শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫, ০২:১৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম
গাজায় ক্ষুধার্ত মানুষের ওপর গুলি চালানোর দৃশ্য দেখেছেন নিরাপত্তা ঠিকাদার আরও এক ফিলিস্তিনি ফুটবলারকে হত্যা করল ইসরাইল বিশ্বে প্রথমবার তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিলো রাশিয়া মাধবদীতে আগুনে পুড়লো অর্ধশত দোকান ইরানের তেল বাণিজ্য ও হিজবুল্লাহকে নতুন নিষেধাজ্ঞা দিল যুক্তরাষ্ট্ চিলমারীতে বিএনপির কমিটি বাতিলের দাবি : অব্যহতি দুই বিক্ষোভকারীকে জুলাইয়ে নিহতদের স্মরণে ছাত্রদলের মোমবাতি প্রজ্বলন  ঢাকা-ওয়াশিংটন বৈঠক, শুল্ক চুক্তি নিয়ে আসেনি কোনো সিদ্ধান্ত ইন্দোনেশিয়ার পর্যটন দ্বীপ বালিতে ফেরি ডুবে ৫ জনের মৃত্যু, বহু নিখোঁজ বড় অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে দেশ, এখনই নিয়ন্ত্রণ জরুরি

গাজায় ক্ষুধার্ত মানুষের ওপর গুলি চালানোর দৃশ্য দেখেছেন নিরাপত্তা ঠিকাদার

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ৪ জুলাই, ২০২৫
  • ৪ Time View

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : “মেশিনগান দিয়ে ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর বেশ কয়েকবার গুলি চালাতে দেখেছি, যারা কোনো হুমকিই ছিল না”, গাজায় ইসরায়েল ও মার্কিন-সমর্থিত বিতর্কিত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের সাবেক নিরাপত্তা ঠিকাদার বিবিসিকে এই কথা বলেছেন।

তিনি জানিয়েছেন, একবার একদল নারী, শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি ঘটনাস্থল থেকে একটু দূরে, শুধুমাত্র একটু ধীরে চলায় ওয়াচ টাওয়ার থেকে একজন প্রহরী মেশিনগান দিয়ে গুলি চালায়।

এ বিষয়ে গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন বা জিএইচএফ এর প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করছে তারা।

তারা বিবিসিকে একটি বিবৃতির উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করেছে, জিএইচএফ সহায়তা কেন্দ্রের কাছে কোনো বেসামরিক নাগরিক কখনো গুলিবিদ্ধ হননি।

মে মাসের শেষের দিকে দক্ষিণ ও মধ্য গাজার বেশ কয়েকটি এলাকায় সীমিতভাবে ত্রাণ বিতরণের মাধ্যমে গাজায় নিজেদের কার্যক্রম শুরু করে জিএইচএফ।

এরপর গাজার ওপর ১১ সপ্তাহের সম্পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে ইসরায়েল, এরপর থেকে ওই এলাকায় আর কোনো খাবার প্রবেশ করেনি।

শুরু থেকেই সহায়তা বিতরণের এই ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে। কারণ এর ফলে বিপুল সংখ্যক মানুষকে সক্রিয় যুদ্ধক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে হেঁটে অল্প কয়েকটি জায়গায় যেতে বাধ্য করা হচ্ছিল।

জাতিসংঘ এবং স্থানীয় চিকিৎসকরা বলছেন, জিএইচএফ শুরু হওয়ার পর থেকে, ইসরায়েলি বাহিনী তাদের কাছ থেকে খাদ্য সহায়তা সংগ্রহের চেষ্টার সময় ৪০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।

যদিও ইসরায়েল মনে করে, তাদের নতুন এই পদক্ষেপের ফলে হামাসের সাহায্য পাওয়ার পথ বন্ধ হয়েছে।

ফিলিস্তিনিদের একটি দলের ওপর প্রহরীদের গুলি চালানো ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ওই ঠিকাদার বলেন, “একজন ঠিকাদার একটি লম্বা জায়গার ওপর দাঁড়িয়ে বের হয়ে যাওয়ার রাস্তাটার দিকে তাকিয়ে জনতার ওপর বারবার ১৫ থেকে ২০টি করে গুলি চালাতে শুরু করে।”

“একজন ফিলিস্তিনি নিশ্চল হয়ে মাটিতে পড়ে গেল। এরপর সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা অন্য আরেকজন ঠিকাদার বলল, ‘ধুর, আমি ভাবলাম তুমি একজনকে মেরেছো’। আর তারপর তারা এটা নিয়ে হেসে উঠল।”

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসির সাথে কথা বলা ওই ঠিকাদার বলেন, জিএইচএফের পরিচালকরা তার প্রতিবেদনটিকে কাকতালীয় ঘটনা বলে উড়িয়ে দেয় এবং ফিলিস্তিনি ব্যক্তিটি “হোঁচট খেয়ে পড়েছিলেন” অথবা “ক্লান্ত ও অজ্ঞান” হয়ে গিয়েছিলেন বলে দাবি করে।

জিএইচএফ দাবি করেছে, এই অভিযোগকারী ব্যক্তি একজন “অসন্তুষ্ট সাবেক ঠিকাদার” যাকে তারা অসদাচরণের জন্য বরখাস্ত করেছিল।

যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওই ঠিকাদার। বিবিসিকে তিনি বেতনের কয়েকটি স্লিপ দেখিয়েছেন যাতে বোঝা যাচ্ছে, ওই পদ ছাড়ার পরও তাকে দুই সপ্তাহ ধরে বেতন দেওয়া হয়েছে।

জিএইচএফ পরিচালিত চারটি বিতরণ কেন্দ্রে কাজ করা ওই ব্যক্তি বিবিসিকে জানান, সহায়তা কেন্দ্রগুলোতে নিয়ম, নিয়ন্ত্রণ খুবই কম যা দায়মুক্তির সুযোগ করে দেয়।

ঠিকাদারদের কোনো স্পষ্ট নিয়ম বা স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতি দেওয়া হয়নি বলেও জানান তিনি। একজন টিম লিডার তাদের বলেছিলেন, “যদি তুমি হুমকি মনে করো, গুলি করো- হত্যা করার জন্য গুলি করো এবং পরে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করো”।

পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছিল, “আমরা গাজায় যাচ্ছি, তুমি যা ইচ্ছা করো। এখানে এটিই নিয়ম,” বলেন তিনি।

বিবিসিকে ওই ঠিকাদার বলেছিলেন, সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে সমগ্র এলাকার কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং জিএইচএফের দাবি–– সেখানে কেউ আহত বা গুলিবিদ্ধ হয়নি “এগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা”।

সাবেক ওই ঠিকাদার বলেন, ইসরায়েলের সেনা দলের নেতারা গাজার বাসিন্দাদের “জম্বি” বা “মৃত মানুষের দল” হিসেবে উল্লেখ করেছেন, “যা এই মানুষগুলোর কোনো মূল্য নেই বলেই ইঙ্গিত দিয়ে।”

ওই ব্যক্তি আরও জানান, জিএইচএফ সাইটগুলোতে ফিলিস্তিনিরা অন্যভাবেও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। স্টান গ্রেনেডের ধ্বংসাবশেষের আঘাত কিংবা মানুষের ভীড়কে কাটাতারের মধ্যে ঠেলে দেয়া হচ্ছে উদাহরণ হিসেবে বলেন তিনি।

ফিলিস্তিনিদের বেশ কয়েকবার গুরুতর আহত হতে দেখেছেন তিনি।

“একবার একজন পুরুষের মুখে পিপার স্প্রের পুরো ক্যানই ঢেলে দেয়া হয়েছিল বা একজন নারী স্টান গ্রেনেডের ধাতব অংশে আঘাত পেলেন, যা ভুলভাবে ওই মানুষগুলোর দিকে ছোঁড়া হয়েছিল,” বলছিলেন ওই সাবেক ঠিকাদার।

“এই ধাতব টুকরোটি সরাসরি তার মাথায় আঘাত করে এবং সে নড়তে না পেরে মাটিতে পড়ে যায়,” তিনি বলেন।

“আমি জানি না সে মারা গেছে কিনা। আমি কেবল দেখলাম, সে অজ্ঞান ও সম্পূর্ণরূপে নিস্তেজ ছিল।”

এ সপ্তাহের শুরুতে জিএইচএফ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে ১৭০টিরও বেশি দাতব্য সংস্থা এবং অন্যান্য এনজিও। অক্সফাম এবং সেভ দ্য চিলড্রেনসহ সংস্থাগুলো বলেছে, ইসরায়েলি বাহিনী এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো “নিয়মিতভাবে” সাহায্যপ্রার্থী ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালায়।

সাহায্য নিতে আগতদের ওপর নিজের সৈন্যদের ইচ্ছাকৃতভাবে গুলি চালানোর বিষয়টি অস্বীকার করেছে ইসরায়েল। তারা বলছে, জিএইচএফ এর ব্যবস্থাপনা হামাসের হস্তক্ষেপ এড়িয়ে, সাহায্য প্রার্থীদের সরাসরি সহায়তা প্রদান করে।

জিএইচএফ বলছে, পাঁচ সপ্তাহে পাঁচ কোটি ২০ লাখেরও বেশি খাবার তারা সরবরাহ করেছে এবং অন্যান্য সংস্থাগুলো “অসহায়ভাবে তাদের সাহায্য লুট হওয়ার সময় পাশে দাঁড়িয়েছে”।

২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। যেখানে প্রায় এক হাজার ২০০ জন নিহত এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়।

হামাসের এই হামলার জবাবে গাজায় একটি অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। গাজার হামাস-পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, তখন থেকে গাজায় কমপক্ষে ৫৭ হাজার ১৩০ জন নিহত হয়েছেন। সূত্র: বিবিসি বাংলা

কিউএনবি/অনিমা/০৪ জুলাই ২০২৫/দুপুর ২:০৯

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

July 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit