কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : পাঁচগাছী উচ্চ বিদ্যালয়। যে বিদ্যালয়ে নেই নিয়মের কোন বালাই। শিক্ষা নীতিমালা কিংবা বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির কোন নিয়ম-শৃঙ্খলার তোয়াক্কা করেন না ওই বিদালয়ের প্রধান শিক্ষক জিতেন্দ্রনাথ রায়। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) এর নিয়ম ও বিধি অনুসরণ না করে শিক্ষক নিয়োগ দেয়ায় বেতন জটিলতা, ৩০ বছর ধরে একক সিদ্ধান্তে মনগড়া ম্যানেজিং কমিটি গঠন ও স্বাক্ষর জাল সহ নানা অপকর্ম সম্পাদন করায় ভেঙ্গে পড়েছে শিক্ষার সার্বিক কার্যক্রম। প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিকার চেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর অভিযোগের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে নিয়োগ বাণিজ্য সহ প্রধান শিক্ষকের পাহাড়সম অপকীর্তি।
অভিযোগ সূত্রে জানা জানায়, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার অবস্থিত পাঁচগাছী উচ্চ বিদ্যালয়। যে বিদ্যালয়ে ১৯৯১ সাল থেকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন শ্রী জিতেন্দ্রনাথ রায়। দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করার সুযোগে তিনি নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন। শুধুমাত্র নিয়োগ বাণিজ্য করে বিদ্যালয় উন্নয়নের অজুহাতে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি টাকা। নিয়োগ বাণিজ্য হাসিল করার জন্য প্রতিবারেই তৈরি করেন মনগড়া ম্যানেজিং কমিটি।গত ৫ জুলাই-২২ইং তারিখে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের স্বাক্ষর জাল করে নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিল উত্তোলনের চেষ্টা করার সময় বিষয়টি ফাঁস হলে অন্যান্য শিক্ষক এবং ম্যানেজিং কমিটির কতিপয় শিক্ষকদের ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
২০১৫ সালে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) এর নিয়মনীতি না মেনে কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে ৪জন শিক্ষককে গোপনে নিয়োগ দেন প্রধান শিক্ষক জিতেন্দ্র নাথ। নিয়োগকৃত শিক্ষকরা আজবধি পায়নি বেতন-ভাতা। দীর্ঘদিন বেতন-ভাতা না পাওয়ায় ওই সমস্ত শিক্ষক মানবেতর জীবন যাপন করছেন।প্রধান শিক্ষক জিতেন্দ্র নাথ রায় মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যে আবারো নতুন করে ৪জন শিক্ষককে নিয়োগ দেয়ার জন্য একটি পকেট ম্যানেজিং কমিটি গঠন নিয়োগ প্রক্রিয়া চালানো সহ নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে সহকারী শিক্ষক আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে প্রতিকার চেয়ে গত ০২.০৮.২০২২ইং তারিখ কুড়িগ্রাম সদর পপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। এরই প্রেক্ষিতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার উক্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্তের জন্য সহকারী উপজেরা শিক্ষা অফিসার মোঃ সাজ্জাদ হোসেন দায়িত্ব প্রদান করেন। গত ১৭.০৮.২০২২ইং তারিখ তদন্তে অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রমাণিত হয়।
পাঁচগাছী উচ্চ বিদ্যালয়ের বেতন-ভাতা থেকে বঞ্চিত ব্যবসায় শিক্ষা বিষয়ক সহকারী শিক্ষক এরশাদুল হক বলেন ২০১৫ সালে চাকুরি যোগদান করলেও এখন পর্যন্ত হচ্ছে না। ডিজি অফিস থেকে বার বার কাগজপত্র ফিরিয়ে দিচ্ছে। কি জটিলতা বুঝতে পাচ্ছি না।অভিযোগকারী পাঁচগাছী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম খাঁন বলেন, প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে বিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম ভেঙে পড়ার অবস্থা তৈরি হয়েছে। আমি প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলির সুষ্ঠু তদন্ত প্রতিবেদন আশা করছি।ওই স্কুলের সাবেক শিক্ষক ও পাঁচগাছী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন-প্রধান শিক্ষক আমি স্কুলে চাকুরীকালীন থেকে দুর্নীতির সাথে জড়িত। আমি চাই স্কুলের উন্নয়ন, বাচ্চার সুষ্ঠু সুন্দও পড়ালেখার সুযোগ পাক। কিন্তু প্রধান শিক্ষকের অপকর্মেও কারণে তা আর সম্ভব হচ্ছে না। আমরা দ্রুত এর প্রতিকার চাই।
এ ব্যাপারে পাঁচগাছী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্রী জিতেন্দ্রনাথ রায় বলেন-আমি ৩২ বছর যাবত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছি। স্কুলের উন্নয়নের জন্য শিক্ষক ৪/৫ লাখ করে টাকা নিয়েছি। ব্যক্তিগত কাজের জন্য টাকা নেইনি। ম্যানেজিং কমিটির গঠনের অনিয়মের বিষয়য়ে প্রশ্ন করলে তিনি অকপটে শিকার করেন- ম্যানেজিং কমিটি গঠনে ৩০ বছরে আমি মাইকিং, অভিভাবকদের অবহিত কিংবা প্রচারণা চালিয়ে কমিটি গঠন করি নাই। কারণ প্রয়োজন হয় নাই। যা করেছি তাতে সবাই সম্মতি দিয়েছে।এ ব্যাপারে কথা হলে কুড়িগ্রাম সদর সহকারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, তদন্তে কিছুটা অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হয়েছে। তবে সুষ্ঠু প্রতিবেদনের স্বার্থে এই মহুর্তে সবকিছু বলতে পাচ্ছি না।
কিউএনবি/অনিমা/১8 অগাস্ট ২০২২, খ্রিস্টাব্দ/বিকাল ৫:০৩