ডেস্ক নিউজ : কিয়ামতের আগে পৃথিবী কতটা উন্নত হবে, তা অনুমান করা দুষ্কর। তবে রাসুল (সা.)-এর কিছু হাদিস থেকে বোঝা যায়, কিয়ামতের আগে পৃথিবী প্রযুক্তিগত দিক থেকে অনেক দূর এগিয়ে যাবে।
আবু সাঈদ আল খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! কিয়ামত সংঘটিত হবে না যে পর্যন্ত না হিংস্র প্রাণী মানুষের সঙ্গে কথা বলবে, যে পর্যন্ত না কারো চাবুকের মাথা এবং জুতার ফিতা তার সঙ্গে কথা বলবে এবং তার ঊরুদেশ বলে দেবে তার অনুপস্থিতিতে তার পরিবার কী করেছে। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ২১৮১)
এই হাদিসের একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো, ‘কিয়ামতের আগে হিংস্র প্রাণী মানুষের কথা বলবে।
’ প্রশ্ন হলো, প্রাণীদের কি ভাষা আছে? তারা কি মানুষের সঙ্গে কথা বলতে পারে? এর জবাব হলো, প্রাণীদের অবশ্য ভাষা আছে। মহান আল্লাহ প্রাণীদের ভাষা বোঝার যোগ্যতা সুলাইমান (আ.)-কে দান করেছিলেন। (সুরা নামল, আয়াত : ১৬)
কোরআনে সুলাইমান পিঁপড়ার কথোপকথনে মুচকি হাসার বর্ণনাও পাওয়া যায়। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আমার প্রতিপালক, তুমি আমার প্রতি ও আমার মা-বাবার প্রতি যে অনুগ্রহ দান করেছ তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশের আমাকে শক্তি দান করো আর যাতে এমন সৎকাজ করতে পারি, যাতে তুমি সন্তুষ্ট হও আর তোমার দয়ায় আমাকে তোমার সৎকর্মশীল বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করো। ’ (সুরা : নামল, আয়াত : ১৮)
এগুলো ছিল সুলাইমান (আ.)-এর বিশেষ মুজেজা। কিন্তু ওপরে উল্লিখিত হাদিস থেকে বোঝা যাচ্ছে, কিয়ামতের আগে মহান আল্লাহ মানুষকে প্রাণীদের সঙ্গে যোগাযোগ করার ক্ষমতা দেবেন। এমনকি কোরআনের বর্ণনাতেও আছে যে কিয়ামতের আগে মহান আল্লাহ ‘দাব্বাতুল আরদ’ বের করবেন, যেগুলো মানুষের সঙ্গে কথা বলবে।
তবে অন্য প্রাণী কিভাবে মানুষের সঙ্গে কথা বলবে, এর কিছুটা নমুনা বর্তমান বিশ্বে পাওয়া যায়। যেমন : আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ডগ স্কোয়াড, কুকুরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের মাধ্যমে বিপজ্জনক অপরাধী ও অস্ত্র ইত্যাদি শনাক্ত করে ফেলা হয়। এ ছাড়া আগে মানুষ পোষ্যের বিভিন্ন অঙ্গ-ভঙ্গি দেখে তাদের চাহিদা বুঝতে পারত, আর এখন পোষ্যের ভাষা, তার চাহিদা বোঝার জন্য কিছু প্রযুক্তি এসে গেছে, যেমন—বোলিংগুয়াল বার্ক ট্রান্সলেটর : এটি মূলত কুকুরের ঘেউঘেউ থেকে ভাষায় রূপান্তর করে তার মনের ভাব বোঝার একটি প্রযুক্তি। গিজবট ডটকমে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, নর্দান অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক স্নোবোডচিকফ এই বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ তিন দশক গবেষণা করে চলেছেন।
এরই মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কল্যাণে এই প্রযুক্তি আবিষ্কারে অনেক দূর এগিয়ে গেছে বিজ্ঞানীরা। ফুরবোর ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে, একটি বিশেষ ক্যামেরার মাধ্যমে কুকুরের সঙ্গে ভিডিও চ্যাট করা যাবে। পোষা প্রাণীটি ঠিক কী করতে চাচ্ছে, সেটি রিয়েল টাইমে ভাষান্তর করে বোঝাবে ক্যামেরা। ব্যবহারকারীর কুকুরের ওপর নজর রাখতে ক্যামেরাটি হালচাল ধারণ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে বিশ্লেষণ করে মালিককে সংকেত পাঠাবে।
কুকুরকে নজরে রাখতে ফুরবো অনেক আগে থেকেই ক্যামেরা বানাচ্ছে। কিন্তু এমন চমকপ্রদ ফিচার এই প্রথম যোগ করল তারা।
এই প্রযুক্তি আরো উন্নত হলে হয়তো একসময় বাঘ, সিংহের মতো হিংস্র পশুর ভাষাও মানুষ বুঝতে সক্ষম হবে এবং তাদের সঙ্গে কথোপকথন করতে পারবে।
প্রাণীদের সঙ্গে কথোপকথনের আরেকটি পদ্ধতি হলো, প্রাণীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে তার বিভিন্ন চাহিদা বোঝানোর শিক্ষা দেওয়া। এ পদ্ধতিতে অনেক প্রাণীই মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। অর্থাৎ তারা মানুষকে বুঝতে পারে এবং তারা কি বলছে সেটাও তারা মানুষকে বোঝাতে চেষ্টা করতে পারে। কোনো জিনিসের দিকে ইঙ্গিত করার মাধ্যমে আরো যেসব প্রাণী মানুষের সঙ্গে কমিউনিকেট করতে পারে তাদের মধ্যে রয়েছে গরিলা, শিম্পাঞ্জি ও বানর জাতীয় প্রাণী এবং ডলফিন। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঘোড়ারাও প্রশিক্ষণ পেলে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। নরওয়ের পশুরোগ বিষয়ক একটি ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী ড. সেসিলি মেডেল এর নেতৃত্ব ঘোড়াদের ওপর চালানো এক পরীক্ষায় দেখা যায়, ঘোড়ারা তাদের চাহিদার কথা মানুষকে বোঝাতে পারছে।
এ ছাড়া পোষ্যের ভাষাকে রীতিমতো ‘ডিকোড’ করতে পারেন বলে দাবি করেছেন, ক্যালিফোর্নিয়ার হোয়ান র্যানকুয়েট (Joan Ranquet)। তিনি দাবি করেন, কুকুর, বিড়াল, পাখি কিংবা ঘোড়ার মতো পোষ্য প্রাণী তো বটেই, বাঘ-সিংহ-ভাল্লুক এমনকি ডলফিনের ভাষাকেও দিব্যি বুঝতে পারেন র্যানকুয়েট। কথাও বলতে পারেন তাদের সঙ্গে।
কিন্তু কিভাবে তিনি যোগাযোগ স্থাপন করে প্রাণীদের সঙ্গে? র্যানকুয়েট জানাচ্ছেন, পোষ্যদের সঙ্গে কথা বলা অনেকটা টেলিপ্যাথির মতোই। শব্দ, অনুভূতি এবং অঙ্গভঙ্গির মধ্য দিয়েই বুঝতে হয় তাদের কথা। নিজেদের কথা তাদের বোঝাতে গেলেও এই একই পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয় মানুষকে। সেদিক থেকে দেখতে গেলে তাঁকে পোষ্য মনস্তাত্ত্বিক বললেও ভুল হয় না এতটুকু।
তাঁর এই থিওরিটি সুরা নামলের ১৮ নম্বর আয়াতের সঙ্গে মিলে যায়। সেখানে সুলাইমান (আ.)-এর পিঁপড়ার কথোপকথন বুঝে হেসেছিলেন, আয়াতের ধরন দ্বারা মনে হয়, সম্ভবত সুলাইমান (আ.) পিঁপড়ার কথোপকথনটি টেলিপ্যাথির মাধ্যমে বুঝেছিলেন।
যা-ই হোক, পোষ্যের ভাষা বুঝতে পারার দাবিদার হোয়ান র্যানকুয়েট এরই মধ্যে স্থাপন করেছেন ‘অল লাইফ ইউনিভার্সিটি’। যেখানে সাধারণ মানুষকে পোষ্যের ভাষা শেখানো হয়। ইতিমধ্যে প্রায় কয়েক হাজার মানুষ ট্রেনিং নিয়েছেন তাঁর থেকে। আর এর মধ্য দিয়ে হাদিসের বর্ণিত ‘কিয়ামতের আগে প্রাণীদের কথোপকথন’-এর পথ প্রশস্ত হচ্ছে।
কিউএনবি/আয়শা/২২ ডিসেম্বর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/সন্ধ্যা ৭:১৮