রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১১:০৯ অপরাহ্ন

বিদেশিদের হাতে যাচ্ছে গ্রাউন্ড-কার্গো হ্যান্ডলিং

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২২
  • ৯৭ Time View

ডেসক্ নিউজ : বিদেশিদের হাতে যাচ্ছে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড ও কার্গো হ্যান্ডলিং কার্যক্রম। শুধু গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং নয় পর্যায়ক্রমে পুরো টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে ছেড়ে দেওয়া হবে। এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচকের) পরিচালনা পর্ষদ। ১১ আগস্ট বেবিচকের ২৮১তম বোর্ড সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।

বিমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, শাহজালাল বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের নানা অব্যবস্থাপনার কারণে যাত্রীদের ভোগান্তি কাটছে না। নানা চেষ্টা-তদবির আর শত শত কোটি টাকা খরচ করেও কোনো লাভ হচ্ছে না যাত্রীদের। উলটো বিভিন্ন কেনাকাটায় হচ্ছে দুর্নীতি আর লুটপাট। গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং থেকে আয় নিয়েও চলছে ব্যাপক অনিয়ম। দেরিতে ফ্লাইট ছাড়ার ঘটনা যেমন ঘটছে, তেমনি দেশে আসা যাত্রীদের লাগেজ পেতেও দেরি হচ্ছে। এছাড়া হরহামেশা হচ্ছে লাগেজ কাটাছেঁড়া আর চুরি। বিমানের স্টাফরা মাথা থেকে বেল্টে আছড়ে ফেলছে লাগেজ। এ কারণে প্রতিনিয়ত ভেঙে যাচ্ছে লাগেজ ও ভেতরে থাকা গুরুত্বপূর্ণ মালামাল। লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড বিভাগ থেকে পাওয়া অধিকাংশ লাগেজে গুরুত্বপূর্ণ ও দামি মালামাল থাকে না।

জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, মূলত গ্রাউন্ড ও কার্গো হ্যান্ডলিং নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নানা অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা আর যাত্রী ভোগান্তির কারণে থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড ও কার্গো হ্যান্ডলিং কার্যক্রম আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে নির্বাচন করা হবে। বিমানকে বহুবার বলা হয়েছে, এখনো বলা হচ্ছে কিন্তু তারা শুনছে না। এটা খুবই দুঃখজনক। তাদের যথেষ্ট কঠোরভাবে বলা হয়েছে একটি লাগেজও যাতে নষ্ট না হয়। লাগেজটাকে যেন মানুষের মতো ফিল (অনুভব) করা হয়। প্রাণীর মতো ফিল করা হয়। কিন্তু বারবারই তারা এটি ভুলে যাচ্ছে। ভুলে যাওয়ার কারণ হলো, তাদের প্রতি প্রপার (সুষ্ঠু) সুপারভিশন নেই। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের কার্গো হ্যান্ডলিং দুবাইভিত্তিক ডানাটাকে দেওয়া হয়েছে। সেখানে সবকিছু সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে। কোনো যাত্রী ভোগান্তি নেই। সরকারের আয়ও বেড়েছে।

চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘থার্ড টার্মিনাল উদ্বোধনের পর আমরা লাগেজ হ্যান্ডলিং, মালামাল লোড-আনলোডসহ টার্মিনালের যাবতীয় অপারেশনাল কাজ বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে প্রশাসনিক, নিরাপত্তা, ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস ব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের হাতেই থাকবে। বিশ্বের উন্নত বিমানবন্দরে এ ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। এতে আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি যাত্রীরা দ্রুততার সঙ্গে সেবা পাবেন এবং যে কোনো কর্মকাণ্ডের বিষয়ে জবাবদিহিতা থাকবে।’ এ বিষয়ে দুই সদস্যের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। পরামর্শক প্রতিবেদন হাতে পেলেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে। সর্বোপরি সরকার যে সিদ্ধান্ত দেবে, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে থার্ড টার্মিনাল প্রকল্পের আওতায় থাকা আমদানি ও রপ্তানি টার্মিনালের কার্গো হ্যান্ডলিং ইকুইপমেন্ট সরবরাহের শুরুতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে প্রকল্পের বিদেশি ঠিকাদার এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়ামের (এডিসি) বিরুদ্ধে। অভিযোগ প্রায় ৪শ কোটি টাকার এই প্রকল্পটি দেওয়া হচ্ছে দরপত্রের শর্ত লঙ্ঘন করে একটি বিদেশি কোম্পানিকে। মূল দরপত্রের শর্তে আছে বিশ্বের ৩টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কার্গো ও গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সিস্টেম (ইকুইপমেন্ট) সরবরাহের অভিজ্ঞতা আছে-এমন কোম্পানিকে দিতে হবে এ কাজ। কিন্তু এডিসি প্রাথমিকভাবে এমন একটি কোম্পানিকে সিলেক্ট করেছে যাদের মাত্র একটি বিমানবন্দরে এ সিস্টেম সরবরাহের অভিজ্ঞতা আছে। এডিসির বক্তব্য হচ্ছে-দরপত্রে অপর কোনো প্রতিষ্ঠান না থাকায় তারা কোরিয়াভিত্তিক কোম্পানিকে প্রাথমিক তালিকায় রেখেছে। যদিও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্বের ৭০টি বিমানবন্দরে এই সিস্টেম সরবরাহের অভিজ্ঞতা আছে এমন একটি জার্মানভিত্তিক কোম্পানিকে দাম বেশির অজুহাত দেখিয়ে বাদ দেওয়া হয়েছে। এডিসির বিরুদ্ধে অভিযোগ-তারা ৪শ কোটি টাকার এই প্রকল্পটি ১৯টি গুরুত্বপূর্ণ কম্পোনেন্টের মধ্যে ফেলেছে। এ কারণে বেবিচকের পক্ষেও কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই। তবে প্রকল্প সংশ্লিস্ট একজন শীর্ষ কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, প্রকল্পটি ১৯টি কম্পোনেন্টের একটি হলেও শর্ত ভায়োলেশন করে কাউকে ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়ার সুযোগ নেই। এই প্রকল্পটি যাদের দেওয়া হবে তাদের অবশ্য ৩টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইকুইপমেন্ট সরবরাহ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। অন্যথা কোনো সুযোগ নেই।

জানা গেছে, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের জন্য বাংলাদেশ বিমানের পর্যাপ্ত জনবল ও যন্ত্রপাতির ঘাটতি রয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ কাজের জন্য রাতে ৮ ঘণ্টা ফ্লাইট চলাচল বন্ধের ঘোষণার পর শাহজালাল বিমানবন্দরে বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি হয়। টার্মিনালের ভেতরে-বাইরে, এয়ারলাইনসের চেক-ইন কাউন্টার, ইমিগ্রেশন থেকে বোর্ডিং ব্রিজ পর্যন্ত সব ক্ষেত্রেই তৈরি হয় চরম বিশৃঙ্খলা। প্রতিটি ফ্লাইট ছাড়তে দেরি হয়। পরে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়। কিন্তু এখনো পুরোপুরি ঠিক হয়নি। বোর্ডিং ব্রিজ না পেয়ে বে-এরিয়াতে পার্ক করে অপেক্ষায় থাকতে হয় উড়োজাহাজগুলোকে। উড়োজাহাজ থেকে নেমে বিমানবন্দরের ভেতরে লাগেজ বেল্ট এলাকায় আসতে বাস স্বল্পতার কারণে যাত্রীদের বিলম্বের ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত।

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ও বিভিন্ন এয়ারলাইনস কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিটি এয়ারলাইনসের যাত্রীদের চেক-ইন কাউন্টার সামলানো, বোর্ডিং, উড়োজাহাজে মালামাল ওঠানো-নামানো, যাত্রীসেবা, প্রকৌশল সেবা ও জিএসই (গ্রাউন্ড সার্ভিস ইকুইপমেন্ট) সেবাকে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা বলে। এজন্য প্রতিটি এয়ারলাইনস নির্দিষ্ট হারে ফি দেয় বিমানকে। কিন্তু বিমানের পর্যাপ্ত জনবলের ঘাটতি ছাড়াও যন্ত্রপাতি ও তদারকির অভাবে জিএসএ কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। বিদেশি এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ জানায়, বিমানের জনবল না থাকায় তারা নিজদের স্টাফ দিয়ে বোর্ডিং কার্ড ইস্যু করাচ্ছে। অথচ এটা করার কথা বিমানের। শুধু তাই নয়, নিজদের স্টাফ দিয়ে কাজ করালেও এজন্য প্রতি ফ্লাইটে সেবাভেদে ২ হাজার ২০০ থেকে ৫ হাজার ৭০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত বিমানকে দিতে হয়। অহেতুক এ টাকা নিয়ে যাচ্ছে বিমান।

বেবিচকের ২৮১তম বোর্ড সভায় কার্যবিবরণী সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি খাতের মাধ্যমে শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল পরিচালনার বিষয়ে এয়ারপোর্ট কাউন্সিল ইন্টারন্যাশনালকে (এসিআই) দিয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত হয়। বলা হয়, তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণকাজ ২০২৩ সালের শেষ দিকে সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। টার্মিনালটি নির্মাণ শেষ হলে বিমানবন্দরে যাত্রী ও কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের সার্বিক সক্ষমতা দ্বিগুণের বেশি হবে।

সূত্র জানায়, বেবিচকের অনুরোধে দুটি বিদেশি সংস্থা সম্ভাব্যতা যাচাই করার বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। তাদের কাছ থেকে দুটি প্রস্তাবও পাওয়া গেছে। ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অরগানাইজেশন (আইকাও) সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য ৭ লাখ ৫১ হাজার ৩০০ ডলার ও এসিআই আড়াই থেকে সাড়ে ৩ লাখ ডলার বাজেটের পৃথক প্রস্তাব পাঠিয়েছে।

শাহজালাল বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক মানের নতুন এই টার্মিনালটির আয়তন হবে ২২ দশমিক ৫ লাখ বর্গফুট। বর্তমানে শাহজালাল বিমানবন্দর দুটি টার্মিনালে ১০ লাখ বর্গফুট স্পেস রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বিমানবন্দরের বর্তমান যাত্রী ধারণক্ষমতা ৮০ লাখ থেকে বেড়ে ২ কোটি হবে এবং কার্গো ক্যাপাসিটি বর্তমান দুই লাখ টন থেকে বেড়ে পাঁচ লাখ টন হবে। তিন তলার টার্মিনাল ভবনটির আয়তন ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার। তৃতীয় টার্মিনালে ২৪টি বোর্ডিং ব্রিজের ব্যবস্থা থাকলেও প্রকল্পের প্রথম ধাপে ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ চালু করা হবে। বহির্গমনের জন্য ১৫টি সেলফ সার্ভিস চেক ইন কাউন্টারসহ ১১৫টি চেক ইন কাউন্টার থাকবে। ১০টি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট কন্ট্রোল কাউন্টারসহ ৬৬টি ডিপারচার ইমিগ্রেশন কাউন্টার থাকবে।

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, বর্তমানে প্রতিদিন ২৭টি এয়ারলাইনসের ১৩০ থেকে ১৫০টি ফ্লাইট শাহজালাল বিমানবন্দরে ওঠানামা করে। এসব ফ্লাইটে প্রায় ২০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন। এই বিপুলসংখ্যক যাত্রী ও এয়ারলাইনসকে প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়ার জন্য এখনই বিমানের পর্যাপ্তসংখ্যক জনবল ও সরঞ্জাম নেই। থার্ড টার্মিনাল চালু হলে লেজেগোবরে অবস্থা তৈরি হবে।

বিমান সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে শাহজালাল বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন কাজ করছেন। আর হাইলোডার, ট্রান্সপোর্টার, ডলি, ট্রলি, টোয়িং ট্রাক্টর, হুইলচেয়ারসহ ১৮ ধরনের দুই শতাধিক যন্ত্রপাতি আছে। তারপরও পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। জানা গেছে, অধিকাংশ কর্মীই কাজ করছে না।

শাহজালাল বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং অব্যবস্থাপনা নিয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রণালয় ১৩ ডিসেম্বর বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) এক চিঠিতে জানায়, বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ব্যবস্থাপনায় লোকবল ও সরঞ্জাম (ইকুইপমেন্ট) সংকট চলছে। এর কার্যক্রম তদারকি ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অভাবও দেখা গেছে। সুষ্ঠু পরিকল্পনা না থাকায় বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ব্যবস্থাপনা স্থবির হয়ে পড়েছে। এ চিঠির পর চলতি বছরের প্রথমদিকে বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়। তবে এখন আবার অব্যবস্থাপনা বেড়েছে।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/১১ সেপ্টেম্বর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/দুপুর ১২:৫৫

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit