রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:৫১ পূর্বাহ্ন

প্রতি ডলারে ব্যাংকের মুনাফা ১-২ টাকা

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০২২
  • ৯৯ Time View

 

ডেস্ক নিউজ : বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কাছ থেকে কম দামে ডলার কিনে বিক্রি করছে বেশি দামে। প্রতি ডলারে তারা ১ থেকে সর্বোচ্চ আড়াই টাকা মুনাফা করছে। ডলারপ্রতি ব্যাংকগুলোর মাত্রাতিরিক্ত মুনাফার কারণে রপ্তানিকারক ও প্রবাসীরা কম টাকা পাচ্ছেন। আবার তারা যখন ব্যাংক থেকে ডলার কিনেন, তখন বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এতে একদিকে বাড়ছে ব্যবসা খরচ, অন্যদিকে রেমিট্যান্সের অর্থ ব্যাংকে আসছে কম। সার্বিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অর্থনীতি। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী ডলারের ক্রয় ও বিক্রয় মূল্যের ব্যবধান ৫ পয়সার বেশি হতে পারবে না। এ নীতিমালাটি কেউ মানছে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, ওই নীতিমালাটি অনেক আগের। ডলারের বিপরীতে টাকার মান যখন ভাসমান করা হয়, তখন এই নীতিমালাটি তৈরি হয়। এটি এখন আন্তঃব্যাংক ডলার বাজারে প্রয়োগ করা হয়। ব্যাংক গ্রাহক সম্পর্কের মধ্যে এটি আর প্রয়োগ হয় না। ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মাঝেমধ্যে বাজারে ডলার বিক্রির মাধ্যমে হস্তক্ষেপ করছে। এটি নিয়েও আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) আপত্তি করেছে। তারা বলেছে, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সবকিছু চাহিদা ও সরবরাহের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। এ কারণে ব্যাংক গ্রাহক সম্পর্কের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক হস্তক্ষেপ করছে না।

সূত্র জানায়, আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে এখন প্রতি ডলার কেনাবেচা হচ্ছে ৮৬ টাকা করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও প্রতি ডলার কেনাবেচা করছে একই দরে। কিন্তু ব্যাংকগুলো অনেক ক্ষেত্রে ডলার কেনে ৮৬ টাকারও কম দামে, বিক্রি করে ৮৮ টাকার বেশি দামে। নগদ ডলার বিক্রি করছে সর্বোচ্চ ৯০ টাকা ৯০ পয়সা দরে। ব্যাংকিং খাতে মোট ডলারের জোগানের ৯৫ শতাংশই আসে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সের মাধ্যমে। এক্ষেত্রে গ্রাহকরা ডলারের দাম কম পাচ্ছেন। ডলারের ৯০ শতাংশই ব্যয় হচ্ছে আমদানি, ভ্রমণ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে। এসব খাতে বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ডলারের ক্রয় ও বিক্রয় মূল্যের মধ্যে এত ব্যবধান হওয়া ঠিক নয়। ব্যাংকিং পদ্ধতিগত মাধ্যমে একটি ডলার কিনে তা বিক্রি করলে যদি ১/২ টাকা মুনাফা হয়, তা অবশ্যই মাত্রাতিরিক্ত। এক্ষেত্রে লাগাম টানা উচিত। একজন রপ্তানিকারক তার ডলার বিক্রি করে আবার কিনতে গেলে এক থেকে দেড় টাকা বেশি খরচ করতে হয়। ডলারের দামের এই ব্যবধানের কারণে কার্ব মার্কেট শক্তিশালী হচ্ছে।

সূত্র জানায়, ব্যাংকগুলো প্রতি কার্যদিবসেই ডলারের একটি দর ঘোষণা করে। এটি তারা বাংলাদেশ ব্যাংককেও পাঠায়। এর ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৈরি প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সরকারি খাতের অগ্রণী ব্যাংক গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রতি ডলার নগদ কেনে ৮৮ টাকা ৭০ পয়সা দরে। তারা গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করে ৯০ টাকা ৫০ পয়সা দরে। এক্ষেত্রে প্রতি ডলারে ব্যাংক মুনাফা করছে ১ টাকা ৮০ পয়সা। অর্থাৎ ২ দশমিক ৩০ শতাংশ। গ্রাহকের রপ্তানি বিল তারা কেনে ৮৪ টাকা ৯৫ পয়সা দরে। আমদানির বিপরীতে ডলার বিক্রি করে ৮৬ টাকা ০৫ পয়সা দরে। এক্ষেত্রে প্রতি ডলারে মুনাফা করছে ১ টাকা ১০ পয়সা। অর্থাৎ ১ দশমিক ২৭ শতাংশ।

বেসরকারি খাতের মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক নগদ প্রতি ডলার কেনে ৮৭ টাকা ২৫ পয়সা দরে, বিক্রি করে ৯০ টাকা দরে। প্রতি ডলারে মুনাফা করছে ২ টাকা ৭৫ পয়সা। অর্থাৎ ৩ দশমিক ১৫ শতাংশ। তারা গ্রাহকদের কাছ থেকে টেলিগ্রাফিক ট্রান্সফার (টিটি) বা ড্রাফট আকারে ডলার কেনে ৮৫ টাকা ০৫ পয়সা দরে, বিক্রি করে ৮৬ টাকা ০৫ পয়সা দরে। মুনাফ করছে ১ টাকা। অর্থাৎ ১ দশমিক ১৮ শতাংশ। প্রাইম ব্যাংক নগদ কেনে ৮৯ টাকা দরে, বিক্রি করে ৯০ টাকা ৫০ পয়সা দরে। মুনাফা করছে ১ টাকা ৫০ পয়সা। গ্রাহকের কাছ থেকে টিটি বা ড্রাফট কেনে ৮৫ টাকা ০৫ পয়সায়, বিক্রি করে ৮৬ টাকা ০৫ পয়সায়। মুনাফা করছে ১ টাকা।

আল-আরাফহ্ ব্যাংক প্রতি ডলার ক্রয় করে ৮৫ টাকা ০৫ পয়সায়, বিক্রি করে ৮৬ টাকা ০৫ পয়সায়। প্রতি ডলারে মুনাফা করছে ১ টাকা। তারা নগদ ডলার কিনছে ৮৮ টাকা ৬০ পয়সা দরে, বিক্রি করে ৯০ টাকা ৬০ পয়সায়। প্রতি ডলারে মুনাফা ২ টাকা। উত্তরা ব্যাংক নগদ ডলার বিক্রি করে ৮৮ টাকা ৭৫ পয়সা দরে, ক্রয় করে ৯০ টাকা ২৫ পয়সা দরে। মুনাফা ১ টাকা ৫০ পয়সা। গ্রাহকের কাছে টিটি ক্লিন বিক্রি করে ৮৬ টাকা ০৫ পয়সা দরে, ক্রয় করে ৮৫ টাকা ০৫ পয়সা দরে। মুনাফা হচ্ছে ১ টাকা। 

ব্যাংক এশিয়া নগদ ডলার কেনে ৮৪ টাকা ৫০ পয়সা দরে, বিক্রি করে ৮৬ টাকা ৮০ পয়সা দরে। প্রতি ডলারে মুনাফা ২ টাকা ৩০ পয়সা। বাণিজ্যিক খাতে ৮৫ টাকা ২৫ পয়সা দরে বিক্রি করে, ক্রয় করে ৮৪ টাকা ২৫ পয়সা দরে। মুনাফা হচ্ছে ১ টাকা। এবি ব্যাংক নগদ ডলার কিনছে ৮৮ টাকা ৯৫ পয়সায়, বিক্রি করছে ৯০ টাকা ৯৫ পয়সায়। প্রতি ডলারে মুনাফা ২ টাকা। টিটি কিনছে ৮৫ টাকা ০৫ পয়সায়, বিক্রি করছে ৮৬ টাকা ০৫ পয়সায়। প্রতি ডলারে মুনাফা ১ টাকা। পূবালী ব্যাংক নগদ প্রতি ডলার বিক্রি করছে ৯০ টাকা ৫০ পয়সা দরে। কিনছে ৮৮ টাকা ৫০ পয়সা দরে। প্রতি ডলারে মুনাফা ২ টাকা। রূপালী ব্যাংক নগদ ডলার বিক্রি করছে ৯০ টাকা ৪০ পয়সা দরে, কিনছে ৮৮ টাকা ৫০ পয়সা দরে। এভাবে সব ব্যাংকই কম দামে ডলার কিনে বেশি দামে বিক্রি করছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ৯০ টাকা বা এর বেশি দরে নগদ ডলার বিক্রি করছে, সোনালী, উত্তরা, বাংলাদেশ কৃষি, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, ব্র্যাক ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক ও জনতা ব্যাংক।

কম দামে ডলার বিক্রির কারণে রপ্তানিকারক ও প্রবাসীরা রেমিট্যান্সের বিপরীতে টাকা পাচ্ছেন কম। এদিকে আমদানিকারকরা বেশি দামে ডলার কেনায় আমদানি পণ্যের মূল্য বেশি পড়ছে, যা বাজারে মূল্যস্ফীতির হার বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। প্রবাসীদের রেমিট্যান্সের একটি অংশ নগদ আকারে দেশে আসছে। এগুলো ব্যাংকে বিক্রি করতে গেলে দাম কম পাচ্ছে। অথচ কার্ব মার্কেটে গেলে পাওয়া যাচ্ছে বেশি দাম। কার্ব মার্কেটে ৯১-৯২ টাকা দরে ডলার কেনা হচ্ছে। ফলে নগদ রেমিট্যান্সের একটি অংশ কার্ব মার্কেটে চলে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ডলারের ক্রয় ও বিক্রয় মূল্যের ব্যবধান কমানো হলে ব্যবসা খরচ যেমন কমবে, তেমনই মূল্যস্ফীতির ওপরও চাপ কিছুটা কমানো সম্ভব হবে।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/৩১শে জানুয়ারি, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ/সন্ধ্যা ৭:০৫

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit