আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতে এক নারী সরকারি কর্মকর্তাকে ‘রিল তারকা’ বলে মন্তব্য করায় চার কলেজশিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে—এমন অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত কর্মকর্তা হলেন রাজস্থানের বারমের জেলার জেলা কালেক্টর টিনা দাবি। মাত্র ২২ বছর বয়সে প্রথম চেষ্টাতেই ইউপিএসসি সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আইএএস কর্মকর্তা হওয়া টিনা দাবি ভারতজুড়ে আলোচিত একটি নাম।
শিক্ষার্থীদের ভাষ্য অনুযায়ী, সেখানে উপস্থিত এক কর্মকর্তা তাদের উদ্দেশে বলেন, জেলা কালেক্টর টিনা দাবি তাদের ‘রোল মডেল’। তবে এই বক্তব্যে আপত্তি জানান বিজেপি-সমর্থিত ছাত্রসংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি)-এর সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন শিক্ষার্থী। এতে পরিস্থিতি দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘কালেক্টর কোনো রোল মডেল নন। তিনি যদি সত্যিই রোল মডেল হতেন, তাহলে শিক্ষার্থীদের দাবি শুনতে এখানে আসতেন। তিনি একজন রিল স্টার—সব জায়গায় গিয়ে রিল বানান। কিন্তু আমাদের সমস্যার দিকে কোনো নজর দেন না।’
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অবস্থান কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর পুলিশ চারজন শিক্ষার্থীকে আটক করে। এর প্রতিবাদে পরে বহু শিক্ষার্থী থানার সামনে জড়ো হন এবং আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবি জানান। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা মনোজ কুমার। তিনি এনডিটিভিকে বলেন, ‘পুলিশ কাউকেই আটক বা গ্রেফতার করেনি। কোনো শিক্ষার্থীর সঙ্গে, বিশেষ করে কোনো মেয়ের সঙ্গে, অসদাচরণও করা হয়নি। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে চারজন ছেলেকে থানায় আনা হয়েছিল। পরে তাঁদের চলে যেতে বলা হয়। এরপর শিক্ষার্থীরা থানার সামনে জড়ো হয়ে প্রশাসনের কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানায়। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসে কথা বলার পর কিছুক্ষণ পর তারা সরে যায়।’
জেলা কালেক্টর টিনা দাবিও শিক্ষার্থী আটকের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। এনডিটিভিকে দেওয়া এক লিখিত বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘কাউকেই গ্রেফতার বা আটক করা হয়নি। ফি বাড়ানোর বিষয়টি সমাধান হয়ে যাওয়ার পরও কয়েকজন শিক্ষার্থী রাস্তা অবরোধ করে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করছিল। আমার অধস্তন কর্মকর্তারা কথা বলা ও পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য তাদের থানায় নিয়ে যান। প্রায় দুই ঘণ্টা পর তারা চলে যায়। এরপর আর কোনো সমস্যা ছিল না।’
তিনি আরও দাবি করেন, ‘বিষয়টি এখন কেবল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই সীমাবদ্ধ। সেখানে যা ছড়ানো হচ্ছে, তা মূলত বদনাম করা ও সস্তা প্রচারের চেষ্টা।’এই বক্তব্যের পর টিনা দাবিকে ঘিরে সমালোচনা আরও জোরালো হয়। রাজ্যসভার সদস্য প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদীসহ বিভিন্ন মহল থেকে তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী লেখেন, ‘ভারতে আমলাদের অসহিষ্ণু আচরণের এটি আরেকটি উদাহরণ। দুর্নীতি ও ক্ষমতার দম্ভের সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে অসহিষ্ণুতা। অথচ এরপরও তারা কার্যকর জবাবদিহির বাইরে থেকে যান।’
এদিকে বিজেপি-সমর্থিত ছাত্রসংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি) জানিয়েছে, মত প্রকাশের কারণে শিক্ষার্থীদের ‘গ্রেফতার’ করা অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং এটি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর সরাসরি আঘাত। এক্সে দেওয়া এক বিবৃতিতে সংগঠনটি প্রশ্ন তোলে, ‘মত প্রকাশ কবে থেকে অপরাধ হয়ে গেল?’বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘এই দমনমূলক পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে এবিভিপি এবং গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় শিক্ষার্থীদের পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াচ্ছে।’
কিউএনবি/আয়শা/২৩ ডিসেম্বর ২০২৫,/রাত ১০:৪৩