ডেস্ক নিউজ : পটুয়াখালীর বাউফলে ভয়াল তেঁতুলিয়ার করাল গ্রাসে নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত শত বছর বয়সী নারী রোকেয়া বেগম। সব হারিয়ে তেঁতুলিয়ার পাড়ে ঝুপড়িতে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তার। নেই স্বামী, ছেলে-মেয়ে ও আত্মীয়স্বজন। হাতে লেখা সাদা কাগজে প্ল্যাকার্ড নিয়ে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও পুনর্বাসনের দাবিতে প্রায় এক কিলোমিটার প্রতীকী মানববাঁধ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন রোকেয়া বেগম।
যুগান্তরকে রোকেয়া বেগম বলেন, আমার কেউ নেই, একটা নাতি নিয়ে নদীর পাড়ে ঝুপড়িতে থাকি। ভিক্ষা করে খাই। দুইবার ঘরবাড়ি নদীতে নিয়ে গেছে। আমারে একটা ঘর দেন, মরার আগে একটু শান্তি দেন। আমি জন্ম থেকে কষ্ট করছি। শুধু রোকেয়া বেগম নয়, ৫ গ্রামের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ আজ উদ্বাস্তু। তাদের নিয়ে কখনো কি ভাবছে কেউ? ভাবলে কি আজও তারা অবহেলিত থাকে, এমন প্রশ্ন স্থানীয়দের।
শনিবার (৮ অক্টোবর) সকালে নাজিরপুর ইউনিয়নের ৫টি গ্রামের ভিটাবাড়ি হারা সাধারণ মানুষ তেঁতুলিয়া নদীর পাড়ে প্রতীকী মানববাঁধ তৈরি করে এ কর্মসূচি পালন করে। নাজিরপুর ইউপি চেয়ারম্যান এসএম মহসিন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সেলিম মাতুব্বর, আবুল হোসেন মীর ও বিএনপি নেতা প্রফেসর জসীম উদ্দিনসহ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরা এবং হাজার হাজার নারী-পুরুষ এতে অংশগ্রহণ করেন।
একই ইউপির ৫নং ওয়ার্ডের ক্ষতিগ্রস্ত নারী রুপা (৬৩) বলেন, প্রতি বছর নিজেদের ঘরবাড়ি নদীতে নিয়ে যায়, এখন ছাপড়া ঘরে থাকি। আমাদের কি শান্তিতে বসবাসের অধিকার নেই। যদি থাকে তাহলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন, আমাদের দিকে তাকান।
আরেক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মো. সাকিব হোসেন জানান, নদীভাঙন এলাকার মানুষ হয়েও আমরা শতভাগ শিক্ষিত হয়েছে কিন্তু সুফল পাচ্ছি না। কারণ আমাদের পরিবার নিয়ে থাকার মতো ঘরই নেই। কয়েক বছর পর পরই ঘর ভাঙতে হয়। আমরা টেকসই বেড়িবাঁধ ও পুনর্বাসন চাই।
নাজিরপুর ইউপি চেয়ারম্যান এসএম মহসিন বলেন, তেঁতুলিয়া নদীর করাল গ্রাসে নদী ভাঙনের শিকার ৫ গ্রামের মানুষ আজ নিঃস্ব। তারা বসতভিটা হারিয়ে আজ উদ্বাস্তু। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য টেকসই বেরি বাঁধ নির্মাণ ও পুনর্বাসনে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
এ বিষয়ে পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (অ. দা.) রেজা আহম্মেদ বলেন, নাজিরপুর ইউনিয়নের ভাঙন এলাকার জন্য স্থায়ী বাঁধ তৈরির জন্য এখনো কোনো প্রস্তাবনা পাঠানো হয়নি। তবে জরুরি জিওব্যাগের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছিল, কিন্তু অনুমোদন হয়নি। অনুমোদন হলে আমরা ভাঙন প্রতিরোধে কিছু কাজ শুরু করব।
কিউএনবি/আয়শা/০৮ অক্টোবর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/সন্ধ্যা ৬:৫৮