নাহিদ শারমীন এর জীবনালেখ্যঃ আমার বাবা
——————————————————–
হেমন্তের শীতের সকাল, কূয়াশায় ঢাকা সব পথ ঘাট। ঘর থেকে বের হলে দূরে কিছুই দেখা যায় না। আজ থেকে পন্চাশ বছর আগে শীতের সকাল বেলায় মাঠা-মাখন বিক্রি হতো, একদম খাঁটি কোন ভেজাল নেই, সেই যে ঘোষ বাড়ীর মন্টু কাকু ছুটে চলেছে, তার কাঁধে মাঠা আর মাখন নিয়ে। আর বলছে – মাঠা মাখন। কতটা পথ সে হেঁটে এসেছে সেই গাঁয়ের থেকে শহড়ে।
আর সেই পাঁচ ছয় বছরের মেয়েটি দৌড়াচ্ছে বাবার পিছন পিছন। মেয়েটার পরনে ছিল গোলাপী রং এর জামা আর মাথায় ছিল ছোট্ট একটা ঝুটি করা। সেই মেয়েটির হাতে ছিল একটা ফুল কুড়ানোর ঝুড়ি। মেয়েটির নাম ছিল রুমা কিন্তু বাবা ওকে ডাকতো – রুমু আম্মু বলে।
বাবার কথা মনে করলে মনে পড়ে -সেই ছোটবেলার কথা। আমি আর বাবা সেই সকাল বেলা, যখন শিউলি ফুল কুড়াতে যেতাম। আগের রাতে বাবাকে মনে করিয়ে দিতাম, বাবা যখন হাঁটতে যাবে আমাকে নিতে যেন ভুলে না যায়। আমি আর আমার বাবা যাব ফুল কুড়াতে। বাবা সকালে হাঁটাতে যাবে পাড়ার চাচাদের সাথে আর আমি হাঁটবো তাদের সাথে। কি মজা !!
আমাদের পাড়াতে সেই জলিদের বাসাতে ; বিরাট বড় একটা শিউলি ফুলের গাছ ছিল। গাছের নীচে সারা এলাকা সাদা হয়ে থাকতো ফুলে। সারারাত ফুল গুলো ঝরে ঝরে মাটিতে পড়ে থাকতো। আমি ঝুড়ি ভরে ফুল কুড়াতাম। মাঝে মাঝে বাবাকে বলতাম, “আব্বু আমার ঝুড়ি ভর্তি হয়ে গেছে ফুলে, তুমি একটু ধরবে ? আমি পারছি না তুলতে।”
ঐ বয়সে এটাই ছিল আমার একমাত্র শখ। আর অন্যদিকে ওটা ছিল আমাদের বাবা- মেয়ের ভালবাসার বন্ধন। এখন তো আমি বলতে গেলে বুড়িই হয়ে গেছি। আর বাবা তো আরো বুড়ো হয়ে এখন দূর আকাশের তাঁরা কিন্তু বাবা তুমি কি জান ? আমি এখনও মাঝেমাঝে এই ফুল কুড়ানোর স্মৃতি – দিবা স্বপ্নে দেখি। হঠাৎ করে যখন অনেক সকালে ঘুম ভেংগে যায় মনে হয়, বাবার সাথে আমি ফুল কুড়াতে যাব। আমার এই ফ্লাশব্যাক কাওকে বোঝানো যাবে না কারন ওটা তুমি আমি ছাড়া কেউ জানে না। আমি এতকিছু ভুলে যাই এখন। কিন্তু এ স্মৃতি কখনও ভুলি না কেন ? আমি আছি তুমি নেই। ঐ দিনতো আর ফিরে আসবে না। কিছু স্মৃতি থাকা না স্মৃতি হয়ে চিরকাল।
ভালবাসি বাবা তোমাকে। তুমি সব সময় ছিলে আমার সাথে আমার পাশে। এখন শুধু প্রতি দিন দোয়াতে বলি- রাব্বী হামহুমা কামা রাব্বী ইয়ানী ছাগীরা।
লেখিকাঃ নাহিদ শারমীন (রুমা) আমেরিকা প্রবাসিনী। আমেরিকার জর্জিয়া স্টেট্সকে এক টুকরো বাংলাদেশ সৃষ্টির প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালান তিনি সব সময়। ব্যাংক অব আমেরিকা’র আইটি ডিভিশনে ব্যস্তময় কাজের ফাঁকে তাঁর মন ছুটে যায় বাংলাদেশে। নিয়মিত লেখালেখি করেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। সাহিত্য নির্ভর ফেসবুক পেজ ও গ্ৰুপের এডমিন তিনি। বাংলা লেখালেখি আর সাহিত্যচর্চার মাঝে তিনি জর্জিয়াকে বানিয়ে রেখেছেন ছোট একটি বাংলাদেশ।
কিউএনবি/বিপুল/১৪.০৬.২০২৩/ রাত ১২.৩৫