। আহত হন অসংখ্য নেতাকর্মী। বিএনপি-জামায়াতসহ চারদলীয় জোট সরকার আবার ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার পুরনো কৌশলে হাঁটে। ভুয়া ভোটার তালিকা করা হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নির্বাচন কমিশনে নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিদের বসানোর পাঁয়তারা করা হয়। ২০০৬ সালে আবারও সুষ্ঠু ভোটের নিশ্চয়তা চেয়ে আন্দোলনের পথ বেছে নিতে বাধ্য হয় তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ ও তার মিত্র দলগুলো। ক্ষমতা ধরে রাখতে আরও কঠোর হয়ে ওঠে বিএনপি-জামায়াত জোট। আওয়ামী লীগ এক দফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়ে লগি-বইঠা নিয়ে রাজপথ দখলে নেয়। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনের পক্ষপাতমূলক আচরণ এবং উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে দেশকে বাঁচানোর কথা বলে সেনাসমর্থিত সরকার ক্ষমতা দখল করে।

ওই সরকার দুই বছর ক্ষমতায় থাকে। ২০০৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় পেয়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। তবে ক্ষমতায় এসে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করে বিতর্কের মুখে পড়ে। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করার আইন পাস করা। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় দলীয় সরকারের অধীনে। দলীয় সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের নির্বাচন ঠেকানোর ঘোষণা দিয়ে মাঠে নামে বিএনপি-জামায়াত।

তখন ব্যাপক সহিংসতা হয়। বিভিন্ন স্থানে বাসে পেট্রোলবোমা মেরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা শ-খানেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ২০১৮ সালে সরকারের সঙ্গে সংলাপের মধ্য দিয়ে নির্বাচনে আসে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো। কিন্তু ভোট ডাকাতি ও কারচুপির অভিযোগ তুলে ফল প্রত্যাখ্যান করে তারা। যদিও পরে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে নির্বাচন করা বিএনপি ও গণফোরামের নির্বাচিত সদস্যরা সংসদে যোগ দেন।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/২৩ জুন ২০২৩,/দুপুর ১:৫৩

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit