সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫, ০২:৩৯ অপরাহ্ন

পরীক্ষামূলক ভাবে নওগাঁর বরেন্দ্র এলাকায় দার্জিলিং কমলা চাষে সফল সাইদুল

সজিব হোসেন, নওগাঁ প্রতিনিধি
  • Update Time : মঙ্গলবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ১১৩ Time View

সজিব হোসেন, নওগাঁ প্রতিনিধি : সারি সারি কমলার গাছ। থোকায় থোকায় ঝুলছে কাঁচা সবুজ ও হলুদ রঙের কমলা। রসালো কমলার ভারে প্রতিটি গাছ নুয়ে পড়ছে। কোনো কোনো গাছে বাঁশের লাঠির সাহায্যে ঠেস দিয়ে রাখা হয়েছে। বাতাসে পাকা কমলার সুমিষ্ট গন্ধে পুরো বাগান ছড়িয়ে পড়েছে। এমনি এক কমলার বাগানের দেখা মিলবে নওগাঁর সীমান্তবর্তী উপজেলা ধামইরহাটের আগ্রাদিগুন ইউনিয়নের হয়রতপুর গ্রামের পাশে। বাগানের মালিক সাইদুল ইসলাম পরীক্ষামূলক ভাবে দার্জিলিং জাতের এই কমলা চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন। চোখ জুড়ানো হলুদ কমলার সৌন্দয্যের সমারোহ দেখতে এসে অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠেছেন এই কমলা চাষে। চলতি ডিসেম্বর মাস থেকে এসব কমলা বাজারজাত করে লাভবান হওয়ার আশা করছেন তিনি।

সাইদুল ইসলাম নওগাঁর সীমান্তবর্তী উপজেলা ধামইরহাটের আগ্রাদিগুন ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা। জানা যায়, সাইদুল ইসলাম ২০১২ সালে নওগাঁ সরকারি কলেজ থেকে মাস্টার্স শেষ করেন। এরপর তিনি চাকরির পিছনে না ছুটে নিজে কিছু করার চিন্তা করেন। এই ভাবনা থেকে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে আগ্রাদিগুন ইউনিয়নের হয়রতপুর গ্রামের পাশে প্রথমে তিন বিঘা জমি লিজ নিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির ফল বাগান গড়ে তোলেন। সেখানে তিনি দার্জিলিং জাতের কমলার চারা কিনে এনে এক বিঘা জমিতে রোপণ করেন। দীর্ঘ দুই বছরের পরিচর্যায় এ বছর প্রতিটি গাছে পর্যাপ্ত পরিমানে কমলা এসেছে। এছাড়াও সেই বাগানে রোপণ করেন বারি-১ মাল্টা, বারি-৩ বারোমাসি জাতের মাল্টা, বরই, পেয়েরা, কাটিমন, আমরুপালি, বারি-৪ জাতের আমের চারা।

ইতিমধ্যে মাল্টা, বরই ও পেয়ারা থেকেও ফলন পেয়েছেন তিনি। তার মিশ্র ফলের বাগানে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে ৮-১০ জন কৃষকের। বর্তমানে তার মিশ্র ফল বাগানের আয়তন ১৮ বিঘা। এ বিষয়ে কথা হয় সাইদুল ইসলামের সাথে। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, মাস্টার্স শেষ করে চাকরির পিছনে না ছুটে বা অন্যের অধিনে না থেকে নিজে কিছু করার ভাবনা থেকেই মিশ্র ফল বাগান তৈরির চিন্তা করেন। প্রথমে তিন বিঘা জমি লিজ নিয়ে মাল্টা, বরই পেয়ারা এবং আমের চারা রোপণ করেন। তখন মাথায় আসলো যেহেতু নওগাঁ আমের জন্য বিখ্যাত, আম ছাড়া অন্য কোন ফসল ফালানো যায় কিনা। তখন পরীক্ষামূলক নীলফামারী থেকে দার্জিলিং জাতের কমলার চারা কিনে এনে এক বিঘা জমিতে রোপণ করেন। তিনি আরও বলেন- মাল্টা, বরই, পেয়ারা ও আম পাশাপাশি কমলা চাষ করে সবচেয়ে কমলার ফলন ভালো হয়েছে। মাল্টা যেভাবে চাষ করা হয় সেভাবে কমলা চাষ করেছিলাম।

অন্যান্য ফসলের চেয়ে রোকবালাই কম। প্রাকৃতিকভাবেই চাষ করা হচ্ছে। রোপণের পর এই প্রথম কমলার গাছে কমলা ধরেছে। প্রথমবারেই ফলন খুব ভালো হয়েছে। বর্তমানে ১৩৪টি কমলার গাছ আছে। প্রতিটি গাছ থেকে সর্বচ্চো ৫০ কেজি করে কমলা পাওয়া যাবে বলে তিনি আশা করছেন। চলতি ডিসেম্বর মাস থেকে এসব কমলা বাজারজাত করবেন বলে তিনি আশা ব্যাক্ত করেন। বাজারে কমলার দামও ভালো আছে। প্রথমবারেই দুই থেকে তিন লাখ টাকার কমলা বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশা করছেন। এছাড়াও এই বাগান থেকে আরও ৬ লাখ টাকার মত তিনি মাল্টা বিক্রি করেছেন। সাইদুল ইসলাম বলেন, এখন অনেকেই আমার এই কমলার বাগান দেখতে এসে কমলা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন এবং চারা নিতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। কমলার ফলন ভালো হওযায় আরও বড় পরিসরে করার চিন্তাভাবনাও করছি। কমলার বাগান দেখতে এসেছেন স্থানীয় রাকিবুল হোসেন। তিনি বলেন, সাইদুলের বাগানে কমলা চাষের বিষয়টি বেশ কিছুদিন থেকে শুনছিলাম। মূলত দেখার জন্য এসেছি। বাগানে বিভিন্ন রকম ফলের গাছ দেখলাম।

এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে কমলা। এত বেশি পরিমাণ ধরে আছে দেখতে খুবই ভালো লাগছে। এই ধরনের মাটিতে এত সুন্দর কমলা হবে, আসলে কল্পনার বাইরে। এই ধরনের কমলার চাষ করতে পারলে লাভবান হওয়া যাবে। ধামইরহাট উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবু সাঈদ বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে লেবু জাতীয় ফসলের সম্প্রসারিত ব্যবস্থাপনা এবং উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় ফল বাগান প্রদর্শনীর তিন বিঘা জমি সাইদুল ইসলামকে দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে মাল্টা ও কমলা চাষের জন্য তা বৃদ্ধি করা হয়। এই অঞ্চল উচ্চ বরেন্দ্র-ভূমি শ্রেণীর মধ্যে পড়েছে। এই জমি সমতল জমির চেয়ে উঁচু। বর্তমানে এই জমিগুলো কমলা চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো। কমলা চাষের জন্য যে ধরনের মাটি বৈশিষ্ট্য থাকার দরকার এই অঞ্চলে রয়েছে। তার বাগানের কমলা গাছের বয়স ২ বছর। এবারই প্রথম ফলন এসেছে। আশা করছি আগামী বছর এই ফলন অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে।তিনি আরও বলেন, কৃষি বিভাগ সব সময় বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষক প্রশিক্ষণের আয়োজন করে থাকে। কেউ এ প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করতে চাইলে কৃষি বিভাগ তাদেরকে স্বাগত জানায়। সেসব প্রশিক্ষণে ভূমি শ্রেণি অনুযায়ী কোন ফসল কোন জমিতে ভালো হবে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। যেসব উদ্যোক্তা ও বেকার যুবকরা কৃষিতে আসতে চায় তাদের নিজ নিজ উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করে সে কি ফসল করতে চায় সেটার উপর প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ শুরু করলে আগামীতে কৃষি বিপ্লব ঘটবে। এবং এই এলাকায় বড় ধরনের কমলা বিপ্লব ঘটবে।

কিউএনবি/অনিমা/০৬ ডিসেম্বর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/বিকাল ৫:৩৯

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

July 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit