এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর) : চৌগাছার সীমান্ত দিয়ে ভারতে মানব পাচার থামছেই না। চার দিনের ব্যবধানে মানব পাচারের চেষ্টাকালে সোলাইমান হোসেন (৪৯) নামে আরো একজনকে আটক করেছেন বিজিবি। এ সময় ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে ভারতে পাচারের জন্য নিয়ে আসা এক কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় একটি ইজিবাইকও একটি মোবাইল জব্দ করা হয়।
গত বৃহসপতিবার রাতে উপজেলার বর্ণি সীমান্ত থেকে ওই কিশোরীকে উদ্ধার এবং সোলাইমানকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় বিজিবির বর্ণি বিশেষ ক্যাম্পের নায়েক সুবেদার গোলাম মাওলা বাদী হয়ে চৌগাছা থানায় মানব পাচার আইনে একটি মামলাকরেছেন। আটক সোলাইমান হোসেনকে যশোর আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। এ নিয়ে গত আট মাসে চৌগাছা থানায় ৬টি মানব পাচার মামলা হয়েছে। এ ছাড়া অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলা হয়েছে ডজন খানিক। উল্লেখ্য গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রোববার গভীর রাতে উপজেলার সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের বড়আন্দুলিয়া মাঠ থেকে পাচারের উদ্দেশ্যে আনা এক নারী, তার দুই শিশু সন্তান এবং দুই কিশোরসহ ৬ জনকে উদ্ধার করেন আন্দুলিয়া বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা। সে ঘটনায় বড় আন্দুলিয়া গ্রামের ইউনুস আলী ও জহুরুল ইসলাম নামে দুই জনকে আটক করা হয়।
বৃহ¯পতিবার রাতে দায়ের হওয়া মামলা সূত্রে জানা যায়, বৃহসপতিবার রাতে বর্ণি বিশেষ ক্যা¤েপর বিজিবি সদস্যদের নিয়মিত টহলের সময় তারা খবর পান, দালাল একটি চক্র কয়েক জন নারীকে অবৈধভাবে ভারতে পাচার করছে। রাতেই অভিযান চালালে জড়িতরা দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় বিজিবি সদস্যরা তাদের তাড়া করে বর্ণি গ্রামের মেইন পিলার-৪৬ এর দেড় কিলোমিটার বাংলাদেশের ভেতরে বর্ণি বেনাগাড়ি মোড় বটতলা থেকে সোলাইমান হোসেনকে আটক করেন। সোলাইমান হোসেন ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার যাদবপুর বড়বাড়ি গ্রামের মৃত সেকেন্দার গাজীর ছেলে। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, উদ্ধার হওয়া কিশোরীকে ভারতে ভালো কাজ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে অর্থের বিনিময়ে তাকে পাচার করা হচ্ছিল। গ্রেপ্তার হওয়া সোলাইমান হোসেন স্বীকার করেছেন, তিনি দালাল চক্রের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে গরিব ও অসহায় নারী-পুরুষের ভারতে ভালো কাজ দেবার নামে ভারতে পাচার করে থাকেন। তিনি এ চক্রের একজন সক্রিয় সদস্য।
বিজিবি সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে চৌগাছা সীমান্তের কিছু অসাধু ব্যক্তি ভারতে মানব পাচার এবং অবৈধভাবে দেশে লোক পারাপার করিয়ে আসছেন। অসচ্ছল পরিবারকে তারর্গেট করে পাচারকারীরা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নারী, শিশু, কিশোরকে দালালের মাধ্যমে সীমান্তে নিয়ে আসেন। তারা রাতের আঁধারে সীমান্ত দিয়ে এসব নারী-পুরুষকে ভারতে পাচার করে দেন। এ ছাড়া পাচারকারীরা টাকার বিনিময়ে অবৈধ অনুপ্রবেশেও সহায়তা করে আসছেন। পুলিশ ও বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ জানুয়ারি চৌগাছা পৌরশহরের পাঁচনমানা এলাকায় পাচারের উদ্দেশ্যে রাখা ৪ যুবতীকে উদ্ধার ও তিন পাচারকারীকে আটক করেন র্যাব।
সে ঘটনায়ও চৌগাছা থানায় মানব পাচার আইনে মামলা হয়। গত ২৮ ও ২৯ জানুয়ারি অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের তিনটি ঘটনায় পাচারকারীসহ ৮ নারী ও পুরুষকে আটক করেন বিজিবি। এ ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা হয়।২০২১ সালের জুলাই মাস থেকে গত ৫ মার্চ শনিবার পর্যন্ত চৌগাছা থানায় ছয়টি মানব পাচার মামলা হয়েছে। চলতি বছরের ৫৪ দিনে মামলা হয়েছে তিনটি। চৌগাছা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম সবুজ বলেন, ছয়টি মানব পাচার মামলায় আটক হয়েছে একাধিক মানব পাচারকারী। সর্বশেষ মানব পাচার মামলায় পাচারকারী সোলাইমানকে আটক দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
কিউএনবি/আয়শা/৫ই মার্চ, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ/রাত ৮:৩৯