“বন্ধু, তোমার ছাড়ো উদ্বেগ, সুতীক্ষ্ণ কর চিত্ত,
বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাঁটি, বুঝে নিক দুর্বৃত্ত |
প্রফেসর ড. এ এস এম আমানুল্লাহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি’র দায়িত্ব লাভ করেছেন ৫ আগস্ট ২০২৪ এর পট পরিবর্তনের পর। এই দায়িত্বলাভ তার জন্যে ছিল আগুন স্পর্শ করার মত। সারাদেশের ডিগ্রী কলেজ গুলোর গভর্নিং বডি ভেংগে দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রনালয়। ফ্যাসিস্টদের হাত থেকে মুক্ত করতেই সরকারের এই সিদ্ধান্ত ড. আমানের জন্যে বিরাট চ্যালেঞ্জ সৃস্টি করে।
খুব চমৎকার ভাবে ভিসি আমান সারাদেশের স্নাতক শ্রেনীর কলেজ গুলোতে শিক্ষা বান্ধব এডহক কমিটি দিতে সক্ষম হয়। এ কাজটি কত দুরহ ছিল তা আমি নিজেই চাক্ষুষ করেছি।
আমার জেলা কুড়িগ্রামের ভুরুংগামারী উপজেলার একটি কলেজের সমস্যা নিয়ে মাস দুয়েক আগে গাজিপুরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির দরবারে গেলাম। সংগে কুড়িগ্রাম-১ আসনের বিএনপির প্রার্থী। কাজ শেষ হওয়ার আগেই শুরু হয়েছে বাইরে হট্টগোল। কিছু ছাত্র অটোপাশের দাবীতে ভিসির দপ্তর ঘেরাও করেছে।
পুলিশও এসেছে। ঢাকাতে আমার জরুরি কাজ। গেট খুলে বাইরে এসে ছেলেদের সাথে কথা বললাম- শুরু থেকেই এদের প্রতি আমার নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হয়ে আছে। এরা ডিগ্রী পরীক্ষায় ফেল করেছে, অটোপাস চায়। ভিসি সহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল এই উদ্ভট দাবি মানতে নারাজ।
এর মাঝে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার দুজন ছাত্রকে পেলাম। তাদের বক্তব্য, হাসিনা পতন আন্দোলন ও করোনার কারণে তারা নাকি ভালো পরীক্ষা দিতে পারেনি। আমি ওদের কাছে জানতে চাইলাম – যারা পাশ করেছে তারা হাসিনা বিরোধী আন্দোলন অথবা অনেক অনেক দিন আগে করোনার কারণে ইফেক্টেড হয়নি ? আমার চোটপাট দেখে তারা আমাদের গাড়ি বের করার সুযোগ দিল। আমি চললাম, ঢাকার পথে।
২১.০৫.২০২৫ এ বিকাল বেলায় কুড়িগ্রাম থেকে জানতে পারলাম – ভিসি আমানের সংগে এই গুনধর ছাত্ররা অবাঞ্চিত আচরণ করেছে। পত্রিকা ও সোশ্যাল মিডিয়ায় দুঃখজনক সে ছবি দেখে খুব কস্ট পেয়েছি। আসলে দেশটা যাচ্ছে কোথায় ?
১৯৮৬ সাল থেকে ভিসি ড.আমান ফেরদৌসকে চিনি। আমার ইয়ারমেট। মেধাবী আমান পড়ত সোসিওলোজিতে। কবি জসিম উদ্দিন হলের আবাসিক ছাত্র ছিল। একটি বর্ণাঢ্য পরিবারের সন্তান ড. আমানকে যে ছাত্ররা চিনতে পারেনি তারা সত্যিই দুর্ভাগা। জীবন যাবে তবুও ড.আমান অন্যায়ের সাথে আপোষ করবে না।
১৯৭৯ সালের সংসদ নির্বাচনে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিএনপির প্রাথী হিসাবে সিলেট অঞ্চলে ড.আমানের বাবাকে মনোনয়ন প্রদান করেন। শহীদ জিয়া ক্লিন ইমেজের মানুষকেই এমপি প্রার্থী করতে আগ্রহী ছিলেন। তিনি ধানের শীষ মার্কায় বিপুল ভোট পেয়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। একটি রাজনৈতিক পরিবার থেকে আগত ড.আমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেধার স্বাক্ষর রেখে শিক্ষকতার পেশা বেছে নিয়েছেন শুধুমাত্র শিক্ষার প্রতি প্রগাঢ় ভালোবাসার কারণে।
যে সকল ছাত্ররা ফেল করে অটোপাস চেয়ে একজন ভিসির সংগে দুর্ব্যবহার করতে পারে তাদের জন্যে আমার খুব করুনা হয়। তারা কিন্তু আমার জবাব দিতে পারেনি – তাদের বন্ধুরা আন্দোলন ও করোনার কারণে ফেল করেনি কেন ?
আমরা ৮০ এর দশকের আগুনঝরা দিনের মানুষগুলো কিন্তু এখনো ফুরিয়ে যাইনি। ড.আমান নিজেও এরশাদ বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন বীর সেনানী। সে আমাদের বন্ধু – আমান চায় সারাদেশে স্নাতক স্তরে শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাক। আমরাও তাই চাই। সারাদেশবাসীও তাই চায়।
আমি এই সকল ফেল করা ছাত্রদের অভিভাবকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আপনারা আপনাদের গুনধর সন্তানদের সম্ঝান, বুঝান। পড়াশোনা করতে বলুন। বর্তমান সমাজ অটোপাস দাবীদার ছাত্রদের সংগে নেই। বর্তমান সমাজ তাকিয়ে রয় -আলো ঝলমল করা ছাত্র -ছাত্রীদের দিকে। আপনাদের সন্তানদের আলোকিত করা কিন্তু খুব কঠিন কোন কাজ নয়।
লেখকঃ লুৎফর রহমান একজন রাজনীতিবিদ ও লেখক। তিনি নিয়মিত লেখালেখির পাশাপাশি ইলেক্ট্রনিক নিউজ মিডিয়ার সম্পাদক ও প্রকাশক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র লুৎফর রহমান ৮০ এর দশকের স্বৈরাচার বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরতে চারটি রাজনৈতিক উপন্যাস লিখেছেন, যা দেশ বিদেশে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় জীবনের খন্ডচিত্র এঁকে তিনি এখন ব্যাপক পরিচিত পাঠক মহলে। গঠনমূলক ও ইতিবাচক লেখনীতে তিনি এক নতুন মাত্রা সংযোজন করতে সক্ষম হয়েছেন।
২৬.০৫. ২০২৫/ রাত ১২.০৭