বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৩৯ অপরাহ্ন

পরকিয়া যেভাবে সমাজ ও ঈমানের ধ্বংস ডেকে আনে

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৫
  • ১৩ Time View

ডেস্ক নিউজ : মাওলানা শরিফ হাসান শাহীন

কিন্তু দুঃখজনকভাবে আজকের সমাজে এই পবিত্র প্রতিষ্ঠানটি ভয়াবহ সংকটের মুখে। বিবাহবিচ্ছেদ, পরকিয়া, অনৈতিক সম্পর্ক, পারিবারিক অশান্তি,এসব আমাদের সমাজকে ধীরে ধ্বংস করছে।

ইসলামি পরিবারব্যবস্থার মূলনীতি
ইসলামের দৃষ্টিতে বিবাহ কোনো সামাজিক চুক্তি নয়, এটি এক পবিত্র ইবাদত। আল্লাহ তাআলা বলেন, وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَوَدَّةً وَرَحْمَةً আর তার নিদর্শনসমূহের মধ্যে এটি অন্যতম যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকেই জীবনসঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও, এবং তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া স্থাপন করেছেন। (সুরা রুম ২১) এ আয়াতের মধ্যমে আল্লাহ তাআলা বুঝিয়েছেন, পরিবারের মূল ভিত্তি হলো ভালোবাসা (মাওয়াদ্দাহ) ও দয়া (রাহমাহ)। যেখানে এই দুইটি গুণ অনুপস্থিত, সেখানে সংসার টিকে না।

আজকের সমাজের সংকট

বর্তমান সমাজে দেখা যাচ্ছে, বিবাহবিচ্ছেদের হার অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরকীয়া সম্পর্ক সামাজিক মাধ্যম ও অবাধ মেলামেশার মাধ্যমে ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। নারী-পুরুষের মধ্যে থেকে হায়া ও পর্দা একেবারেই উঠে গেছে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারস্পরিক সহনশীলতা ও ত্যাগের মানসিকতা হারিয়ে যাচ্ছে।
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 

أَبْغَضُ الْحَلَالِ إِلَى اللَّهِ الطَّلَاقُ আল্লাহর নিকট সবচেয়ে ঘৃণিত হালাল বিষয় হলো তালাক। (সুনান আবি দাউদ: ২১৭৭) এই হাদিসের মাধ্যমে বোঝা যায়, তালাক ইসলাম অনুমোদন করলেও তা একান্তই শেষ উপায়, কোনো ছোট কারণে বা রাগের বশে এটি করা উচিত নয়।

পরকিয়া: সমাজ ও ঈমানের ধ্বংস

পরকিয়া ইসলামে কবিরা গুনাহ। কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, 

وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَى إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا ব্যভিচারের নিকটেও যেয়ো না; নিশ্চয়ই তা অশ্লীল কাজ এবং নিকৃষ্ট পথ। (সুরা ইসরা ৩২) ব্যভিচার করো না বলেননি, বরং বলেছেন, তার নিকটেও যেয়ো না অর্থাৎ, এমন কোনো অবস্থাও গ্রহণ করো না যা এই পথে নিয়ে যায়; পর্দা ভঙ্গ, অশ্লীল কথা, সম্পর্কের অপব্যবহার ইত্যাদি। রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

 

مَا تَرَكْتُ بَعْدِي فِتْنَةً أَضَرَّ عَلَى الرِّجَالِ مِنَ النِّسَاءِ আমি আমার পর এমন কোনো ফিতনা রেখে যাচ্ছি না, যা পুরুষদের জন্য নারীদের চেয়ে বেশি ক্ষতিকর। (সহিহ বুখারি: ৫০৯৬) আজকের সমাজে এই হাদিসের বাস্তব প্রতিফলন আমরা স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছি। সামাজিক মাধ্যম, টেলিভিশন, অবাধ বন্ধুত্ব,সবই মানুষকে পাপের দ্বারে নিয়ে যাচ্ছে।

বিবাহবিচ্ছেদের প্রধান কারণ
১. দ্বীনি জ্ঞানের অভাব ২.রপারস্পরিক সহনশীলতার ঘাটতি ৩. অহংকার ও আত্মকেন্দ্রিকতা ৪. সামাজিক মিডিয়া ও পর্নোগ্রাফির প্রভাব ৫. আত্মীয়-স্বজনের অযথা হস্তক্ষেপ ৬. আল্লাহভীতি ও তাকওয়ার অভাব

আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের সঙ্গে সুন্দর আচরণ করো। (সুরা নিসা:১৯) এটি ইসলামি দাম্পত্য জীবনের মূলনীতি। যখন এই আদেশ ভুলে যাওয়া হয়, তখনই বিবাহবিচ্ছেদ অনিবার্য হয়ে পড়ে।

 

ইসলামের সমাধান
১. দ্বীনি শিক্ষা ও সচেতনতা বাড়ানো, পরিবার গঠনে দ্বীনি নীতিমালা শেখানো। ২. তাকওয়া ও আল্লাহভীতি প্রতিষ্ঠা, স্বামী-স্ত্রী উভয়ের অন্তরে আল্লাহর ভয় জাগ্রত করা। ৩. সংযম ও পর্দা রক্ষা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সীমা নির্ধারণ করা। ৪. কোনো সমস্যা হলে আলেম বা অভিজ্ঞ ব্যক্তির পরামর্শ নেওয়া। ইসলামি পরিবারব্যবস্থা আল্লাহর এক মহান নিয়ামত।
এটি সমাজকে দেয় স্থিতি, শান্তি ও নিরাপত্তা। কিন্তু যখন মানুষ আল্লাহর বিধান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তখন সম্পর্কগুলো হয়ে যায় কৃত্রিম, ভালোবাসা হয়ে যায় স্বার্থনির্ভর। আজ আমাদের ফিরে আসতে হবে সেই দ্বীনি পরিবারব্যবস্থায়, যেখানে থাকবে ভালোবাসা, পরস্পর শ্রদ্ধা, ত্যাগ, এবং সর্বোপরি আল্লাহভীতি। رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিদেরকে আমাদের চোখের শীতলতা দান করো, এবং আমাদেরকে মুত্তাকিদের জন্য আদর্শ বানিয়ে দাও। (সুরা ফুরকান ৭৪)

 

 

কিউএনবি/আয়শা/১৫ অক্টোবর ২০২৫,/বিকাল ৪:৪৩

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit