মোঃ আফজাল হোসেন, ফুলবাড়ী, দিনাজপুর প্রতিনিধি : দেশের উত্তরাঞ্চলের দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে ছয় লাখ মেট্রিক টন কয়লা মজুদ। প্রশাসনিক জটিলতার কারণে কয়লা বিক্রি করতে পারছে না খনি কর্তৃপক্ষ। এতে বিপুল পরিমাণ কয়লা রাখার জায়গা না থাকায় খনিতে বাড়ছে দূর্ঘটনার আশঙ্কা। দেশের একমাত্র লাভজনক বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি।
বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র কয়লা জ্বালানিতে ব্যবহার করতে না পারায় খনিতে উত্তোলনকৃত কয়লার মজুদ দিন দিন বেড়েই চলেছে। এখানে কয়লা রাখার কোন জায়গা নেই। পেট্রোবাংলা কয়লা বিক্রিতে জোর দিচ্ছেনা। ২০০৫ সাল হতে বাণিজ্যিকভাবে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে কয়লা উত্তোলন শুরু হয়। বর্তমান কয়লা খনিটি সাফল্যের সাথে পরিচালনা হয়ে আসছে। ২০১১-২০১২-২০১৩-২০১৪-২০১৫-২০২৫ ১৭ বছরে শ্রেষ্ঠ করদাতা হিসেবে পুরস্কার প্রাপ্ত হন খনিটি। ২০০৫ সাল হতে কয়লা খনিটি ভ্যাট-ট্যাক্স, রয়্যালিটি, কাস্টমস্ ডিউটি ও অন্যান্য রাজস্ব বাবদ প্রায় ৫৫ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেন।
উত্তরাঞ্চলের একমাত্র সরকারি রাজস্ব আয়ের একটি মাত্র প্রতিষ্ঠান কয়লা খনি। ২০০৫ সাল থেকে বড়পুকুরিয়ার উৎপাদিত কয়লা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ইট ভাটা ও বড়পুকুরিয়া কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার হলেও জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একক সিদ্ধান্তে বর্তমানে কেবলমাত্র তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহার করা হচ্ছে উৎপাদিত কয়লা। দীর্ঘদিন তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইউনিট বন্ধ থাকার কারণে কয়লা ব্যবহার হচ্ছে না। বড়পুকুরিয়া কোল ইয়ার্ডের ধারণ ক্ষমতা ২.২০ লক্ষ টনের বিপরীতে প্রায় ৫ লক্ষ টন কয়লা মজুদ করে রাখা হয়েছে।
বর্তমানে ৫০ ফুটের বেশি উচ্চতায় কয়লা জমিয়ে রাখার ফলে ধ্বংস হচ্ছে কয়লা। বড়পুকুরিয়ার কয়লা বিক্রি করা না হলে বড় ধরনের দূর্ঘটনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চলতি মাসে দেওয়াল ধংসে পড়েছে। অল্পের জন্য রক্ষা পায় দূর পাল্লার ভারী যানবাহন। কারণ পাশ্বেই রয়েছে মহাসড়ক। স্বাভাবিক ভাবে ৫-৭ ফুট উচ্চতায় রাখা হয় কয়লা। বড়পুকুরিয়া কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ (পিডিবি) জ্বালানীতে তারা কয়লা ব্যবহার করতে পারছে না। ডমিস্টিক ও ইন্ডাষ্টিয়াল এ কয়লার চাহিদা থাকা সত্ত্বে ও তাদের কাছে কয়লা বিক্রির অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।
বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির প্রতি টন কয়লা ১৭৬ ডলার অথচ বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) কয়লা খনিকে ৯১-১০৭ ডলার করে মূল্য পরিশোধ করায় কয়লা খনিটি গত কয়েক বছরে বিপুল পরিমান লোকসানের সম্মুখীন হয়েছে। বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিটি যাতে বন্ধ হয়ে যায় এবং বিপদে পড়ে সে কারণে লাভজনক প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করার ষড়যন্ত্র চলছে। পিডিবি একমাত্র বড়পুকুরিয়া কয়লা ক্রয়ের গ্রাহক। বিদ্যুৎ বিভাগ ও পিডিবির কর্মকর্তারা কয়লা খনির পরিচালনা পর্ষদের পদ বাগিয়ে নিয়ে ক্রেতা হয়ে কয়লার মূল্য নির্ধারনে বিক্রেতার ভূমিকা পালন করছে। বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে প্রায় ১৫-২০ হাজার পরিবার তাদের জীবিকা হারানো সহ আর্থিক ভাবে সংকটে পড়বে।
৬ দফা দাবীতে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি শ্রমিক ও কর্মচারি ইউনিয়ন সংবাদ সম্মেলন এর মাধ্যমে দাবী আদায়ের লক্ষ্যে গত ২২ শে ডিসেম্বর শ্রমিক ও কর্মচারি ইউনিয়ন চত্ত¦রে সংগঠনের সভাপতি আবুল কাশেম শিকদার ও সাধারন সম্পাদক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম দাবী আদায়ের লক্ষ্যে বক্তব্য রাখেন। এ সময় বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি শ্রমিক ও কর্মচারি ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রাহেনুল ইসলাম, সিনিয়র সভাপতি রবিউল ইসলাম, কুলি লোড-আনলোড কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি শওকত আলী সহ সংগঠনের নেতৃ বিন্দু উপস্থিত ছিলেন।
বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির উয়ার্ডে যে পরিমান কয়লা মজুদ বাড়ছে সেই কয়লা বিক্রির প্রক্রিয়া না করলে এখানে বড় ধরনের দূর্ঘটনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কয়লার দাম কমিয়ে দেওয়ায় কর্মকর্তা, কর্মচারীরা সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। খনিটি বন্ধ হয়ে যাক এ নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। তাই ৬ দফা দাবী মেনে নিয়ে কয়লা বিক্রির প্রক্রিয়া করার দাবী জানান। দাবী মানা না হলে আগামীতে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবেন বলে ঘোষণা দেন। এ বিষয়ে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বদলি হয়ে যাওয়ায় কথা বলা সম্ভব হয় নি।
কিউএনবি/আয়শা/২৭ ডিসেম্বর ২০২৫,/বিকাল ৪:০০