শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৪০ পূর্বাহ্ন

একসাথে বেশি খাবার খেলে শরীরে কী ঘটে?

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
  • ১০৯ Time View

লাইফ ষ্টাইল ডেস্ক : একসাথে বেশি পরিমাণ খাবার খেলে তা দেহে যেসব পরিবর্তন আনতে পারে তার মধ্যে একটি হলো আরো বেশি ক্ষুধা অনুভব করা। অবশ্য পাকস্থলীর আকার বাড়ে বলেই এমনটি হয় তা কিন্তু নয়।

অতিরিক্ত খাওয়া কি আমাদের পাকস্থলীর আকার বাড়িয়ে দেয়? মানে পরের দিন কি আপনার পাকস্থলীতে আরো বেশি খাবার রাখার মতো জায়গা তৈরি হয়?

এর উত্তর হচ্ছে, বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে, সম্প্রতি আপনি যে অনেক বেশি পরিমাণ খাবার খেয়েছেন তার জন্য ক্ষুধা অনুভব করেন না। আপনি শুধু ক্ষুধার জন্যই ক্ষুধা অনুভব করেন।

কিন্তু সবার আগে, ক্ষুধার অনুভূতিটা আসলে কি?

আসলে কোন কিছু খাওয়ার জন্য আপনি যে তাড়না অনুভব করেন, তা আপনার দেহের ভেতরে বেশ কিছু শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তনের কারণে হয়।

এটা সত্য যে আপনি যখন ক্ষুধার্ত থাকেন তখন আপনার পাকস্থলীর আকার পরিবর্তিত হয়। পাকস্থলী সংকুচিত হয় যখন খাবার হজম হয়ে অন্ত্রের দিকে যায়। পেটে গুড়গুড় শব্দ হয় যখন বাতাস আর খাবার একসাথে নিচের দিকে নামতে থাকে।

আমাদের যে ক্ষুধা লাগতে যাচ্ছে এই শব্দ হচ্ছে তার প্রথম সংকেত, কারণ এটা শোনা যায় এবং এটি শরীরেই ঘটে।

শব্দ তৈরির পর পাকস্থলী আবার প্রসারিত হতে থাকে নতুন খাবার গ্রহণের প্রস্তুতি হিসেবে- এগুলো হয় হরমোনের প্রভাবে।

তবে খাবার খেলে যে পাকস্থলী বড় হয় সেটি অবশ্য সত্য নয়। পাকস্থলী বেশ স্থিতিস্থাপক। তাই বেশি পরিমাণে খাবার খাওয়ার পরও এটি আবার এর আগের অবস্থায় ফিরে আসে(প্রায় ১-২ লিটারের মতো)। বাস্তবিক পক্ষে বেশিরভাগ মানুষের পাকস্থলী সক্ষমতার দিক থেকে প্রায় একই- উচ্চতা কিংবা ওজন কোন কিছুই তেমন প্রভাব ফেলে না।

আমরা যে বিষয়টি নিয়ে তেমন সচেতন থাকি না সেটি হচ্ছে ক্ষুধাজনিত হরমোনের নিঃসরণ: পাকস্থলী থেকে ঘ্রেলিন ও হাইপোথ্যালামাস থেকে নিঃসৃত এনপিওয়াই বা নিউরোপেপটাইড ওয়াই এবং এজিআরপি নামে হরমোন । পাকস্থলী খালি থাকলে ঘ্রেলিন নিঃসরিত হয় এবং এটি আমাদের মস্তিষ্কে এনপিওয়াই ও এজিআরপির উৎপাদন শুরু করাতে ভূমিকা রাখে। এই দুটি হরমোনই ক্ষুধার অনুভূতি তৈরির জন্য দায়ী, যা কিনা আমাদের মানসিক সন্তুষ্টির অনুভূতিকেও ছাপিয়ে যায়।

অন্যদিকে অনেকটা উল্টোভাবেই, স্থূলকায় দেহের অধিকারীদের তুলনায় চিকন দেহের অধিকারীদের মধ্যে ঘ্রেলিনের মাত্রা বেশি থাকে। আপনার মনে হতে পারে, যে হরমোনের কারণে ক্ষুধার অনুভূতি হয় সেটি, যে ব্যক্তি বেশি খায় তার মধ্যে বেশি থাকবে- কিন্তু এই বৈপরীত্বই প্রতিফলিত করে যে আমাদের পরিপাকতন্ত্র কতটা জটিল।

যখন ক্ষুধা অনুভূত হওয়ার জন্য মাত্র তিনটি হরমোন দরকার হয়, সেখানে আমাদের পরিতৃপ্ত হওয়ার জন্য প্রায় ডজনখানেক বা তারও বেশির দরকার হয়।

এদের মধ্যে জিআইপি এবং জিএলপি-ওয়ান, শর্করার বিপাক ক্রিয়া স্বাভাবিক রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ইনসুলিন তৈরিতে ভূমিকা রাখে। অন্য বেশ কিছু হরমোন আমাদের পাকস্থলীতে খাবারের চলাচল ধীর রাখতে কাজ করে যাতে আমাদের দেহ খাবার হজম করার পর্যাপ্ত সময় পায়।

যারা স্থূলকায় এবং যাদের দেহে ঘ্রেলিনের মাত্রা কম থাকে, হতে পারে যে তাদের দেহে উচ্চ মাত্রার শর্করা হজম করার জন্য যে উচ্চ মাত্রার ইনসুলিন দরকার হয় তা ঘ্রেলিনের উৎপাদনকে বাধাগ্রস্ত করে।

দুটি বস্তু ক্ষুধা কম অনুভূত হওয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট: সিকেকে এবং পিওয়াওয়াই। যেসব রোগীর দেহে পাকস্থলীর আকার ছোট করার জন্য গ্যাস্ট্রিক ব্যান্ড লাগানো থাকে, তাদের দেহে পিওয়াওয়াই অনেক বেশি থাকে। এর কারণে ক্ষুধা কমে যায়।

পাকস্থলীতে যে আলাদা হরমোন ব্যবস্থা রয়েছে সেটি পাকস্থলী খালি হলেই আপনার মস্তিষ্ককে জানান দেয়।

তারপরও আপনার অভ্যাস অনুযায়ী দিনের নির্দিষ্ট সময় এবং ক্ষুধা লাগার একটা শিক্ষাও এই হরমোন পেয়ে যায়। তাই আপনি দুপুরে যতই খান না কেন, এরপরও আপনি রাতের খাবারের সময় হলে ক্ষুধার্ত অনুভব করবেন।

সেন্টারডাটা এবং সাবেক মাস্ট্রিক্ট ইউনিভার্সিটির গবেষক ক্যারোলিয়েন ভ্যান ডেন আক্কার বলেন, “আপনি যদি বার বার রাতের খাবারের পর কোন একটি চকলেটের টুকরা বা চিপস হাতে নিয়ে গিয়ে সোফায় বসে টিভি দেখেন, তাহলে আমাদের দেহও সোফায় বসা, টিভি দেখা এবং সেসময় কিছু খাওয়ার সাথে অভ্যস্ত হয়ে যেতে পারে। আর এর ফলে আপনি যখন সোফায় বসবেন তখন আপনার কিছু খেতে ইচ্ছে করবে।”

“এটা তখনও হতে পারে যখন আপনি পরিতৃপ্ত: আপনার দেহে শক্তির মাত্রাও কানায় কানায় পূর্ণ।”

ভ্যান ডেন আক্কার এর মতে, অতিরিক্ত খাওয়া আসলে সব সময় খারাপ নয়। বরং অনিয়ন্ত্রিত খাবার খাওয়া বা বিঞ্জ ইটিং অর্থাৎ যেখান অল্প সময়ে অনেক বেশি পরিমাণ খাবার খাওয়া হয়, যা বেশিরভাগ সময় ঘৃণা, অপরাধবোধ বা লজ্জার উদ্রেক করে।

অতিরিক্ত খাবার খাওয়াটা একটা অভ্যাসের মতো, যা অনেকেই মনে করেন যে তারা চাইলে ছেড়ে দিতে পারেন, কিন্তু অভ্যাসগত খাবার খাওয়ার তীব্র আকাঙ্খার কারণে কোন একটি খাদ্যতালিকা অনুসরণ করাটা কঠিন হয়ে পড়তে পারে।

যখন আমরা কোন খাবারের ভাল উপাদানের সাথে বিশেষ করে উচ্চ মাত্রায় চিনি রয়েছে এমন খাবারের যোগ করতে শুরু করি, নির্দিষ্ট সময়ে, সেটির সুবাস, চিত্র এবং বৈশিষ্ট্য আমাদের স্মৃতিকে জাগিয়ে তোলে এবং আমরা সেটির জন্য তীব্র আকাঙ্খা অনুভব করি। এটা শুধু আমাদের মানসিকভাবে তাড়িত করে না বরং সেটির শারীরিকভাবেও উদ্দীপ্ত করে- যেমন জিভে জল চলে আসা।

আপনি হয়তো পাভলভের কুকুরের পরীক্ষার কথা জানেন- যেখানে কুকুরকে খাবার দেয়ার আগে আগে একটি ঘণ্টা বাজানো হয়। এক পর্যায়ে দেখা যায় যে, ঘণ্টার আওয়াজ শুনলেই কুকুরের মুখ থেকে লালা ঝড়তে শুরু করে। এক্ষেত্রে মানুষও কুকুরের চেয়ে খুব বেশি আলাদা নয়।

আরেকটি পরীক্ষায়, মানুষকে বৃত্ত আর বর্গের মতো সাধারণ চিত্র দেখানো হয়। তারা যখন বর্গক্ষেত্র দেখতো তখন তাদের এক টুকরা চকলেট দেয়া হতো এবং এ কারণে যখনই তারা বর্গক্ষেত্র দেখতো তখন তাদের মধ্যে চকলেট পাওয়ার তীব্র আকাঙ্খা হতো।

কুকুরের মতো মানুষকেও সাধারণ কিছু বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে খাবারের আশা করানো সম্ভব।

সূত্র: বাসস

কিউএনবি/অনিমা/২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩/রাত ৮:২৬

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit