শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:১৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
মাটিরাঙ্গা জোনের উদ্যােগে  বিশেষ মানবিক সহায়তা ও বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান। মাটিরাঙ্গায় পলাশপুর জোনের বিশেষ অভিযানে  ভারতীয় পিস্তল ও তাজা গুলি উদ্ধার। শিবিরের নতুন সভাপতি সাদ্দাম, সেক্রেটারি জেনারেল সিবগাতুল্লাহ কুষ্টিয়া সীমান্তে ১৪ জন ভারতীয় নাগরিককে পুশইনে বিজিবি’র বাঁধা : পতাকা বৈঠকে ফেরত ভারতের রাজনীতিতে বিজেপির কৌশল ও কংগ্রেসের বিপর্যয়: বাংলাদেশের বিএনপির জন্য শিক্ষণীয় ভারত থেকে বিনিয়োগ তুলে নিয়েছে ম্যান সিটির মালিকপক্ষ মেঘনায় দুই লঞ্চের সংঘর্ষ: ঝালকাঠিতে অ্যাডভেঞ্চার-৯’ কর্মী আটক ৪ শহীদ ওসমান হাদীর স্মরণে রাঙ্গামাটিতে নওগাঁর পত্নীতলায় তৃণমূলে গণমানুষের নেতৃত্বে গড়ে উঠছে পুষ্টি সমৃদ্ধ গ্রাম বরিশালে মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড

জবা ইয়াসমিন এর জীবনের খন্ডচিত্র : মা এর সীমাবদ্ধতা

জবা ইয়াসমিন। দর্শন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রী।
  • Update Time : মঙ্গলবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০২৩
  • ৯২৬ Time View

মা এর সীমাবদ্ধতা
———————-

আমরা এমন একটা অভাবের সময় পার করে এসেছি যখন জুতা ছিড়ে গেলে আগে মায়ের হাতে মার খেতে হত। স্কুলে বই হারিয়ে ফেললেও আগে মাইর পরে কথা৷ খেলতে গিয়ে কারো হাতে মার খেয়ে এসে মাকে বললে সেখানেও উলটো মার খেতাম। পড়ে গিয়ে কান্নাকাটি করে উঠে আবার এক দফা মার খেতাম৷ মার খেয়ে কান্না না থামানোর জন্যও মার খেতাম।

জ্বর বাধালে মার না খেলেও সেবার বদলে আগে প্রচন্ড বকা শুনতাম৷ তারপর রাতের আঁধারে আমাদের মায়েরা জ্বরাক্রান্ত সন্তানের পাশে বসে জেগে জেগে মাথায় হাত বুলাত আর নিজের চোখের পানি মুছত। বাড়িতে ভাল মন্দ রান্না হলে এক পিস বেশি চাইলে প্রথমে দিত, পরের বার কথা শুনাতো আচ্ছামত। এরপর দেখা যেত সবার শেষে মায়ের পাতে শুধু ঝোল ভাত আর তার ভাগের যত্ন করে তুলে রাখা মাংস টুকরোটা পরের বেলায় আমাদের পাতেই আসতো।

ঈদ আসলেই অভাবের সংসারে আমাদের মায়েরা শেখাতো যে বড়দের কোনো ঈদ নেই। আমরা নতুন পোষাক পেয়ে খুশি হতাম আর আমাদের মায়েরা পরনের নরম-মলিন সুতি শাড়ির ফাঁক গলে আমাদের হাসিমুখ দেখে খুশি হত৷

আমাদের স্বপ্ন থাকতো একদিন আস্ত ৪টা ডিম একসাথে খাবার। কিন্তু তবুও ছোট্ট একটা মুরগীর ডিমই কাঠি দিয়ে ৪ ভাগ করে যখন সবার পাতে দিতেন তখন অন্তত মনে হত আমাদের মা খুব ভাল ভাগ করতে জানে। অথচ মা কখনোই ন্যায় বিচারক ছিলেন না। সহোদরদের সাথে খুনসুটিতে মারামারি লাগলে মা শুধু দোষীকে শাস্তি না দিয়ে সবাইকেই একসাথে মারতেন। যে কান্না আমরা কাঁদতে কাঁদতে মায়ের কাছে নালিশ দিতাম একে অপরের নামে সেই কান্নাই আমরা ভাইবোনেরা মিলে গলাগলি ধরে কাঁদতে কাঁদতে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়তাম। মা পাতে ভাত মেখে যখন খাওয়ার জন্য জাগাতেন আমরা ততক্ষন আগের কিছুই মনে আর মনে রাখতে পারতাম না।

আমরা কেউ আদর্শ লিপি বা কেউ প্রাথমিকের বোর্ড বই নিয়ে একসাথে সবাই পড়তাম কবির স্যারের কাছে। মা নিষ্ঠুরের মত লাঠি দিয়ে বলে যেতেন হাড়গুলো শুধু জায়গামত থাকলেই হবে। আমরা তখন স্বপ্নেও দেখিনি যে এমন মা পাওয়া যায় যেখানে A+ না পেয়ে মায়ের বকুনিতে আত্নহত্যা করে যদি এই ভয়ে কোনো মা উলটো ভয় পেতে থাকে। স্বপ্নেও এমন মায়ের ধারণা না থাকলেও আমাদের মাকেই তবু ভাল মনে হত যখন স্কুলে যাবার আগে মা টিফিন বাটিতে করে গরম ভাত আর সাথে ১টাকার কয়েন অথবা দোয়েল পাখির নোটটি দিয়ে দিত। যদিও কখনো কখনো আমাদের রাগ হতো এই ভেবে যে আস্ত একটা ডিম খেতে না দিয়ে সেই ডিম কেন শাড়ির কোছড়ে করে মা রাহেলাদের বাড়ি দিয়ে আসে। তবে রাহেলাদের বাড়ি থেকে কখনো এক বাটি সেমাই আসলে আমাদের এই রাগটুকুও মনে থাকতোনা। আমরা খেতে খেতে আরো খাওয়ার ইচ্ছে জাগতো আর রাগ হতো মায়ের ওপর। মায়ের রান্না সেমাই একটুও মজা হতোনা। ওদের সেমাইয়ে কি সুন্দর কিসমিস থাকতো, কখনো ২/৩ রকমের বাদামও পাওয়া যেতো আর কেমন মাখন মাখন ঘ্রাণ। মায়ের দুধ ছাড়া অথবা পানিমিশ্রিত দুধের সেই বাদাম-কিসমিসহীন সেমাই দেখে কখনোই মনে হয়নি মা আমাদের পছন্দের কোনো গুরুত্ব দেন। অথচ খুব খুশি হলে আমাদের মায়ের মুড়ি-বাতাসার থেকে প্রিয় বা খেতে চাওয়ার মত আর তেমন কিছুই ছিলোনা। আমরা তখনো জানতাম না কোথাও পিজ্জা,বার্গার নামের কোনো খাবার থাকতে পারে।

আমাদের মায়েদের বকুনি এখন কমে গেছে, আমাদের মায়েরা এখন সন্তানের ব্রেকাপ হলেও মেন্টাল সাপোর্ট দেয়। খাবার টেবিলে বকুনি দেয় আস্ত ২টো সেদ্ধ ডিম একবারে না খাওয়ার জন্য। আলাদা ডিপোজিট করে আমাদের টিফিন সহ যাবতীয় পড়াশোনার খরচের জন্য। আমরা বছর জুড়ে কয়েক সেট নতুন কাপড় পাই। আমাদের মায়েদের ভালবাসা কখনো কমেনি তবে দিনকে দিন তারা আমাদের মাঝে শুধু সে হয়ে উঠতে চায়। ঠিক যেমন গাছের শরীরে কখনো পাখির ডানা জন্মায় না। আমাদের মায়েরা ডুকরে কাঁদে, ফুফিয়ে কাঁদে, আর আমরা দরজায় লাথি দেই,জলের গ্লাস ভাঙি,সিলিং এর প্রেমে পড়ি।

 

 

লেখিকাঃ জবা ইয়াসমিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগ থেকে অনার্স, মাস্টার্স শেষ করেছেন। জীবনের পরতে পরতে সংগ্রাম করেছেন নিরন্তর। জীবনের খন্ডচিত্র এঁকে থাকেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। আজকের লেখাটি তাঁর ফেসবুক টাইমলাইন থেকে সংগৃহিত।

 

 

 

 

কিউএনবি বিপুল/১৭.০১.২০২৩/ রাত ৮.২০

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

December 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit