ডেস্ক নিউজ : দীর্ঘ নির্বাসিত জীবনের ইতি টেনে দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। প্রায় ১৮ বছর পর আগামী ২৫ ডিসেম্বর স্ত্রী ও কন্যাসহ সপরিবারে দুপুর ১২টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তিনি অবতরণ করবেন। বিমানবন্দর থেকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে তিনি সরাসরি পূর্বাচলের ৩০০ ফিট এলাকার সংবর্ধনাস্থলে যাবেন। সেখান থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে কিছু সময় কাটিয়ে গুলশানের বাসভবনে যাওয়ার কথা রয়েছে।
আজ (মঙ্গলবার) সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর কুড়িল থেকে সংবর্ধনা মঞ্চের পরবর্তী অংশ পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে তারেক রহমানকে স্বদেশে স্বাগত জানিয়ে লাগানো হয়েছে ব্যানার-ফেস্টুন। আর কুড়িল মোড় থেকে বেশ খানিকটা দূরে সড়কের উত্তর অংশে দক্ষিণমুখী করে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে তৈরি হচ্ছে ৪৮ ফুট বাই ৩৬ ফুটের বিশাল মঞ্চ। ইতোমধ্যে মঞ্চের মূল কাঠামোর কাজ শেষ। এখন শুধু ডেকোরেশনের কাজ বাকি। মঞ্চের দুই পাশে তাঁবু স্থাপন করা হয়েছে। রাস্তার ল্যাম্পপোস্টে লাগানো হচ্ছে মাইক।

তারেক রহমানের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে মঞ্চের কাজ তদারকি করছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের সিকিউরিটি ফোর্সের (সিএসএফ) সদস্যরা। মঞ্চের অদূরে পুলিশের উপস্থিতিও লক্ষ্য করা গেছে।
মঞ্চের কাজ শেষ পর্যায়ে : শামসুদ্দিন দিদার তারেক রহমানের দেশে ফেরার এখনো দুই দিন বাকি থাকলেও তাকে স্বাগত জানাতে এখনই বিভিন্ন জেলা থেকে নেতা-কর্মীরা ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন।
সরেজমিনে কুড়িল সংলগ্ন সংবর্ধনা মঞ্চের সামনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মীর উপস্থিতি দেখা গেছে। তাদের কেউ কেউ মঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে ফেসবুক লাইভ করছেন, আবার কেউবা ‘মা-মাটি ডাকছে, তারেক রহমান আসছে’, ‘বীরের বেশে তারেক রহমান, আসবে এবার বাংলাদেশে’— এমন নানা স্লোগান দিয়ে এলাকা মুখরিত করে তুলছেন।
বিমানবন্দর এলাকার পাশাপাশি পুরো রাজধানীর অলিগলি, দেয়াল ও বিভিন্ন স্থাপনায় তারেক রহমানকে স্বাগত জানিয়ে টাঙানো হয়েছে অসংখ্য ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার। নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের অংশ এবং দুই পাশের সড়কে শোভা পাচ্ছে তারেক রহমানের বিশালাকার ছবি ও ব্যানার। এ ছাড়া তৃণমূলের অনেক নেতা-কর্মীও ইতোমধ্যে ঢাকায় অবস্থান করছেন।
মৌলভীবাজার সদর থানা বিএনপির সদস্য শিমুল হোসেন তারেক রহমানের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ইতোমধ্যে ঢাকায় পৌঁছেছেন। মঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে শিমুল বলেন, “ওই দিন লাখো মানুষের সমাগম হবে। এত মানুষের ভিড়ে যদি প্রিয় নেতাকে দেখতে না পাই, সেই আশঙ্কায় দুই দিন আগেই ঢাকায় চলে এসেছি।”

মঞ্চের সামনে কথা হয় নওগাঁ থেকে আসা সাবেক ছাত্রদল নেতা ড. নয়নের সঙ্গে। তিনি বলেন, “প্রায় ১৮ বছর পর আমাদের অভিভাবক ও প্রিয় নেতা তারেক রহমান দেশে ফিরছেন। তার আগমনকে ঘিরে সারা দেশের নেতা-কর্মীদের মধ্যে আনন্দ-উচ্ছ্বাস বিরাজ করছে। আমরা কয়েকজন গতকাল রাতেই ঢাকায় চলে এসেছি। সারাদিন ৩০০ ফিট এলাকায় মঞ্চ তৈরির কাজ দেখি, শুধু রাতে কিছু সময়ের জন্য এক আত্মীয়ের বাসায় ঘুমাতে যাই।”
তিনি আরও বলেন, তারেক রহমান এই মঞ্চে বক্তব্য দেবেন। তাই চেষ্টা আছে একদম মঞ্চের সামনে থেকে প্রিয় নেতাকে একনজর দেখার। প্রস্তুত বুলেটপ্রুফ গাড়ি ও বাস
তারেক রহমানের ব্যবহারের জন্য বিদেশ থেকে আমদানি করা বিশেষ সুবিধাসম্পন্ন একটি বুলেটপ্রুফ ‘হার্ড জিপ’ গাড়ি দেশে আনা হয়েছে। টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো মডেলের এই গাড়িটি ইতোমধ্যে বিএনপির নামে নিবন্ধিত হয়েছে। এ ছাড়া তার জন্য একটি বুলেটপ্রুফ বাস আনা হয়েছে।
বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত তারেক রহমানের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা হিসেবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এ কে এম শামছুল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি তারেক রহমানের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্সের (সিএসএফ) সদস্যরা। এ ছাড়া, দলের বিশ্বস্ত নেতা-কর্মীদের সমন্বয়েও একটি বিশেষ নিরাপত্তা টিম গঠন করা হয়েছে।
এখনো চলছে বাসভবনের সংস্কার কাজ
তারেক রহমান দেশে ফেরার পর মা খালেদা জিয়ার বাসভবন ‘ফিরোজা’র পাশের ১৯৬ নম্বর বাড়িতে ওঠার কথা রয়েছে। তবে আজ মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) পর্যন্ত সেই বাড়ির সংস্কার কাজ চলতে দেখা গেছে। কোনো কারণে তার দেশে ফেরার আগে বাড়ির সংস্কার কাজ শেষ না হলে, মা খালেদা জিয়ার বাসভবন ‘ফিরোজা’য় তার জন্য তিনটি কক্ষ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর আহ্বায়ক আতিকুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, “বর্তমানে বাড়ির সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে।”

এর আগে আতিকুর রহমান এই প্রতিবেদককে জানিয়েছিলেন, তারেক রহমানের জন্য তার মা খালেদা জিয়ার বাসভবন ‘ফিরোজায়’ তিনটি কক্ষ বিশেষভাবে প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। বিভিন্ন রুটে ১০টি ট্রেন পাচ্ছে বিএনপি
তারেক রহমানকে সংবর্ধনা দিতে সারা দেশ থেকে নেতা-কর্মীরা ঢাকায় আসছেন। তাদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে বিএনপির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ ট্রেন ও অতিরিক্ত কোচ বরাদ্দ করেছে রেলওয়ে। পাশাপাশি ২৫ ডিসেম্বর বিশেষ ট্রেন চলাচলের সুবিধার্থে নিয়মিত চলাচলকারী তিনটি ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে।
বিএনপির চাহিদা অনুযায়ী কক্সবাজার-ঢাকা-কক্সবাজার, জামালপুর-ময়মনসিংহ-ঢাকা-জামালপুর, টাঙ্গাইল-ঢাকা-টাঙ্গাইল, ভৈরববাজার-নরসিংদী-ঢাকা-নরসিংদী-ভৈরববাজার, জয়দেবপুর-ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট-জয়দেবপুর (গাজীপুর), পঞ্চগড়-ঢাকা-পঞ্চগড়, খুলনা-ঢাকা-খুলনা, চাটমোহর-ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট-চাটমোহর, রাজশাহী-ঢাকা-রাজশাহী এবং যশোর-ঢাকা-যশোর রুটে বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করা হবে। এ বাবদ রেলওয়ে প্রায় ৩৬ লাখ টাকা রাজস্ব পাবে। বিশেষ ট্রেন এবং অতিরিক্ত কোচে দলীয় নেতাকর্মীদের যাতায়াতের ক্ষেত্রে শর্ত হিসেবে নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা-২০২৫ প্রতিপালন করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
২০ লাখ মানুষ সমাগমের প্রস্তুতি
বিএনপি নেতারা বলছেন, তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে সারা দেশের নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ অধীর অপেক্ষায় রয়েছেন। ২৫ ডিসেম্বর প্রিয় নেতাকে স্বাগত জানাতে ২০ লাখের বেশি মানুষের সমাগম ঘটানোর প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। দলের আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীসহ শীর্ষ নেতারা তাদের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে বিশাল বহরসহ ঢাকায় আসবেন।
কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক রাহাত হোসেন বলেন, “এই মুহূর্তে যদি জিজ্ঞাসা করেন আমাদের চেয়ারম্যানের আগমনে আমরা কেমন বোধ করছি, তবে শুধু একটি কথাই বলব— আমার জীবনে উপভোগ করা ৩০টি ঈদের আনন্দ একসঙ্গে পাওয়ার সমান আনন্দ এটি! আমরা আমাদের সাংগঠনিক অভিভাবককে কাছে পেতে যাচ্ছি; আশা করছি তার সরাসরি তত্ত্বাবধানে ছাত্রদল পৃথিবীর সেরা ছাত্রসংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।”

তিনি আরও বলেন, দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে তার আগমনে জনমনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। দেশবাসীর কাছে অনুরোধ করব, আগামী ২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমানের এই ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তনকে আরও আনন্দময় করে তুলতে সবাই পূর্বাচলের ৩০০ ফিটে চলে আসুন।
ফরিদপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এ কে এম কিবরিয়া বলেন, “আমাদের নেতা-কর্মীরা উল্লসিত এবং দীর্ঘ সময় পর তারেক রহমানের দেশে ফেরার খবরে ব্যাপক উদ্দীপনা বিরাজ করছে। এটি আমাদের দলের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। সারা দেশের বিএনপি নেতা-কর্মীরা ইতোমধ্যে সংবর্ধনা ও স্বাগত আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু করেছেন। ফরিদপুর থেকে ঢাকায় নেতা-কর্মীদের অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মতো হবে।”
তারেক রহমানকে অভ্যর্থনা জানাতে গঠিত কমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন যেন বিগত ৫৫ বছরের ইতিহাসকে ছাড়িয়ে যায় এবং আগামী ৫৫ বছরের ইতিহাসে যেন এমন ঘটনা আর না ঘটে— সেই লক্ষ্যে স্মরণীয় করে রাখার মতো সব আয়োজন করা হচ্ছে। আগামীকাল ২৪ ডিসেম্বর সারা দেশ থেকে নেতা-কর্মীরা ঢাকায় আসতে শুরু করবেন। আর ঢাকার আশপাশের এলাকার নেতা-কর্মীদের ২৪ তারিখ রাত ও ২৫ তারিখ সকালের মধ্যে ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
কিউএনবি/আয়শা/২৩ ডিসেম্বর ২০২৫,/রাত ৯:৩৩