বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৩৪ অপরাহ্ন

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সাংগঠনিক রিপোর্ট বলছে বিএনপি শক্তিশালী!

বাদল আহাম্মদ খান ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি ।    
  • Update Time : বুধবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২২
  • ১৭০ Time View
বাদল আহাম্মদ খান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি : ‘সমাবেশ ডেকে মাঠে নেই বিএনপি’, ‘যুবলীগের ধাওয়ায় পালালো বিএনপি’, ‘পুলিশের বাধার মুখে ঘটনাস্থলেই বিএনপি’র সমাবেশ’- ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ও উপজেলা বিএনপিকে নিয়ে এমন খবর সাম্প্রতিককালে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। ওইসব খবরগুলোতে বিএনপি’র দৈন দশার কথাই উঠে আসে। তবে দলটির সাংগঠনিক রিপোর্ট বলছে, তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে বেশ শক্তিশালী! সম্মেলন ও কর্মী সভা করে বেশ কিছু ইউনিটের কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে কেন্দ্রের কাছে পাঠানো ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া আরো কিছু ইউনিট সম্মেলনের জন্য প্রস্তুত ও সম্মেলন করা হবে বলে উল্লেখ আছে ওই রিপোর্টে। 
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপি’র আহবায়ক মো. জিল্লুর রহমান গত ১ অক্টোবর কমিটির অন্তর্ভুক্ত ১৪টি ইউনিটের এ সাংগঠনিক রিপোর্টে স্বাক্ষর করেন ও পরে কেন্দ্রে পাঠান। গত রবিবার দুই পৃষ্ঠার এ সাংগঠনিক রিপোর্টটি কুইক নিউজ  এর হাতে আসে। এরপর বিএনপি’র নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বললে সাংগঠনিক এ রিপোর্ট নিয়ে দলের মধ্যেই দ্বিমত পাওয়া যায়। এমন সাংগঠনিক রিপোর্ট দেওয়ার বিষয়টি যে কয়জন জেনেছেন তাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। কেউ কেউ বলছেন জেলা বিএনপি নিজেদের পিঠ বাঁচাতে সাংগঠনিক রিপোর্টে মিথ্যাচার করেছেন। ওয়ার্ড, ইউনিয়ন পর্যায়ে তো দূরের কথা উপজেলা পর্যায়েও সম্মেলন কিংবা কর্মী সভা ছাড়া কমিটি দেওয়া হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলছেন যে, এ রিপোর্টটিই প্রমাণ করে যে দল হিসেবে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে বেশ এগিয়ে যাচ্ছে। রিপোর্টটিকে তারা যথাযথ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
রিপোর্ট ও নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলাপচারিতা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, জেলার আহবায়ক কমিটির বয়স হতে চলেছে প্রায় দুই বছর। ওই কমিটি গঠনের দুই সপ্তাহ পরই তাদের অধীনস্থ সকল উপজেলা ও পৌরসভা ইউনিট বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। পরে একাধিক উপজেলা কমিটি জেলা কমিটির অনুমোদন, স্থগিত ও প্রত্যাহারের ‘খেলার’ মুখে পড়ে। একাধিক উপজেলায় আংশিক কমিটিতে বছর পার হয়েছে। এদিকে রিপোর্টে জেলা বিএনপি’র আহবায়ক মো. জিল্লুর রহমান উল্লেখ করেছেন, ২০২০ সালের ১৩ নভেম্বর আহবায়ক কমিটি গঠনের পর কোভিডের কারণে নয় মাস বিরতিতে বিভিন্ন ইউনিট সম্পন্ন করার কাজ পরিচালনা করা হয়। জেলায় পাঁচটি পৌরসভার ৪৮টি ওয়ার্ড ও নয় উপজেলার ১০০টি ইউনিয়নে ৮৯০টি ওয়ার্ড। এরমধ্যে তিনটি উপজেলা ইউনিট ও একটি পৌর ইউনিট সম্মেলনের মাধ্যমে গঠন করা হয়। এতে ৮ অক্টোবর পৌর বিএনপি’র সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
রিপোর্টে উপজেলা ওয়ারি বিএনপি’র সাংগঠনিক অবস্থার পৃথক চিত্র তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, নাসিরনগর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও ১১৭টি ওয়ার্ডের কমিটি কর্মীসভা ও সম্মেলনের মাধ্যমে গঠন করা হয়েছে। অচিরেই উপজেলা সম্মেলনের  তারিখ ঘোষণা করা হবে। গত ২৩ মার্চ সম্মেলনের মাধ্যমে সরাইল উপজেলা বিএনপি’র আংশিক কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। ওই উপজেলার নয়টি ইউনিয়ন ও ৮১টি ওয়ার্ড বিএনপি’র কমিটি কর্মীসভা ও সম্মেলনের মাধ্যমে করা হয়েছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ আছে। আশুগঞ্জে গত ২৩ জুলাই সম্মেলন করে আংশিক কমিটি গঠন এবং বিভিন্ন সময়ে আটটি ইউনিয়ন ও ৭২টি ওয়ার্ড কমিটি কর্মীসভা ও সম্মেলনের মাধ্যমে গঠন করা হয় বলে উল্লেখ করা হয়। বিজয়নগরের বিষয়ে উল্লেখ আছে যে ২০২১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ঘোষিত কমিটি চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি স্থগিত ঘোষণা করা হয়। ১৩ মার্চ আবার এ স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। এ উপজেলাতেও কর্মী সভা ও সম্মেলনের মাধ্যমে ১০ ইউনিয়ন ও ৯০টি ওয়ার্ড কমিটি গঠন করা হয়। 
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর বিএনপি চলতি বছরের ২৫ মার্চ গঠনের কথা সাংগঠনিক রিপোর্টে উল্লেখ থাকলেও কি প্রক্রিয়ায় করা হয়েছে সেটা বলা হয়নি। ১২টি ওয়ার্ডের কমিটি গঠনে কর্মী সভা ও সম্মেলনের কথা বলা আছে রিপোর্টে। সদর উপজেলা বিএনপি’র বিষয়ে রিপোর্টে বলা আছে, ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর অনুমোদনের পর চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি স্থগিত ঘোষণা করা হয়। ১৬ মার্চ আবার সেই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। এ উপজেলায় ১১ ইউনিয়নের মধ্যে ও ৯৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১০টি ইউনিয়নের আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৩৬টি ওয়ার্ড ও চারটি ইউনিয়ন কর্মীসভা ও সম্মেলনের মাধ্যমে করা হয়েছে।
জেলার কসবা উপজেলা বিএনপি ২০২১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি অনুমোদন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে সাংগঠনিক রিপোর্টে। এখানেও ১০টি ইউনিয়ন ও ৯০টি ওয়ার্ড সম্মেলন ও কর্মীসভার মাধ্যমে গঠন হয়। ওই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি অনুমোদন পাওয়া কসবা পৌর বিএনপি’র নয়টি ওয়ার্ড কর্মীসভা ও সম্মেলনের মাধ্যমে গঠন হওয়ায় সম্মেলনের জন্য প্রস্তুত আছে বলে উল্লেখ করা হয়। ২০২১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি আখাউড়া উপজেলা ও একই বছরের ১৪ জানুয়ারি পৌর বিএনপি’র কমিটি অনুমোদন দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয় রিপোর্টে। উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন ও ৪৫ টি ওয়ার্ড এবং পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ড কমিটি গঠন হওয়ায় সম্মেলনের জন্য প্রস্তুত বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।
সাংগঠনিক রিপোর্ট অনুযায়ি, এ বছরের ৩০ জুলাই সম্মেলনের মাধ্যমে নবীনগর উপজেলা বিএনপি’র আংশিক কমিটি গঠন করা হয়। উপজেলার ২১টি ও ১৭৯ টি ওয়ার্ড কর্মী সভা ও সম্মেলনের মাধ্যমে গঠন হয়েছে। এ উপজেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের অপেক্ষায় রয়েছে। নবীনগর পৌর বিএনপি’র কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয় ২০২১ সালের ১১ ডিসেম্বর। ৮ অক্টোবর সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা আছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে সাংগঠনিক রিপোর্টে। ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর বাঞ্ছারামপুর উপজেলা বিএনপি’র অনুমোদন দেওয়া হয় বলে রিপোর্টে উল্লেখ আছে। ১৩টি ইউনিয়ন ও ১১৭টি ওয়ার্ড কমিটি কর্মীসভা ও সম্মেলনের মাধ্যমে গঠন হওয়ায় উপজেলা সম্মেলন জন্য প্রস্তুত। বাঞ্ছারামপুর পৌর বিএনপি’র কমিটি ২০২১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর অনুমোদন দেওয়া হয়। নয়টি ওয়ার্ড কর্মী সভা ও সম্মেলনের মাধ্যমে করা হওয়া সম্মেলনের জন্য পৌর বিএনপি প্রস্তুত।
আখাউড়া এক ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি বলেন, ‘আমি আহবায়ক ছিলাম। আমাকে সভাপতি করা হয়েছে। তবে সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি। আমরা কয়েকজন এমনিতেই অনানুষ্ঠানিকভাবে বসে আলোচনা করে কয়েকজনকে দিয়ে কমিটি একটি করি।’নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপি’র এক নেতা বলেন, ‘এত এত সম্মেলন করে কমিটির গঠনের মতো অবস্থানে নেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিএনপি। মূলত নিজেদের পদ রক্ষা করতে একটি সাংগঠনিক রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে যাতে মিথ্যাচার ভরা। তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলাপ করলে এর সত্যতা বেরিয়ে আসবে।’  
কথা হলে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এ খালেক বলেন, ‘আমার উপজেলাতে ওয়ার্ড কিংবা ইউনিয়ন পর্যায়ে কোনো সম্মেলন হয়েছে বলে আমার জানা নেই। আমি যতদূর জানি একজনের স্বাক্ষর অর্থাৎ জেলা বিএনপি’র আহবায়কের স্বাক্ষরে বিভিন্ন কমিটি দেওয়া হয়েছে। উপজেলা সম্মেলনের একাধিক তারিখ করেও তারা করতে পারেননি এবং আজেবাজে লোকজন দিয়ে কমিটি করায় তারা সেটা এলাকায় করতেও পারবেন না।’ 
জেলা বিএনপি’র আহবায়ক মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা সম্মেলন ও কর্মীসভার মাধ্যমে কমিটি গঠন করেছেন। বিভিন্ন বাধার মুখেই তারা সম্মেলন ও কর্মীসভা করেন। আর কিছু কমিটি করা বাকি রয়েছে যেগুলো কর্মীসভা ও সম্মেলনের মাধ্যমে করা হবে। এ বিষয়ে সাংগঠনিক এক রিপোর্ট কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। আমি মনে করি ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে বিএনপি এখন অনেক শক্তিশালী।’        

 

 

কিউএনবি/আয়শা/২৬ অক্টোবর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/সন্ধ্যা ৬:২১

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

December 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit