সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫, ০২:৩৬ অপরাহ্ন

সফর মাসের তাৎপর্য

শহিদ আহমেদ খান সাবের,সিলেট প্রতিনিধি
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২
  • ১০৯ Time View

শহিদ আহমেদ খান সাবের,সিলেট প্রতিনিধি : ১৪৪৪ হজিরির সফর মাস শুরু হয়েছে। হিজরি চান্দ্রবর্ষের দ্বিতীয় মাস সফর। আরবি শব্দ ‘সফর’-এর আভিধানিক অর্থ হলো- বিবর্ণ, দীপ্তিহীন, ফ্যাকাশে, হলদেটে ইত্যাদি। বিখ্যাত আরবি অভিধান ‘লিসানুল আরব’-এর ভাষ্য মতে, প্রাচীনকালে আরব্য উপদ্বীপে সফর মাসে শুকনো আবহাওয়া বিরাজ করত, খরা দেখা দিত এবং মাঠ-ঘাট শুকিয়ে বিবর্ণ তামাটে বর্ণ ধারণ করত; যার পরিপ্রেক্ষিতে ঐ অঞ্চলের মানুষ দুর্ভিক্ষ ও খাদ্যাভাবের সম্মুখীন হতো এবং নিরন্ন মানুষগুলোর মুখাবয়ব রক্তশূন্য ও ফ্যাকাশে হয়ে যেত। তাই তারা সেই সময়কার সার্বিক অবস্থার সঙ্গে মিল রেখে এই মাসের সঙ্গে একটি বাড়তি বিশেষণ যোগ করে বলতেন—‘আস্ সাফারুল্ মুসাফ্ফার’ অর্থাৎ ‘বিবর্ণ সফর মাস’। তাছাড়া আইয়্যামে জাহিলিয়্যাতের যুগে আরব্য বেদুইনরাও এই মাসকে দুঃখ-জ্বরাগ্রস্ত ও অশুভ মাস বলে মনে করত। তারা এ মাসের নতুন চাঁদ দেখা থেকে বিরত থাকত এবং দ্রুত মাস শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করত। ইসলামি শরিয়তে এর কোনো ভিত্তি নেই। কোনো স্থান, সময়, বস্তু কিংবা কর্মকে অশুভ অথবা অমঙ্গলময় বলে মনে করা ইসলামি বিশ্বাসের ঘোর পরিপন্থি এবং এটি একটি কুসংস্কার। রসুল (স) এসব মনগড়া বিশ্বাসের মূলে কুঠারাঘাত করে ইরশাদ করেন, ‘ইসলামে কোনো অশুভ বা অকল্যাণকর যাত্রা নেই।’ (সহিহ্ বুখারি) তদুপরি বর্তমান সময়েও কতিপয় মানুষ মনে করে থাকে যে, সফর মাস বালা-মুসিবতের মাস।

এ মাসে বিবাহ-শাদি থেকে শুরু করে যে কোনো শুভ কাজ সম্পাদন করাকে অমঙ্গলজনক বলে বিশ্বাস করে তারা। তবে মুহাদ্দিসিনে কিরামগণ এ বিষয়ে একমত যে সফর মাস সম্পর্কে এসব বানোয়াট কথা একেবারে ভিত্তিহীন ও নির্জলা মিথ্যা। বিভিন্ন জাল ও যয়িফ হাদিসে বলা হয়েছে, বুধবার অশুভ এবং যে কোনো মাসের শেষ বুধবার আরও বেশি অশুভ। আর সফর মাস যেহেতু অশুভ সেহেতু সফর মাসের শেষ বুধবার বছরের সবচেয়ে বেশি অশুভ দিন; এগুলো সবই মনগড়া ও ভিত্তিহীন কথা।অভাবে ধৈর্য ও তাড়া থেকে মুক্তির আমল : ইসলামি শরিয়াহ অনুযায়ী বছরের ১২টি মাসের মধ্যে চারটি মাস (জিলকদ, জিলহজ, মুহররম ও সফর) অতি সম্মানিত বা হারাম এবং এ চারটি মাসে যে কোনো ধরনের অন্যায়, ঝগড়া-ফ্যাসাদ, হত্যাযজ্ঞ তথা সব প্রকার পাপকার্য করা গুরুতর অপরাধ ও অবৈধ। এ চারটি মাস ব্যতীত বাকি আটটি মাসও মহান আল্লাহর সৃষ্ট এবং এ মাসগুলোও কম সম্মানিত নয়। সার্বিক গুণাগুণ, বৈশিষ্ট্য ও আমলের দিক থেকে বিশেষ করে রয়েছে শাবান, রমজান ও শাওয়াল মাসের প্রথমাংশের আমল। রয়েছে প্রত্যেক মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের আইয়্যামে বি’যের রোজা পালন, যা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।

মূলত মানুষ ইসলামি শরিয়তের বিধিবিধান অনুসরণ করে যদি পুরো মাস বা বছরব্যাপী নেক আমল করে থাকে তাহলে তার সকল দিন, মাস, বছর সবই আল্লাহ্ তাআলার নিকট মঙ্গলময় ও ফজিলতপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়। আর তখন তাতে অশুভত্ব বা অমঙ্গলময় বলতে কিছুই থাকে না। আর যদি তারা মহান আল্লাহর দেওয়া বিধান ও তার রসুলের অনুসৃত রীতিনীতি ছেড়ে মনগড়া মতে জীবন যাপন করে তখন দিন, মাস, বছর কেন, তার পুরো জীবনটাই অশুভ ও অমঙ্গল হয়ে যায়।আল্লাহর নৈকট্য লাভের যত মাধ্যম : তাই পবিত্র সফর মাসেও অধিক হারে নেক ‘আমল করলে অধিক হারে সাওয়াবের ভাগী হওয়া যাবে। যেমন—আল্লাহ্ তাআলা কোরআনুল করিমের সুরা কাসাসের ৮৪ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি পুণ্যকর্ম সম্পাদন করল, তার জন্য রয়েছে তদপেক্ষা উত্তম বিনিময়।’ এ পরিপ্রেক্ষিতে সফর মাসে যে যত বেশি নফল ইবাদত করবে আল্লাহ্ পাক তাকে তত অধিক হারে বিনিময় প্রদান করবেন। প্রত্যেক চান্দ্রমাসের ১, ১০, ২০ ও ২৯-৩০ তারিখ নফল রোজা এবং সপ্তাহের প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার সুন্নত রোজা পালন খুবই পুণ্যময় আমল। তাছাড়া এ মাসে ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নত যথাযথভাবে আদায়ের পাশাপাশি বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত, জিকির আজকার, নফল ইবাদত, তাসবিহ্ তাহলিল পাঠ করা খুবই পুণ্যের কাজ।

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফর মাসের শেষ দিকে প্রচ- অসুস্থ ছিলেন। সফর মাসের শেষ বুধবার তিনি অনকেটাই সুস্থতা লাভ করেন। এ খুশিতে অনেক সাহাবি বিভিন্নভাবে দান-সাদকা করছেন। এ দান-সাদকা নিঃসন্দেহে উত্তম কাজ। তবে এমন কোনো হাদিস বা দলিল নেই যে, পরবর্তী সময়ে সাহাবায়ে কেরাম এ দিনটি খুশির দিন হিসেবে উদযাপন করেছেন বা প্রতি বছর দান-সাদকা করেছেন। তারপরও আমাদের দেশসহ কোনো কোনো দেশে মুসলমানগণ এই দিবসটি আখেরি চাহার শোম্বা হিসেবে পালন করে থাকেন। এ বছর দিবসটি পালিত হবে আগামী ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২ইং (২৪ সফর ১৪৪৪ হিজরী) সোমবার।

 

 

কিউএনবি/অনিমা/০৮.০৯.২০২২/দুপুর ২.১৭

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

July 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit