ঈদের গল্প
————-
থেকে থেকে অনেক স্মৃতি মনে পড়ে যায়।
খুব ছোট ছিলাম তখন, বয়স কেমন হবে সেটাও মনে নেই। রোজার ঈদ ছিল সবচেয়ে আনন্দের একটা দিন! ঠিক একই ভাবে কুরবানীর ঈদ ছিল আতঙ্কের একটা দিন আমার জন্য। কারণ প্রতি বছর ঠিক কুরবানীর ঈদে আমার ভীষণ জ্বর হতো! কেনো হতো আজও পর্যন্ত চিন্তা করে কোনো কারণ খুঁজে পাইনি! হয়তো রক্ত দেখে ভয় পেতাম! না হয় গলা কাটা গরুর কথা ভেবে ভেবে ভয়ে জ্বর হয়ে যেত! সেই সময় রাস্তায় রাস্তায় এমন কি বাড়ির উঠানেও গরু, ছাগল জবাই হতো।
একবার ঈদের আগের রাতে বড় আপু শিপা আর ওর বন্ধুরা মিলে এক দুষ্টুমি বুদ্ধি করলো। সেই দুষ্টুমির Prop বানালো আমাকে।
প্রায় সবার বাসায় কুরবানীর গরু ছাগল চলে এসেছে। বড় বোনরা আর তাদের বন্ধু বান্ধব সবাই মিলে মহল্লার গরু দেখতে বের হলো। সাথে আমিও গায়ে জ্বর নিয়ে ছুটলাম ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চার মতো পিছু পিছু।
হঠাৎ আপুর বন্ধুদের মধ্যে একজন বললো – চলো সবাই মিলে আন্টিকে(আমার আম্মা) ভয় দেখাই! আমার আপুও রাজি হয়ে গেলো কোন কিছু চিন্তা না করেই। হঠাৎ ওরা সবাই আমার চার হাত পা ধরে উচু করে ফেললো (যেটাকে চ্যাং দোলা বলে) আমাকে বললো তুমি শুধু চোখ বন্ধ করে রাখবে। আমিও খুশি হয়ে গেলাম বড়দের খেলার সাথী হতে পেরে! ওরা যে ভাবে বললো আমিও ঠিক সেভাবেই রইলাম। আমাকে সবাই মিলে উচু করে নিয়ে গেলো আমাদের বাসায়। সবাই একসাথে চিৎকার করে বলতে লাগলো “আন্টি রুপাকে গরু গুতো দিয়েছে”।
আম্মা ঈদ এর আয়োজনে ব্যাস্ত ছিলেন। সবার চিৎকার শুনে দৌড়ে বেরিয়ে এলো এক চিৎকারে, দেখতে লাগলো কোথায় লেগেছে গুতো! আম্মার অবস্থা দেখে সবাই হেসে দিয়ে বললো – আপনাকে ভয় দেখিয়েছি আন্টি, রুপার কিছু হয়নি।
আম্মার সব রাগ গিয়ে পড়লো বড় আপুর পিঠে।
আপুর কান্না দেখে খুব কষ্ট হয়েছিল সেই দিন! নিজেকে অপরাধী লাগছিল। মনে হচ্ছিল আমি পিছু পিছু না গেলে হয়তো আপু মার খেত না এভাবে।
স্মৃতি যেমন মধুর হয়, ঠিক তেমনি হয় কষ্টেরও! এর পর আমার আর কখনোই কুরবানীর ঈদ এ জ্বর হয়নি, যাইনি কখনো গরু দেখতেও! আনন্দের ছিল কুরবানীর ঈদ গুলোও!
লেখিকাঃ রুপা মোজাম্মেল। কানাডা প্রবাসী। দেশে লেখাপড়া শেষ করে কানাডায় বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কোর্স শেষ করেছেন। সেখানেই তাঁর কর্ম জীবন। লেখালেখি করেন নিয়মিত। জীবনের খন্ডচিত্র আঁকতে পারদর্শিনী রুপা মোজাম্মেল।
কিউএনবি/বিপুল/০৮.০৭.২০২২/ রাত ১০.৪০