শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ০২:০০ পূর্বাহ্ন

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নামে সড়কে চাঁদা তোলা অনুচিত

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০২২
  • ১১৮ Time View

 

ডেস্ক নিউজ : মসজিদ-মাদরাসা নির্মাণ করা, তার জন্য অর্থ সংগ্রহ করা, দ্বিনি মাহফিলের আয়োজন করা নিঃসন্দেহে সওয়াবের কাজ। প্রত্যেকের উচিত, সামর্থ্য অনুযায়ী এসব কাজে আত্মনিয়োগ করা। কারণ এসব কাজে সহযোগিতা করা পরকালের জন্য বিনিয়োগের শামিল। এসব প্রতিষ্ঠান যত দিন টিকে থাকবে, তত দিন এর সদকায়ে জারিয়া আমলনামায় যোগ হতে থাকবে।

কিন্তু এগুলোর জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে এমন পথ অবলম্বন করা উচিত নয়, যা ইসলামের সম্মান ক্ষুণ্ন করে। বর্তমানে রাস্তা-ঘাটে দেখা যায়, কিছু মানুষ আলেমদের বেশ নিয়ে বিভিন্ন মসজিদ-মাদরাসার নামে চাঁদা তুলে বেড়ায়। তাদের সঙ্গে কথা বললে বোঝা যায়, তারা অনেকেই আলেম নয়। কিন্তু সাধারণ মানুষ তাদের আলেম ভেবে আলেমদের প্রতি নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে। রাস্তা-ঘাটে কাউন্টার বসিয়ে ও দূরপাল্লার বাস স্টেশনে বাসে বাসে চাঁদা তোলা ইসলামের সম্মান বৃদ্ধি করে কি না—তা চিন্তা করে দেখা উচিত।

মহানবী (সা.)-এর যুগেও অনেক মসজিদ-মাদরাসা নির্মিত হয়েছে। এরপর সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন ও তাবে-তাবেঈনের যুগেও অনেক মসজিদ-মাদরাসা, দ্বিনি প্রতিষ্ঠানের সৃষ্টি হয়েছে; কিন্তু এগুলোর জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে কেউ এমন কোনো পদ্ধতি অবলম্বন করেছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না। দ্বিনি কাজে চাঁদা কালেকশনের এমন পদ্ধতি ভিক্ষাবৃত্তির মতো হওয়ায় তা ইসলামের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। রাসুল (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের যুগে মসজিদ নির্মাণ, রাস্তাঘাট নির্মাণ, উন্নয়ন, কূপ খনন ইত্যাদি কাজের খরচ বাইতুল মাল থেকে বহন করা হতো। (আল মাওসুআতুল ফিকহ্যিয়া আল কুয়েতিয়্যাহ : ৯/২৭৫)

রাস্তাঘাটে মানুষকে আঁকড়ে ধরে ভিক্ষাবৃত্তি করা ইসলাম পছন্দ করে না। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, সে ব্যক্তি প্রকৃত মিসকিন নয়, যাকে এক দুই লোকমা ফিরিয়ে দেয় (যথেষ্ট হয়) বরং সে-ই প্রকৃত মিসকিন যার কোনো সম্পদ নেই, অথচ সে (চাইতে) লজ্জাবোধ করে অথবা লোকদের আঁকড়ে ধরে ভিক্ষা করে না। ’ (বুখারি, হাদিস : ১৪৭৬)

এখন প্রশ্ন হলো, চাঁদা করে অর্থ সংগ্রহ না করলে আবাসিক ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কী হবে? যেগুলোর আয়ের উৎস জনসাধারণের অনুদান। এর জবাব হলো, নবীজি (সা.)-এর যুগেও ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল। মদিনায় হিজরতের পর মদিনায় মসজিদে নববী প্রতিষ্ঠিত হলে সেখানে ‘সুফফা’ নামক একটি শিক্ষাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই শিক্ষাকেন্দ্রের ছাত্রদের ব্যয়ভার ব্যক্তিগত ও সামাজিক উদ্যোগে পূরণ করা হতো। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘আমিও আসহাবে সুফফার একজন ছিলাম। যখন সন্ধ্যা হতো, আমরা সবাই নবী (সা.)-এর কাছে চলে যেতাম। তিনি একজন-দুজন করে ধনী সাহাবিদের কাছে সোপর্দ করতেন। যারা অবশিষ্ট থাকত তাদের তিনি নিজের সঙ্গে খাবারে শরিক করতেন। খাওয়ার পর আমরা রাতে মসজিদে ঘুমাতাম। ’

এ ছাড়া মসজিদে নববীর দুটি খুঁটির মধ্যে একটি রশি বাঁধা থাকত। আনসার সাহাবিরা বাগান থেকে থোকা থোকা ফল এনে আসহাবে সুফফার জন্য তাতে ঝুলিয়ে রাখতেন। আসহাবে সুফফা তা লাঠি দ্বারা নামিয়ে খেতেন। মুয়াজ বিন জাবালের (রা.) ব্যবস্থাপনা ও দেখাশোনা করতেন। (সিরাতে মোস্তফা : ১/৪৪৮)

বর্তমান যুগে ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যয়ভার পরিচালনার ক্ষেত্রে উল্লিখিত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করা যেতে পারে। বাংলাদেশের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোও একসময় এই পদ্ধতিতে পরিচালিত হতো। শুধু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নয়, যারা সাধারণ শিক্ষার জন্য অন্য এলাকায় থাকতে হতো, তাদের খাবারের ব্যবস্থাও ধনীদের বাড়িতে করা হতো। যেমন—জায়গির থাকা ইত্যাদি। এবং তাদের খুব সম্মান করা হতো। মাদরাসাগুলোর মধ্যে যারা দরিদ্র ছিল, তাদের খাবারের ব্যবস্থা বিভিন্ন ধনীর বাড়িতে করা হতো। অথবা বিত্তবানরা নিজেরাই মাদরাসার ফান্ডে দরিদ্র ছাত্রদের জন্য অনুদান দিয়ে যেতেন। কিন্তু রাস্তা-ঘাটে মানুষের কাছে হাত পাতার এই চিত্র আগে সম্ভবত এই অঞ্চলেও ছিল না।

বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে প্রচারিত রিপোর্ট থেকে জানা যায়, কখনো কখনো বিভিন্ন সিন্ডিকেটের লোকরা বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নাম ভাঙিয়ে চাঁদা তুললেও বাস্তবে এই টাকা কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে যায় না। এভাবে প্রতারণা করে টাকা তোলা ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা অন্যায়ভাবে পরস্পরের মাল গ্রাস কোরো না এবং জানা সত্ত্বেও অসৎ উপায়ে লোকের সম্পদ গ্রাস করার উদ্দেশে তা বিচারকের কাছে নিয়ে যেয়ো না। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৮)

আবার কিছু কিছু লোক এমন আছে, যারা বাস্তবেই বিভিন্ন মাদরাসা-মসজিদ বা বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের হয়ে কমিশনের ভিত্তিতে চাঁদা তোলে। এদের নির্দিষ্ট কোনো বেতন থাকে না, তারা সারা দিন যা কালেকশন করতে পারে, তার ওপর ভিত্তি করে একটা পার্সেন্টেজ তারা নিয়ে যায়। এ ধরনের চুক্তিকে চাঁদা তোলা হলেও তা ইসলামের দৃষ্টিতে জায়েজ নয়। তবে হ্যাঁ, তাদের বেতন যদি নির্ধারিত থাকে এবং পার্সেন্টেজ না নিয়ে থাকে, তাহলে সে ক্ষেত্রে তাদের বেতন নাজায়েজ বলা যাবে না। (আদ্দুররুল মুখতার : ২/৪৬, ফাতাওয়ায়ে রহিমিয়া : ৯/৩০৬, ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ১০/৪০০০)

তা ছাড়া কালেকশনের কাজে শিশুদের ব্যবহার করা আরো জঘন্য ব্যাপার। একে শিশুশ্রম বলেও আখ্যা দেওয়া যায়, যা রাষ্ট্রীয় আইনে নিষিদ্ধ।

পরিশেষে সামর্থ্য অনুযায়ী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচর্যা করা, অসহায় দরিদ্রদের খাবারের ব্যবস্থা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। আমাদের উপার্জনের মধ্যে তাদের হক আছে। এই হক তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ভালো কাজ এটা নয় যে তোমরা তোমাদের চেহারা পূর্ব ও পশ্চিম দিকে ফেরাবে; বরং ভালো কাজ হলো যে ঈমান আনে আল্লাহ, শেষ দিবস, ফেরেশতাগণ, কিতাব ও নবীদের প্রতি এবং যে সম্পদ প্রদান করে তার প্রতি আসক্তি সত্ত্বেও নিকটাত্মীয়দের, এতিম, অসহায়, মুসাফির ও সাহায্যপ্রার্থীকে এবং বন্দিমুক্তিতে এবং যে সালাত কায়েম করে, জাকাত দেয় এবং যারা অঙ্গীকার করে তা পূর্ণ করে, যারা ধৈর্যধারণ করে কষ্ট ও দুর্দশায় ও যুদ্ধের সময়ে। তারাই সত্যবাদী এবং তারাই মুত্তাকি। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৭৭)

উল্লিখিত আয়াতে মহান আল্লাহ আমাদের উপার্জনে কার কার হক আছে তা উল্লেখ করে দিয়েছেন। কাজেই আমাদের উচিত, সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের হকগুলো তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া।

মহান আল্লাহ সবাইকে সুবুদ্ধি দান করুন।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/২৮শে জানুয়ারি, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ/|দুপুর ২:৩৯

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit