ছোট ছোট পাওয়া
———————–
ডিনার সকাল সকাল শেষ হলো। এখনো বাইরে বিকেলের চমৎকার আলো রয়েছে। আমি বললাম — চলো না বাইরে থেকে কফি খেয়ে আসি! বিকেলটা একটু উপভোগ করি। সে ও আমার কথায় রাজি হয়ে গেলো। বেরিয়ে পড়লাম দুজনে।
একটা কফি শপ এ গিয়ে কফি নিলাম, প্যাটিওতে মুখো মুখি বসে কফি খেলাম। কি সুন্দর মিষ্টি বাতাস! বাতাসে যেনো আলাদা একটা ঘ্রাণ আছে! চোখ বন্ধ করে ঘ্রাণ নিলাম কিছুক্ষণ। পাশে ঝুলে থাকা চাইমস থেকে টুং টাং টুং টাং শব্দ আসছিল! ফুলের ঘ্রাণ আর বাতাসের ঘ্রাণ মিশে একাকার।
ভাবছি আহা… আর কি চাওয়ার আছে জীবনে! যদি প্রতিটা বিকেল এমন করে পাওয়া হয়! “মাগরিব হয়ে আসছে” বলে সে তারা দিল আমায়, চোখ খুলে গাড়িতে উঠে বসলাম তারাহুরো করে। গাড়ি চলছে চলছে।
হঠাৎ আকাশে চোখ পড়তেই অনুভূতি ধরে না রাখতে পেরে চিৎকার করে বলে ফেললাম “দেখো দেখো কত্ত সুন্দর আর কত্ত বড় চাঁদ”! আমার চিৎকারে সে কিছুটা ভয় পেয়ে স্টিয়ারিং এলোমেলো করে ফেললো। ছোট্ট করে বকা দিলো – –এভাবে কেউ চিৎকার করে! অ্যাকসিডেন্ট হতে পারতো!
বললাম — দেখনা, কত সুন্দর পূর্ণিমার চাঁদ! বিচে হেঁটে হেঁটে এই চাঁদ দেখতে পারলে কি যে ভাল লাগতো!কথা শেষ হতে না হতেই বাসায় পৌঁছে গেলাম। মাগরিব আদায় করলাম দুজনেই। ভাবছি একটু টিভি দেখি, রিমোট নিলাম হাতে। সে বলল — চল তোমায় কোথাও নিয়ে যাই!
একটু বিরক্ত হয়ে রিমোট রেখে দিয়ে বের হলাম। বসলাম গাড়িতে “মাত্রই তো এলাম বাইরে থেকে এখন আবার যাওয়ার কি হলো” বকছি মনে মনে।
চলতে শুরু করলো গাড়ি। আমার চোখ আবারো আকাশে গিয়ে আটকালো। কি সুন্দর ভরা চাঁদ! গান বাজালাম “এই মোম জোছনায় অঙ্গ ভিজিয়ে এসো না গল্প করি, ওও.. এসোনা গল্প করি”
হঠাৎ টার্ন করতেই আমি খুশিতে আতকে উঠলাম! এটাতো বিচ এ যাওয়ার রাস্তা! আমরা বিচ এ যাচ্ছি! সে মুচকি হাসে। সব ইমোশন গুলো বুকের মাঝে এসে দলা পাকানো শুরু করলো। দম বন্ধ হয়ে আসছে ভাবতেই, বিচ এর পাড়ে বসে পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে কেমন লাগবে! কখনো দেখা হয়নি! আমার কথা গুলো বলেই ফেললাম তাকে। সে শুধু হেসে বলল– পাগল কোথাকার !
গাড়ি পার্ক করলো। দুজনে নামলাম। হাত ধরে হেঁটে চললাম বালির উপর দিয়ে পানির কাছে। ভরা পূর্ণিমার কারণে পানিতে জোয়ার এসেছে। অনেক কাছে চলে এসেছে পানি। হাঁটলাম অনেকক্ষণ, আর জোৎস্না স্নান করলাম অপলক চাঁদের পানে চেয়ে! সামনেই একটা বেঞ্চ, বসলাম কিছুক্ষণ! হাজার হাজার মশার কামড় নিজে খেয়ে এবং তাকেও খাইয়ে আমার রাজা চাঁদ কে ক্যামেরা বন্দি করে বাড়ি ফিরলাম।
এমন ছোট ছোট পাওয়া গুলি একটা পরিপূর্ণ জীবন যাপিত করতে অনেক বড় ভূমিকা রাখে।
বড় না হোক, ছোট ছোট চাওয়া গুলি পাওয়া হোক।
লেখিকাঃ রুপা মোজাম্মেল লেখাপড়া শেষ করে কানাডায় বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কোর্স শেষ করেছেন। সেখানেই তাঁর কর্ম জীবন। লেখালেখি করেন নিয়মিত। জীবনের খন্ডচিত্র আঁকতে পারদর্শিনী রুপা মোজাম্মেল।
কিউএনবি/বিপু/১৩.০৮.২০২২/ দুপুর ২.৩৬