ডেস্ক নিউজ : বাণিজ্য ক্যাডারকে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে একীভূত করার জন্য কমিটি গঠন করা হচ্ছে। কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তথ্য (সাধারণ বেতার) এবং সমবায় ক্যাডারও প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে একীভূত হতে আবেদন করেছে। বাণিজ্য ক্যাডার একীভূত করার বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার একটি পর্যালোচনাসভা হয়েছে।
বৈঠক উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানান, সচিবালয় ও ইকোনমিক ক্যাডারের মতোই বাণিজ্য ক্যাডারকে একীভূত করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবকে প্রধান করে শিগগির একটি কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়। কমিটির কার্যপরিধি ঠিক করে দেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পদোন্নতি, পদায়নসহ সার্বিক বিষয়ের করণীয় ঠিক করা হবে। একীভূত করতে কিছুটা সময় লাগবে। কারণ ক্যাডার একীভূত করার কাজটি ছোট নয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, আইন অনুযায়ী সাধারণ ক্যাডারের কর্মকর্তারা উভয়ে একমত হলে যেকোনো সময় তাঁরা একীভূত হতে পারেন। টেকনিক্যাল ক্যাডারের কর্মকর্তারা সাধারণ ক্যাডারের সঙ্গে একীভূত হতে পারবেন না। এ ছাড়া ক্যাডার একীভূত করার বিষয় পুরোপুরি সরকারপ্রধানের ওপর নির্ভর করে। সরকারপ্রধান অনুমোদন দিলে একীভূত হতে কোনো সমস্যা নেই।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর কালের কণ্ঠে ‘বাণিজ্য ও চ্যালেঞ্জ বাড়ছে, কিন্তু বাণিজ্য ক্যাডার মুমূর্ষু’ শিরোনামে প্রধান প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। বিসিএস বাণিজ্য ক্যাডার অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের দপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান নিয়ন্ত্রক নন্দন কুমার বণিক কালের কণ্ঠকে বলেন, অনেক দিন ধরে এটা ঝুলে আছে। গুরুত্বপূর্ণ একটা ক্যাডারকে এভাবে ফেলে রাখা যায় না। যেটাই হোক এখন একটা সিদ্ধান্ত আসবে। রাষ্ট্রের প্রয়োজনেই এটা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, কালের কণ্ঠ’র প্রতিবেদনের পরই বিষয়টি নিয়ে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। গতকালের বৈঠক তারই ফল।
বাণিজ্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা জানান, দেশ এবং দেশের বাইরে ব্যবসা-বাণিজ্যে যখন প্রতিযোগিতা ও চ্যালেঞ্জ বাড়ছে, তখন বাণিজ্যসংক্রান্ত বিশেষায়িত ক্যাডার ক্রমে সংকুচিত হচ্ছে। বাণিজ্য ক্যাডারের সদস্য এখন মাত্র ২১। ১৯৯৪ সালে এই ক্যাডারে পদ ছিল ১১৬টি। বাণিজ্য ক্যাডারের পদগুলোতে এখন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা কাজ করছেন।
কর্মকর্তারা বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল রাষ্ট্র হলে বাণিজ্যিক চ্যালেঞ্জ আরো বাড়বে। ফলে এখনই দক্ষ জনবল তৈরি করা জরুরি। এর জন্য বাণিজ্য ক্যাডারকে শক্তিশালী করাতে বিদ্যমান আইন, নীতিমালা, বিধি, পরিপত্র ও আদেশ সংশোধন করে সময়োপযোগী করা প্রয়োজন। কিন্তু তা যেহেতু হচ্ছে না সে জন্য বাণিজ্য ক্যাডারকে প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে একীভূত করাই ভালো।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও বাণিজ্য ক্যাডারের কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, বাণিজ্য ক্যাডারের জটিলতার সমাধান করা খুব জরুরি। কারণ রাষ্ট্রের প্রয়োজনে এই ক্যাডার প্রসারিত করতে হবে অথবা বিলুপ্ত করে নতুন কিছু করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, সামনে আরো অনেক চ্যালেঞ্জ আসবে। বৈশ্বিক পরিস্থিতি পরিবর্তন হচ্ছে। বাণিজ্যিক কূটনীতির জন্য অবশ্যই একদল জনবল তৈরি করা প্রয়োজন। দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সেলর পদেও পেশাদার, দক্ষ জনবল নিয়োগের নীতিমালা করতে হবে।
একীভূত হতে চায় তথ্য ও সমবায় ক্যাডার : বাণিজ্য ক্যাডারের মতো তথ্য (সাধারণ বেতার) ও সমবায় ক্যাডারের কর্মকর্তারাও প্রশাসনের সঙ্গে একীভূত হতে চান। এই দুই ক্যাডারের কর্মকর্তারা প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে একীভূত হতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, জ্যেষ্ঠ সচিব ও বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের কাছে আবেদন করেছেন।
বিসিএস তথ্য (সাধারণ বেতার) কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার (সচিব পদমর্যাদা) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘দুই বছর আগে একীভূত হওয়ার জন্য আমরা চিঠি দিয়েছি। বিএএসএ নেতাদের অনুরোধ করেছি। কিন্তু কোনো অগ্রগতি নেই। ’
বিসিএস সমবায় অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মুহাম্মাদ গালীব খান বলেন, প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে একীভূত হওয়ার জন্য তাঁরা দুই বছর আগে চিঠি দিয়েছেন। সমবায় ক্যাডারের পদ আপগ্রেডেশনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বৈঠক করেছিল। তারও আর অগ্রগতি নেই। সমবায় ক্যাডারের পদ ছিল ১৯৬টি। এর মধ্যে ৭৭টি পদ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এখন মাত্র ১১৯টি পদ আছে। তিনি জানান, প্রশাসনের সঙ্গে একীভূত হওয়ার জন্য তাঁরা আবার আবেদন করবেন।
দুটি ক্যাডার করার প্রস্তাব : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক মোসলেহ উদ্দিন আহমদ বলেন, অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা প্রশাসনের সঙ্গে একীভূত হতে চাইলে করা উচিত। কারণ সাধারণ ক্যাডারের কর্মকর্তারাও প্রশাসন ক্যাডারের মতো কাজ করে থাকেন। তিনি প্রস্তাব করেন, দেশে দুটি ক্যাডার থাকা উচিত; একটি সাধারণ, অন্যটি টেকনিক্যাল বা কারিগরি।
মোসলেহ উদ্দিন আহমদ বলেন, উপসচিব থেকে ওপরের পদগুলোতে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের প্রাধান্য বেশি। তথ্য, ট্রেড, সমবায়সহ অনেকগুলো ক্যাডারে কর্মকর্তার সংখ্যা অনেক কম। তাঁরা সময়মতো পদোন্নতি পান না। একই প্রশ্নে পরীক্ষা দেওয়ার পরও তাঁরা মন্ত্রণালয়ে কাজের সুযোগ পান না। ফলে অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা মনে করেন, প্রশাসনের সঙ্গে একীভূত হলে দেরিতে হলেও তাঁরা উপসচিব, যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিব হতে পারবেন। ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তারা একীভূত হয়ে পদোন্নতি পাওয়ার ফলে অন্য ক্যাডার কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে আগ্রহ বেড়ে গেছে। ২০১৮ সালে তাঁরা একীভূত হন।
কিউএনবি/আয়শা/৩০ ডিসেম্বর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/দুপুর ১২:৩৮