মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৩:৫৪ পূর্বাহ্ন

হাতিরঝিলের ঠুনকো নিরাপত্তায় হতাশ দর্শনার্থীরা

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
  • ৮০ Time View

ডেস্ক নিউজ : যেখানে-সেখানে পড়ে আছে ময়লা। কর্মহীন ভবঘুরে লোকজনের কমতি নেই। বেঞ্চ বা ফুটপাত দখল করে শুয়ে আছে কেউ কেউ। দু-চারজন প্রকাশ্যে প্রাকৃতিক কাজ সারছে। নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার জন্য প্রতি শিফটে অন্তত ৪০ জন করে কর্মী থাকার কথা থাকলেও হাতে গোনা কয়েকজনকে চোখে পড়েছে। তাঁরাও কর্তব্য পালনে সচেষ্ট নন।

রাজধানীতে সময় কাটানোর মতো বিনোদনের স্থান  হাতিরঝিলে গত কয়েক দিন ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা  গেছে। আরো দেখা গেছে উঠতি বয়সের বখাটে ও মাদকসেবীদের উৎপাত। দর্শনার্থীদের নানাভাবে বিরক্ত ও উত্ত্যক্ত করছে তারা। জানা গেছে, প্রায়ই সেখানে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। 

রাজধানী ঢাকার কর্মব্যস্ত জীবনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার মতো সীমিত জায়গার মধ্যে হাতিরঝিল একটি।  অবসরে অনেকে সেখানে সপরিবারে ঘুরতে যায়। কিন্তু বিরূপ পরিবেশের কারণে দর্শনার্থীরা সেখান থেকে বিরসমুখে ফিরছে। এমন পরিস্থিতিতে হাতিরঝিলের নিরাপত্তা নিয়ে দর্শনার্থীদের সংশয় তৈরি হয়েছে। এ জন্য হাতিরঝিলের ঠুনকো নিরাপত্তাব্যবস্থাকে দায়ী করছে দর্শনার্থীরা।

হাতিরঝিলের পরিবেশ সম্পর্কে জানতে চাইলে অদূরে পড়ে থাকা একটি মৃত কুকুর দেখিয়ে মানিক বলেন, ‘সকাল থিকা এইটা পইড়া থাকতে দেখতাছি। এহনো সরানো হয় নাই। মারামারি তো দেখলেনই। এইবার বুইঝা লন, এইখানকারপরিবেশ কেমন।’এর আগে ভুক্তভোগী শহীদ (ছদ্মনাম) নামের এক দর্শনার্থী বলেন, ‘এখানে সঙ্গী নিয়ে এসে বসলে পথশিশু ও ভবঘুরে লোকজন সাহায্যের নামে বিব্রত করে। কিছু না দিয়ে পারা যায় না।’

তিনি বলেন, ‘এ ছাড়া এলাকাজুড়ে কয়েকজন ফুল বিক্রির নামে জোর করে ফুল দিয়ে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেয়।’খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাতিরঝিলের নিরাপত্তা, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচ্ছন্নতা কাজে তিন শিফটে মোট ২২৭ জন কর্মী নিয়োগ করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এর মধ্যে নিরাপত্তার জন্য ১৭১ জন ও পরিচ্ছন্নতায় ৫৬ জন রয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে রাউজকের নিয়োগ করা আল-আরাফাত সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি বেসরকারি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান হাতিরঝিল প্রকল্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে। আর পরিচ্ছন্নতার দায়িত্বে মেসার্স আলম অ্যান্ড কম্পানি নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হাতিরঝিল প্রকল্পে প্রতি শিফটের জন্য নিয়োগ করা ৪০ জন কর্মী দায়িত্ব পালন করছেন না। উপস্থিত হাতে গোনা কয়েকজন এখানে-সেখানে অলস সময় কাটাচ্ছেন। এর সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীরা। হকারের উৎপাতে ঘুরতে আসা লোকজন বিরক্ত। জোর করে ফুল ধরিয়ে দিয়ে অতিরিক্ত টাকা নিতে দেখা যায়।

রাতে প্রকল্পের বিভিন্ন স্থানে পর্যাপ্ত আলো দেখা যায়নি। এতে বিভিন্ন অপরাধ ঘটার মতো পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

হাতিরঝিলে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা রাজারবাগের বাসিন্দা আজমল হোসেন বলেন, নিরাপত্তাকর্মীদেরও তেমন দেখা যায় না। এ জন্য এখানে নানা রকম অপরাধ ও দুর্ঘটনা ঘটছে।

আল-আরাফাত সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেডের এক কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মাসে ১০ হাজার টাকায় প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা করে ডিউটি করি। তাও প্রতি মাসের টাকা বেতন কম্পানি সময়মতো দেয় না।

নিরাপত্তাকর্মীদের দায়িত্বে অবহেলা ও পর্যাপ্তসংখ্যক কর্মী উপস্থিত না থাকার বিষয়ে আল-আরাফাত সিকিউরিটি সার্ভিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বেলায়েত হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের ১৪৭ জন নিরাপত্তা প্রহরী তিন শিফটে কাজ করেন। প্রতি শিফটে ৪৭ জন সদস্য থাকেন। হাজিরা খাতায় প্রত্যেকের নাম আছে, তাঁরা স্পটে থেকে নিয়মিত কাজ করেন।’

স্পটে সবাই নেই, তাঁরা ১২ ঘণ্টা করে দুই শিফটে কাজ করেন এবং তাঁদের কয়েকজনের দায়িত্ব পালনে অবহেলার কিছু ছবি এই প্রতিবেদকের কাছে আছে, এমন কথায় বেলায়েত বলেন, ‘ভালোভাবে দেখলেই বুঝবেন তাঁরা দায়িত্ব পালন করছে কি না।’

রাজউক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতার দায়িত্বে থাকা কর্মীরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে কি না, তা দেখার জন্য নির্ধারিত লোক রয়েছে। এর পরও দায়িত্ব পালনে সংশ্লিষ্ট কারো কোনো ধরনের অবহেলা বা ঘাটতি থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

হাতিরঝিলে নানা ধরনের অপরাধের বিষয়ে স্থানীয় থানার ওসি আব্দুল রশিদ বলেন, হাতিরঝিলে বখাটেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। রাতে টহল বাড়ানো হয়েছে। অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/০৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩/বিকাল ৪:০০

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

July 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit