শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:৩৪ পূর্বাহ্ন

মহান আল্লাহর অপূর্ব অনুগ্রহ বায়ুশক্তি

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২২
  • ৯৫ Time View

ডেস্ক নিউজ : মহান আল্লাহর সৃষ্টির অন্যতম নিদর্শন বাতাস। যা পৃথিবীকে মানুষসহ যাবতীয় প্রাণীর বসবাসের উপযোগী করেছে। জীবজন্তু বাতাস থেকে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন গ্রহণ করে, আর উদ্ভিদ কার্বন ডাই-অক্সাইড টেনে নিয়ে প্রাণ রক্ষা করে। বাতাসে অক্সিজেন আছে বলেই আগুন জ্বলে আর বাতাসে জলীয়বাষ্প আছে বলেই বৃষ্টি হয়।

বলা যায় সব প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য বাতাসের বিকল্প নেই। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাঁর এই নিয়ামত সম্পর্কে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আকাশসমূহ ও পৃথিবীর সৃষ্টির মধ্যে, রাত ও দিনের বিবর্তনের মধ্যে, লোকের উপকারী দ্রব্যাদিসহ সমুদ্রে চলাচলকারী জলযানের মধ্যে এবং আকাশ থেকে আল্লাহর বর্ষিত সেই পানির মধ্যে, যা দ্বারা তিনি পৃথিবীকে মরে যাওয়ার পর আবার জীবিত করেন এবং তাতে সকল প্রকার জীব-জন্তুর বিস্তারণে এবং বাতাসের গতি পরিবর্তনের মধ্যে এবং আকাশ ও ভূমণ্ডলের মধ্যস্থলে নিয়ন্ত্রিত মেঘপুঞ্জের মধ্যে বিবেকসম্পন্ন লোকদের জন্য নিদর্শনাবলি রয়েছে। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৬৪)

এই আয়াতে মহান আল্লাহ তাঁর বিশেষ কিছু নিয়ামতের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, যেগুলো বিবেকবান লোকদের জন্য বহু নিদর্শনাবলি রয়েছে, তার মধ্যে বাতাস অন্যতম। অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বাতাসকে তাঁর বিশেষ অনুগ্রহ বলে আখ্যা দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তাঁর নিদর্শনের মধ্যে হলো এই যে তিনি বায়ু প্রেরণ করেন সুসংবাদ দানের জন্য ও তোমাদের তাঁর অনুগ্রহ আস্বাদন করানোর জন্য। তাঁর নির্দেশে নৌযান চলে, যাতে তোমরা তাঁর অনুগ্রহ অনুসন্ধান করতে পার আর তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পার। ’ (সুরা রুম, আয়াত : ৪৬)

মহান আল্লাহর মহামূল্যবান এই নিয়ামত যেমন আমাদের বেঁচে থাকতে সহযোগিতা করে, তেমনি আমাদের বেঁচে থাকার বহু উপকরণও তৈরি করে। বাতাসের শক্তি কাজে লাগিয়ে মানুষ পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে দ্রুত বিচরণ করতে পারে। বাতাসের শক্তি কাজে লাগিয়ে মানুষ বর্তমান পৃথিবীর উন্নতির চাবিকাঠি নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে। বর্তমান যুগে বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

দ্য ওয়ার্ল্ড উইন্ড এনার্জি কাউন্সিলের প্রকাশিত ২০১৮ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৮ সালে কেবল বায়ুশক্তি কাজে লাগিয়ে বিশ্বে উৎপাদিত হয়েছে মোট প্রায় ৬০০ গিগাওয়াট ক্ষমতার বাণিজ্যিক বিদ্যুত্শত্তি।

নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সৌরশক্তি ও বায়ুশক্তি প্রধান অবলম্বন। এখন পর্যন্ত বায়ুশক্তি কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে চীন সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে। এরপর পর্যায়ক্রমে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ভারত, স্পেন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ব্রাজিল, কানাডা ও ইতালির অবস্থান। ভারতে বায়ুশক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের স্থাপিত উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৩৫ গিগাওয়াট।

চীনের শেনকুয়ান-১ তেমনি এক বিদ্যুেকন্দ্র, যা সমুদ্র উপকূলে ৪৬ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত এলাকায় ৭৩টি উইন্ড টারবাইন থেকে ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষম। যুক্তরাজ্যের নর্থ সি উপকূলে প্রায় ১.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে ২০১২ সালে স্থাপিত হয়েছে ৫০৪ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার ১৪০টি উইন্ড টারবাইন। নেদারল্যান্ডসের সমুদ্র উপকূলে প্রায় ৮৫ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত এলাকায় স্থাপিত ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার জেমিনি বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রটি এখনো এককভাবে বৃহত্তম বায়ুশক্তিচালিত সচল বিদ্যুেকন্দ্র।

মজার কথা হলো, যদিও নেদারল্যান্ডসকে বায়ুকলের দেশ বলা হয়; কিন্তু তারা বিশ্বের প্রথম বায়ুকল আবিষ্কার করেনি। বিশ্বে বায়ুকলের উৎপত্তি নিয়ে বিভিন্ন মত আছে। কারো কারো মতে বিশ্বের প্রথম বায়ুকল আবিষ্কৃত হয়েছিল ২২২-২৮৫ খ্রিস্টাব্দে। সম্ভবত একজন গ্রিক টেসিবিয়াস তা উদ্ভাবন করেছিলেন। তবে প্রাচীনতম পরিচিত বায়ুচালিত শস্য কল এবং জলের পাম্পগুলো পারসিয়ানরা ব্যবহার করেছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। এক হাজার বছর আগে বিখ্যাত ভূগোলবিদ আল-মাসুদি ইরানের সিস্টান প্রবেশ ও বর্তমান আফগানিস্তানের পশ্চিম অংশে বায়ুকলের ব্যবহার দেখেছেন বলে লিখেছেন। সেখানে বায়ুকল দিয়ে বাগান এবং ফসলি জমিতে সেচ দেওয়া হতো।

সে হিসেবে বলা যায়, বায়ুকল মূলত মুসলমানদের আবিষ্কার। গ্রীষ্মকালে পানির উৎসগুলো শুকিয়ে গেলে আরব দেশের বিশাল মরুভূমিতে শক্তির একমাত্র মাধ্যম হয়ে দাঁড়াত বাতাস। কয়েক মাস পর্যন্ত একদিক থেকে অন্যদিকে দ্রুত বেগে বাতাস প্রবাহিত হতো। এই বাতাসের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে উইন্ডমিল সচল থাকত।

ইতিহাসবিদদের মতে, পৃথিবীর প্রথম উইন্ডমিলটি ঘুরেছিল নবম শতাব্দীতে পূর্ব পারস্যে। অনেকের দাবি, এরও আগে সপ্তম শতাব্দীতে খলিফা ওমর (রা.)-এর যুগে বায়ুকল আবিষ্কৃত হয়েছিল। কিন্তু পার্সিয়ান ভূগোলবিদ ইস্তাখরির বর্ণনামতে নবম শতাব্দীর আগে বায়ুকল আবিষ্কৃত হওয়ার বিষয়টি ঐতিহাসিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ।

পারস্যে উইন্ডমিল আবিষ্কৃত হওয়ার প্রায় ৫০০ বছর পরে এসে ১৩ শতাব্দীর দিকে ধীরে ধীরে এ প্রযুক্তি ইউরোপে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বেশি উইন্ডমিল আছে ইউরোপেই। একসময় নেদারল্যান্ডসে এত বেশি উইন্ডমিল ছিল যে তাদের প্রায় প্রতিটি শিল্প কয়েক শতাব্দী ধরে টিকে ছিল উইন্ডমিলের সুবিধা গ্রহণ করে।

শুধু উইন্ডমিলই নয়, তৎকালীন মুসলমানরা বাতাসের গতি কাজে লাগিয়ে তাদের বাড়িঘর ঠাণ্ডা রাখত। ঘরগুলোতে উইন্ড টাওয়ার থাকত। যেগুলো বাইরের বাতাস সংগ্রহ করে ঘরের ভেতর সরবরাহ করত। ঘরগুলো উঠানে সুন্দর করে সাজানো বাগান ছিল এবং ঘরের মধ্যে কক্ষগুলো ছিল সুপরিকল্পিত, ফলে ঘরজুড়ে বয়ে যেত প্রশান্তির হাওয়া।

সূত্র : ancientengrtech.wisc.edu, ইসলামিক টেকনোলজি; আহমদ ওয়াই হাসান ও ডোনাল্ড রাউটলেজ হিল, মুসলিম সভ্যতার ১০০১ আবিষ্কার

 

 

কিউএনবি/আয়শা/২৪ নভেম্বর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/বিকাল ৪:৩৫

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit