স্পোর্টস ডেস্ক : মহাকালের গর্ভে হারিয়ে গেল আরেকটি বছর। বিদায়ি বছরে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে ফুটবল ও ক্রিকেটের বাইরে অন্যান্য খেলায় সাফল্য, ব্যর্থতা ও বিতর্ক হেঁটেছে পাশাপাশি
ব্যর্থ জাতীয় হকি দল
যুব হকি বিশ্বকাপের সাফল্য ছাড়া বছরজুড়ে আলোচনার বাইরে ছিল দেশের হকি। ঘরোয়া লিগ-টুর্নামেন্ট এ বছরও আলোর মুখ দেখেনি। আন্তর্জাতিক আসরেও নিজেদের মেলে ধরতে পারেনি বাংলাদেশ জাতীয় দল। বিশেষ করে এএইচএফ কাপে। আগের আসরগুলোয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রেকর্ড থাকলেও ২০২৫ সালে ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ লাল-সবুজের দল। আসরে দেশসেরা খেলোয়াড় রাসেল মাহমুদকে দলে না নিয়ে বিতর্কের জন্ম দেয় হকি ফেডারেশন। এএইচএফ কাপের ব্যর্থতার পর ভারতের মাটিতে এশিয়া কাপ এবং সবশেষ ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজে সাফল্যহীন বাংলাদেশ জাতীয় হকি দল।
কাবাডিতে উজ্জ্বল নারীরা
কাবাডিতে দারুণ এক বছর পার করেছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে নারী কাবাডি দল। ঘরের মাঠে নারী কাবাডি বিশ্বকাপে ব্রোঞ্জপদক জয় বছরের সেরা সাফল্যের একটি।
এছাড়া মার্চে ইরানের তেহরানে অনুষ্ঠিত এশিয়ান কাবাডি চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ জেতে মেয়েরা। এশিয়ান ইয়ুথ গেমসে কাবাডিতে বাংলাদেশ দুই বিভাগেই ব্রোঞ্জপদক জেতে।
আরচারিতে আলিফের বছর
সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপ আরচারির দ্বিতীয় লেগে ব্যক্তিগত রিকার্ভ ইভেন্টে স্বর্ণ জেতেন আবদুর রহমান আলিফ। আন্তর্জাতিক আসরে এটি তার ব্যক্তিগত সেরা সাফল্য। ঘরের মাঠে এশিয়ান আরচারির মিশ্র দ্বৈতে হিমু-বন্যা জুটি মিলে রুপা জেতেন। কম্পাউন্ড থেকে ব্রোঞ্জ জেতেন কুলসুম। মাঠের সাফল্যের পাশাপাশি সাংগঠনিক দিক থেকেও এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ আরচারি ফেডারেশন। দক্ষিণ কোরিয়ার থমাস হানকে ভোটে পরাজিত করে এশিয়ান আরচারির সভাপতি নির্বাচিত হন বাংলাদেশের আরচারিকে এগিয়ে নেওয়ার কারিগর কাজী রাজীব উদ্দীন আহমেদ চপল।
ব্যাডমিন্টনে ইতিহাস
ব্যাডমিন্টনের পাঁচ দশকের ইতিহাসে যা ঘটেনি, তা এ বছর করে দেখিয়েছিলেন বাংলাদেশের শাটলাররা। ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত ইউনেক্স-সানরাইজ বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল চ্যালেঞ্জ টুর্নামেন্টের মিশ্র দ্বৈতের ফাইনালে উঠে রুপা জেতে বাংলাদেশের আল আমিন জুমার-ঊর্মি আক্তার জুটি। আন্তর্জাতিক আসরে এটিই বাংলাদেশের সেরা সাফল্য। সেই সাফল্যের পালে জোর হাওয়া দিয়ে আন্তর্জাতিক ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট থেকে দেশকে প্রথমবার স্বর্ণপদক এনে দেয় আবদুল জহির তানভীর-গৌরব সিংহ জুটি। পুরুষ দ্বৈতে এ পদক লাভ করেন তারা।
সলিডারিটি গেমসে সাফল্য
সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে ইতিহাস রচনা করেন বাংলাদেশের টেবিল টেনিসের দুই পরিচিত মুখ অভিজ্ঞ জাভেদ আহমেদ ও উদীয়মান প্রতিভা খৈ খৈ সাই মার্মা। মিশ্র দ্বৈতে রুপা জেতেন তারা। টিটির ইতিহাসে এটিই বাংলাদেশের সেরা সাফল্য। একই গেমসের উশু ইভেন্ট থেকে বাংলাদেশের শিখা খাতুন ৫৬ কেজি ওজন শ্রেণিতে ব্রোঞ্জপদক জেতেন। ভারোত্তোলনে তিনটি ব্রোঞ্জ
জেতেন মারিজয়া আক্তার ইকরা।
এশিয়ান ইয়ুথ প্যারা গেমসে তিন স্বর্ণ জয়
দুবাইয়ে এশিয়ান ইয়ুথ প্যারা গেমসে তিনটি স্বর্ণ ও দুটি ব্রোঞ্জপদক জেতেন বাংলাদেশের প্রতিবন্ধী অ্যাথলেটরা। চৈতী
রানী দেব ১০০ মিটার স্প্রিন্ট ও জ্যাভলিন থ্রোয়ে দুটি স্বর্ণ এবং শহিদুল্লাহ সাতারে একটি স্বর্ণ জেতেন। এছাড়া শহিদুল্লাহ সাঁতারে আরেকটি ব্রোঞ্জ এবং মেয়েদের হুইলচেয়ার বাস্কেটবল দল একটি ব্রোঞ্জ জেতে।
রোমান-জহিরদের দেশত্যাগ
আলোর নিচে অন্ধকারের মতো ঘটনাও ঘটেছে ২০২৫ সালে। বাংলাদেশের আরচারির তিন তারকা রোমান সানা, দিয়া সিদ্দিকী এবং হাকিম আহমেদ রুবেল দেশ ছেড়ে পাড়ি জমান মার্কিন মুলুকে। তাদের দেখানো পথে হাঁটেন ২০০ মিটার স্প্রিন্টের রাজা জহির রায়হানও।
কমিটিতে রদবদল ও বিওএ’র নির্বাচন
বছরজুড়েই বিভিন্ন ফেডারেশনের কমিটিতে চলেছে রদবদল। এর মধ্যে শুটিং, আরচারি এবং মহিলা ক্রীড়া সংস্থা উল্লেখযোগ্য। তবে নতুন কমিটি নিয়ে নানা বিতর্ক এবং প্রশ্ন উঠেছে। অনেকে আন্দোলনেও নেমেছেন।
কিউএনবি/খোরশেদ/২৯ ডিসেম্বর ২০২৫,/দুপুর ১২:০০