শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৫০ অপরাহ্ন

ডোমারে ছেলের নির্যাতনের শিকার হয়ে স্বামীর ভিটে ছাড়া বৃদ্ধা খাদিজার মানবেতর জীবন যাপন

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ১৮ মার্চ, ২০২২
  • ১০২ Time View

 

আনিছুর রহমান মানিক, ডোমার (নীলফামারী) প্রতিনিধি : নীলফামারীর ডোমারে স্বামীর মৃত্যুর পর ছেলের অবৈধ আর্থিক চাহিদা মেটাতে না পারায় মাসের পর মাস ছেলের মানসিক নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে স্বামীর ভিটে ছেড়ে একাধারে ৭ বছর ধরে বৃদ্ধা বিধবা একাকী অসহায় মানবেতর জীবন যাপন করছে।ডোমার উপজেলা মাদ্রাসাপাড়ার এলাকার মৃত এমএ রব্বানি এর স্ত্রী খাদিজা খাতুন (৬৫) ১৬মার্চ (বুধবার) তার ছেলে আনোয়ার পারভেজ রনি (৪৫) এর বিরুদ্ধে এ সংক্রান্ত সদর ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। আবেদনে তিনি সমস্যার সমাধান পূর্বক নিজ অধিকার ফিরিয়ে পাওয়ার জোর দাবী জানান।অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, বৃদ্ধা খাদিজা খাতুন জানান, পহেলা নভেম্বর ২০১৪ সালে স্বামী বার্ধক্যজনিত কারনে ইন্তেকালের করেন। স্বামীর সম্পত্তি অর্থ সম্পত্তি তদারকি আমি নিজেই করতো। একটা সময় আমার ছেলে আনোয়ার পারভেজ রনি তাঁর ব্যক্তিগত প্রয়োজন মেটানোর জন্য মোটা অঙ্কের টাকার জন্য আমাকে চাপ প্রয়োগ করে। তার আর্থিক প্রয়োজন মেটাতে আমি নারাজ হলে আমার ছেলে রনি একের পর এক মানসিক ভাবে আমাকে নির্যাতন করে এবং যত দিন যায় আমার সাথে তার সমস্যা বেড়েই চলে।

এমতবস্থায় আমি ছেলের বাড়ি ত্যাগ করে আমার আত্মিয়ের বাসায় অবস্থান করা শুরু করে দেই। আমি ছেলের বাসা ত্যাগ করার পর পরই আমার ছেলে আমার স্বামী এবং আমার নামীয় সম্পত্তি একের পর এক আমাকে অবগত না করেই অনেক জমি অন্যের নিকট বন্ধক প্রদান করে এবং জমি বন্ধকের প্রচুর পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেয়। আমার ছেলে বিভিন্ন লোক মারফত বলে যে, “আমার বাবা মৃত্যুর আগে সব সম্পত্তি আমার নামে লিখে দিয়েছে।অপরদিকে আমার নামীয় সকল (প্রায় ২৫ বিঘা) সম্পত্তি অন্যের দ্বারা দখল করে। পরবর্তীতে আমি জানতে পারি জমিগুলো ডোমার সদর ইউনিয়নের নবারপাড়ার আজিজার (কেন্দেলু) এর ছেলে একরামুল, মোটাই মুন্সির ছেলে মিজানুর, হামিদুর এর ছেলে আমিনুর, মৃত হোলা এর ছেলে জিয়া, আব্দুল বাকি এর ছেলে করিমুল, মৃত হামিদুর এর ছেলে সেলিম, নালচন এর ছেলে মহিদুল, মৃত কাছিম এর ছেলে সাত্তার, মৃত ঢেপু এর ছেলে রেজা বর্গা হিসেবে চাষ করার কথা বলে দখল করে আছে।

ডাক্তার পাড়া (চওরার বিল) এলাকার মৃত সফের আলীর দুই ছেলে আতিয়ার ও ওবাইদুল এবং কবীর এর স্ত্রী জেসমিন আক্তার কিছু জমি দখল করে আছেন। সেই জমির ফসলের ভাগ জোরপূর্বক ভাবে আমার ছেলে আদায় করে এবং আমাকে সম্পূর্ণরূপে ফসলের ভাগ হতে বঞ্চিত করে।অশ্রুভেজা চোখে বৃদ্ধা সংবাদকর্মীকে বলেন, এত সম্পত্তি থাকার পরেও আমি অসহায়। বর্তমানে আমি বয়সের ভারে শারীরিকভাবে ভীষণ অসুস্থ। অনেক সময় অসুস্থ্য অবস্থায় ঘরের ভিতর একাই পরে থাকি খোজ নেয়ার মতো কেউ থাকেনা। অর্থাভাবে উন্নত চিকিৎসা করতে পারছিনা, বর্তমান আমার খাওয়া খরচ আত্মীয় স্বজনদের সহযোগিতায় চলছে। ইতিপূর্বে আমার সমস্যাগুলো নিয়ে আমার মেয়ে রিম্পা মনি (৩৫) সহ আত্মীয় স্বজন সহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিকট একাধিকবার সমাধানের চেষ্টা করলে তাতেও ব্যর্থ হই। নিজ ভাইয়ের এমন আচরণের কারনে আমার মেয়ে রিম্পা মনিও পৈতৃক সম্পত্তি হতে বঞ্চিত। ১৬ মার্চ ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।

আমি আমার সকল সম্পত্তি দখল মুক্ত ও জীবনের শেষ সময়টা আমার স্বামীর রেখে যাওয়া বাড়িতে সবাইকে নিয়ে একসাথে থাকতে চাই। বৃদ্ধার ছোট নেয়ে রিম্পা মনি সংবাদকর্মীকে মোবাইলে জানান, ২০১৪ সালে আমার বাবার মৃত্যুর পর থেকেই আমার ভাই রনি আমার মায়ের সাথে খারাপ আচরন করেই যাচ্ছে, একপর্যায়ে এতো বেশী খারাপ আচরন করে যে আমার মা ওই বাসা ত্যাগ করে আমার মায়ের বোনের ছেলের বাসায় গিয়ে উঠে। পরে আমার নানার জমিতে ঘর তুলে সেখানে ৭ বছর থেকে বসবাস করছে। অপরদিকে আমার ভাই রনি আমার বাবা-মা ও আমার নামীয় সম্পত্তি আমাদের বঞ্চিত করে নিজেই ভোগ দখল করে খাচ্ছে এবং আমাদের জমির বর্গাচাষীদের সাথে ফসলের ভাগ চাইতে গেলে তারাও আমার মাকে ফসলের ভাগ দেয়ার পরিবর্তে বলে “মায়ের সম্পত্তিতে ছেলে অধিকার বেশী” একথা বলে ফসলের ভাগ না দিয়ে আমার মা কে বার বার ফিরিয়ে দেয়। অনেকবার আত্মিয়-স্বজন সহ এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করলে তাতেও কাজ হয়নি।

তিনি আরোও বলেন এবার আমাদের সমস্য্সামূহ উল্লেখ করে ডোমার সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ দিয়েছি। আমরা আসাবাদী চেয়ারম্যান মহাদয়ের মাধ্যমে ন্যায় বিচার পাবো এবং আমাদের সব সম্পত্তির সমস্যা সমূহ সমাধান করে আমার মাকে পূর্বের অবস্থায় ফিরে যেতে তিনি কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করবেন। বৃদ্ধার একমাত্র ছেলে আনোয়ার পারভেজ রনির সাথে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে নারাজ এবং একপর্যায়ে বলেন, “আমার মা চেয়ারম্যানকে অভিযোগ দিয়েছে, সালিশে দুপক্ষের উপস্থিতিতে তারা বিচার করবে কে দোষী আর কে নির্দোষ তখন প্রমান হবে।”এ ব্যাপারে ডোমার সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুম আহমেদ বলেন, আমরা খাদিজা খাতুন নামের এক বৃদ্ধার লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনার সুষ্ঠু সমাধানের উদ্দেশ্যে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কিউএনবি/অনিমা/১৮ই মার্চ, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ/বিকাল ৫:৫২

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit