রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১১:১০ অপরাহ্ন

ঢাকায় তিন বাহিনী প্রধানসহ শীর্ষ প্রতিনিধিদের নিয়ে জরুরি বৈঠক

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২
  • ৯১ Time View

ডেস্ক নিউজ : মিয়ানমারে সামরিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকামী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের লড়াই আরো জোরালো হয়েছে। গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়েছে মিয়ানমারের বিভিন্ন অঞ্চলে। এমন পরিস্থিতিতে সীমান্তে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করেছে বাংলাদেশ। সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ও উপকূলরক্ষী বাহিনী কোস্ট গার্ডের পর যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীও।

মিয়ানমার থেকে ছোড়া গোলা বাংলাদেশে এসে পড়ায় গত এক মাসে চারবার মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে প্রতিবাদ জানিয়েছে সরকার। মিয়ানমার অভিযোগ করেছে, রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াই করছে আরাকান বাহিনী ও আরসা। ওই দুই গোষ্ঠীর ঘাঁটি ও পরিখা আছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশ ওই দাবি প্রত্যাখ্যান করার পাশাপাশি বিশ্বসম্প্রদায়কে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে সীমান্ত পরিস্থিতি ও রোহিঙ্গা সংকট সম্পর্কে জানাচ্ছে। একইভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলার।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তিন বাহিনী প্রধানের জরুরি বৈঠক

সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে গত রবিবার রাষ্ট্রের সব সংস্থার উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক হয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। বৈঠকের পর ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) খুরশেদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, বিজিবি ও কোস্ট গার্ডকে সজাগ থাকতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে জনবলও বৃদ্ধি করতে বলা হয়েছে। নতুন করে যাতে কোনো রোহিঙ্গা না ঢুকে পড়ে,  এ জন্য সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে।

সেনা মোতায়েন করা হচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব বলেন, আপাতত তাঁরা এর প্রয়োজন দেখছেন না।

ওই বৈঠকের তিন দিন পর গতকাল বুধবার বিকেলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের আকস্মিক বৈঠক হয়েছে। সেখানে মন্ত্রিপরিষদসচিবসহ সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রধানসহ রাষ্ট্রের অন্যান্য বাহিনী ও সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের বলেন, যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় সেনাবাহিনীসহ সবাই সব সময় প্রস্তুত। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী দেশে নেই। আমরা একটা পরিস্থিতি দেখছি। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী আরাকান আর্মির সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত। সেই যুদ্ধের গোলাবারুদ সীমান্ত পেরিয়ে আমাদের দেশে এসে পড়ছে। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটছে। আমাদের জনগণ আতঙ্কিত হয়ে রয়েছে যে কী ঘটছে। সে জন্য আমরা এই সভাটি করেছি। সেনাবাহিনীসহ আমাদের সবাই জানিয়েছে, যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সব সময় তারা প্রস্তুত থাকে। এখনো তারা প্রস্তুত আছে। ’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি, আমরা কাউকে ‘কাউন্ট’ করি না। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় সেনাবাহিনীসহ সবাই সব সময় প্রস্তুত রয়েছে। ” 

যুদ্ধ চায় না বাংলাদেশ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সপ্তাহে লন্ডন সফরকালে বলেছেন, সীমান্তে মিয়ানমারের উসকানি সত্ত্বেও বাংলাদেশ সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন করছে।

ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব খুরশেদ আলম গত সোম ও মঙ্গলবার বিদেশি কূটনীতিকদের পরিস্থিতি তুলে ধরার সময় বলেছেন, বাংলাদেশ অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে মিয়ানমারের সমস্যা সহ্য করছে। বাংলাদেশ যুদ্ধ চায় না।

ঢাকায় গতকাল বিকেলে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক শেষেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, শান্তির পক্ষে বাংলাদেশের যে অবস্থান, তা শেষ পর্যন্ত ধরে রাখবে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়—এটিই আমাদের জাতীয় নীতি। আমরা কখনোই যুদ্ধকে উৎসাহিত করি না। ’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যুদ্ধের মতো পরিস্থিতিও আমাদের এখানে আসেনি। মিয়ানমার তাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে যুক্ত। জোর করে রোহিঙ্গাদের আমাদের দেশে পাঠানো ছাড়া তাদের সঙ্গে আর কোনো বৈরী আচরণ নেই। ’

মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বীরের জাতি, আমরা সব সময় প্রস্তুত আছি। উসকানি দেওয়ার অনেকগুলো প্রচেষ্টা, কে বা কারা করেছে, এগুলো আমাদের জানা নেই। আমরা যেটুকু দেখছি, তারা নিজেরা নিজেরা যুদ্ধ করছে। সীমান্তে যেটা হচ্ছে, এটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সেখানে বাংলাদেশের কোনো ভূমিকা নেই। ’

সীমান্ত এলাকা থেকে লোকজন সরানোর প্রস্তুতি

কক্সবাজার থেকে আমাদের বিশেষ প্রতিনিধি জানান, গতকাল সকাল ১০টার দিকে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের তুমব্রু সীমান্তের ৩৪/৩৫ সীমান্ত পিলারের বিপরীতে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে দুটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। বিকেল সোয়া ৫টার দিকে আরো একটি বিকট শব্দ হয়েছে।

গতকাল সন্ধ্যায় ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আনোয়ারুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে জানান, সীমান্তের বাসিন্দাদের অন্যত্র সরানোর বিষয়টি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। পরিস্থিতি খারাপ হওয়া মাত্র তাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হবে।

অপরদিকে উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বাবুল মিয়া জানান, গত মঙ্গলবার সকালে ও রাতে পালংখালী আনজুমানপাড়া সীমান্তের ওপারে গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।

মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধের বিস্তৃতি

বিবিসির খবরে জানানো হয়, মিয়ানমারের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সামরিক বাহিনী বা সরকারের সংঘাতের ইতিহাস পুরনো। তবে এখন তা আরো বিস্তৃত হয়েছে। ক্ষুদ্র জাতিসত্তা বা বিচ্ছিন্নতাপন্থী  গ্রুপগুলোর সঙ্গে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে শুরু করেছেন গণতন্ত্রপন্থী যোদ্ধারা।

সীমান্ত বা দূরবর্তী অঞ্চলগুলো একসময় সংঘাতপ্রবণ হলেও এখন সেই সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলেও।

পর্যবেক্ষকদের আশঙ্কা, মিয়ানমারে এখন যে অবস্থা চলছে, এতে অচিরেই দেশটি একটি পুরোপুরি গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে। মিয়ানমারজুড়ে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে রাজধানী নেপিডো ও আশপাশের শহরগুলোয় রাতে কারফিউ জারি করেছে সামরিক জান্তা। মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত শহরে চলাফেরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একসঙ্গে চারজনের বেশি জমায়েত, বিক্ষোভ করা প্রকাশ্যে জান্তাবিরোধী বক্তব্য দেওয়াও নিষিদ্ধ।

থাইল্যান্ডভিত্তিক মিয়ানমারের সংবাদপত্র ইরাওয়ার্দি জানিয়েছে, কারফিউয়ের পাশাপাশি রাজধানীতে বাংকার তৈরি করছে সামরিক বাহিনী। এ ছাড়া পুলিশের নতুন নতুন চৌকি তৈরি করা হয়েছে এবং নিরাপত্তারক্ষীদের সংখ্যা অনেক বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ করে, যেসব এলাকায় সামরিক বাহিনীর সদস্য বা পরিবার বসবাস করে, সেসব এলাকায় চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।

মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ও বার্তা সংস্থাগুলোর খবর অনুযায়ী, সহিংসতাপ্রবণ এলাকাগুলো ছাড়াও মিয়ানমারের অনেক শহরে কারফিউ জারি করে মানুষজনের চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে রেখেছে সামরিক বাহিনী। গত মঙ্গলবার তারা নতুন একটি আদেশ জারি করেছে। এর ফলে সামাজিক মাধ্যমে সরকারবিরোধী কোনো লেখাকে ‘লাইক’ বা ‘শেয়ার’ করলেও কারাদণ্ড হতে পারে।

এক হচ্ছে শীর্ষ সাত সশস্ত্র জাতিগোষ্ঠী

বিবিসি জানায়, মিয়ানমারের শীর্ষ সাত সশস্ত্র জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরা গতকাল বুধবার ওয়া রাজ্যের পাংসাংয়ে বৈঠকে বসেছেন। ২০২০ সালে কভিড মহামারি শুরু ও ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক জান্তা মিয়ানমারের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার পর এটিই তাঁদের প্রথম বৈঠক। এসব গোষ্ঠীর প্রায় ৩০ হাজার সদস্য রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

আরাকান আর্মির একজন মুখপাত্র বলেছেন, প্রয়োজনের তাগিদেই তাঁরা বৈঠকে বসেছেন। তাঁদের লক্ষ্য নিজেদের মধ্যে একতা আরো জোরদার করা।

বিবিসির বার্মিজ সার্ভিস জানিয়েছে, এখন উত্তর রাখাইন রাজ্য, চীন রাজ্য, শান ও কাচিন এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করে যাচ্ছে বার্মিজ সেনাবাহিনী। তারা ভারী অস্ত্র ও ট্যাংকের সহায়তায় অনেকগুলো শহরে প্রবেশ করতে শুরু করেছে। তারা সেখানে একাধিক গ্রাম পুড়িয়ে দিয়েছে এবং গ্রামে গ্রামে অভিযান চালাচ্ছে।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/২২ সেপ্টেম্বর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/সকাল ৯:৪০

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit