ডেস্কনিউজঃ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাভোগ শেষে ৪১ বাংলাদেশিকে ফেরত দিয়েছে মিয়ানমার। আজ বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মিয়ানমারের ‘মংডু পয়েন্ট অব এন্ট্রি-এক্সিট’ নামক স্থানে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী পর্যায়ে এক পতাকা বৈঠকের মাধমে তাঁদের ফেরত দেয় মিয়ানমার। পতাকা বৈঠকে ১৬ সদস্যের বাংলাদেশি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার। মিয়ানমার বিজিপির ৯ সদস্যের প্রতিনিধিদলটির নেতৃত্ব দেন পিইন ফিউ ১ বর্ডার গার্ড পুলিশ ব্রাঞ্চ অধিনায়ক লে. কর্নেল কাও না ইয়াং শো।
বৈঠক শেষে সাজাভোগ শেষ হওয়া ৪১ জন বাংলাদেশিকে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে বিজিবি প্রতিনিধিদল তাঁদের নিয়ে বিকাল ৪টার দিকে টেকনাফ ট্রানজিট জেটিঘাটে পৌঁছায়। সেখানে তাঁদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্নের জন্য পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
বুধবার বিকাল ৪টায় টেকনাফ ট্রানজিট ঘাটে এক সংবাদ সম্মেলনে টেকনাফ ২ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার জানান, গত বছর ৬ মে থেকে সাজাভোগ শেষ হলে ৪১ জন বাংলাদেশি নাগরিক মিয়ানমারের জেলে মানবেতর জীবনযাপন করছিলেন। বিষয়টি অবগত হওয়ার পর সরকারের স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিজিবি ও মিয়ানমারের সিতওয়েতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কনস্যূলেট তাঁদের ফিরিয়ে আনতে দীর্ঘ এক বছর ধরে কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করে। দীর্ঘ প্রচেষ্টার মাধ্যমে আজ তাঁদের ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে।
শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার আরো জানান, দুই দেশের সীমান্তরক্ষী পর্যায়ে পতাকা বৈঠকে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। সম্প্রতি নাফনদে মাছ শিকারে গিয়ে আটক শাহপরীর দ্বীপের ১৮ জেলেকে ফেরত দিতে বিজিপিকে অনুরোধ করা হলে তারা পরবর্তী তদন্ত শেষে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া নাফনদে মাছ শিকারে গিয়ে ভুলক্রমে মিয়ানমার সীমান্তে ঢুকে পড়া জেলেদের আটকের পর বিষয়টি বিজিবির সঙ্গে তাৎক্ষণিক আলোচনার অনুরোধ করা হয়। ইয়াবা ও আইসের চালান পাচারের বিষয়টি উত্থাপন করা হলে তারা নিজেদের সীমান্তে মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
এদিকে ফেরত আসা বাংলাদেশিদের মধ্যে কক্সবাজারের টেকনাফের ২২ জন, উখিয়ার একজন, রাঙ্গামাটির আটজন, বান্দারবনের সাতজন, খাকড়াছড়ির একজন ও মৌলভীবাজারের একজন রয়েছেন। তাঁরা বিভিন্ন সময় নাফনদে মাছ শিকার এবং সাগরপথে ট্রলারে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় মিয়ানমার বাহিনীর হাতে আটক হয়েছিলেন বলে স্বীকার করেন।
সাড়ে চার বছর সাজাভোগ শেষে ফেরত আসা টেকনাফের করিম উল্লাহ বলেন, নাফনদে মাছ শিকারের সময় মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) আমাদের দুজনকে নৌকাসহ ধরে নিয়ে যায়। পরে আমাদের জেলে রাখা হয়। সে দেশের জেলে সাড়ে চার বছর আমরা মানবেতন জীবনযাপন করেছি। সেখানকার দুর্বিষহ কষ্টের কথা বলে শেষ করা যাবে না। আমরা জেল থেকে বেরোনোর সময় জেলে সাজাভোগ করা অন্য বাংলাদেশিরা আমাদের জড়িয়ে ধরে অনেক কান্নাকাটি করেছে এবং সরকারের কাছে তাদের দ্রুত সময়ে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করেছে।
কিউএনবি/বিপুল/ ২৩.০৩.২০২২ ইং/সন্ধ্যা ৭:৫৪