রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:১৯ পূর্বাহ্ন

হাজারো শিশুর তুলিতে ফুটে উঠলো জুলাই অভ্যুত্থান থেকে মুক্তিযুদ্ধ

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫
  • ২০৬ Time View

ডেস্ক নিউজ : ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল সাড়ে ৯টা। আজ শুক্রবার ছুটির দিনের এই সকালেই হাজার হাজার শিশুর পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে রাজধানীর অভিজাত আবাসিক এলাকা বসুন্ধরা। কারো বয়স ৯ বছর, কারো আবার ১৫। সবার হাতে ছবি আকার ‌‘ড্রয়িং বোর্ড’। বাবা-মায়ের হাত ধরে কেউ এসেছেন উত্তরা থেকে, কেউ আবার মুন্সীগঞ্জ থেকে। সবার গন্তব্য আবাসিক এলাকার এন ব্লকে অবস্থিত বসুন্ধরা পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ। সেখানে যে আয়োজন করা হয়েছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ওপরে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা।

বসুন্ধরা পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের আয়োজনে আজ সকাল সোয়া ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত বিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও ইনডোর স্টেডিয়ামে তিনটি ক্যাটাগরিতে চলে এই ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা। 

স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রতিযোগিতায় নিবন্ধন করেছিলেন সাড়ে ৯ হাজার শিক্ষার্থী। সকাল ১০টায় প্রতিযোগিতা শুরুর কথা থাকলেও দূর-দূরান্ত থেকে আসা অনেক প্রতিযোগীর অভিভাবক আয়োজক কর্তৃপক্ষকে ফোনে কিছুটা অপেক্ষা করতে অনুরোধ করেন। তাদের কেউ ভোরে রওনা হয়েছিলেন গাজীপুর থেকে, কেউ মুন্সীগঞ্জ, কেউ নারায়ণগঞ্জ, কেউ আবার নরসিংদী থেকে। তাদের অনুরোধ ও প্রতিযোগী শিশুদের নাস্তার সময় দিতে প্রতিযোগিতা সোয়া ১০টায় শুরু করা হয়। সাড়ে ৯টার ভেতরেই পাঁচ সহশ্রাধিক প্রতিযোগী অভিভাবকসহ হাজির হন। মূল রাস্তা ও আবাসিক এলাকার বিভিন্ন ব্লক থেকে তাদের প্রতিযোগিতাস্থলে আনতে শাটল সার্ভিসের ব্যবস্থা করা হয়। প্রতিযোগিতা শেষে প্রবেশপত্র ধরে ধরে সকল শিশুকে তার অভিভাবকের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে মেয়ে ঐশীকে নিয়ে সকাল সোয়া ৯টায় প্রতিযোগিতাস্থলে হাজির হন আরাফাত মোল্লা। এসে স্কুল থেকে দেওয়া খাবার দিয়ে সকালের নাস্তা করেন। তখনো প্রতিযোগিতা শুরু হতে সময় অনেকটা বাকি। এরপর বাবা-মেয়ে স্কুলের বিভিন্ন জায়গায় ছবি তুলে মেয়েকে প্রতিযোগিতার জন্য পাঠিয়ে দেন। 

আয়োজনের ব্যাপারে সন্তোষ প্রকাশ করে আরাফাত মোল্লা বলেন, অনেকটা জোর করেই ঐশীকে নিয়ে এসেছি। সকালে ঘুম থেকে উঠতে চাচ্ছিল না। তবে এসে সে খুব খুশি। ৫০টার উপরে ছবি তুলে দিতে হয়েছে তার। এছাড়া এতো মানুষের ভিড়েও কোনো বিশৃঙ্খলা নেই। আমার মেয়ে পুরস্কার পেল নাকি না পেল তা নিয়ে আমার কোনো চিন্তা নেই, মেয়েটি এমন একটা প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পেরেছে এটাই বড় কথা।

তিনটি ক্যাটাগরিতে অনুষ্ঠিত হয় এই প্রতিযোগিতা। এর মধ্যে তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত ক্যাটাগরি-১, সপ্তম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ক্যাটাগরি-২ ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে বিশেষ ক্যাটাগরি। তিন ক্যাটাগরিতে থাকছে মোট ৩০ লাখ টাকার ১৪৩টি পুরস্কার। আর্থিক পুরস্কারের সঙ্গে থাকবে ক্রেস্ট ও সনদপত্র। প্রতিযোগিতার প্রথম পুরস্কার থাকছে ৩ লাখ টাকার, দ্বিতীয় পুরস্কার ২ লাখ টাকার, তৃতীয় পুরস্কার ১ লাখ টাকার, চতুর্থ ৭০ হাজার টাকার ও পঞ্চম ৫০ হাজার টাকার। থাকছে ষষ্ঠ থেকে নবম পুরস্কার পর্যন্ত। প্রতিযোগিতায় আসা ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদের স্বাগত জানান বসুন্ধরা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আনিছুর রহমান। 

আয়োজকরা বলেন, এ মেগা আর্ট ইভেন্টটি শুধু একটি প্রতিযোগিতা নয়, এটি হবে আমাদের ইতিহাসের সঙ্গে আগামী শিল্প সাধকদের এক অটুট সেতুবন্ধন। এ সেতুবন্ধনকে আরো মহৎ ও তাৎপর্যপূর্ণ করছে এর বিচারকমণ্ডলী, যাঁদের খ্যাতি ও যোগ্যতা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক শিল্পাঙ্গনে সমুজ্জ্বল।

বিচারকমণ্ডরীর মধ্যে রয়েছেন শিল্পগুরু ছাপচিত্রের জাদুকর মনিরুল ইসলাম। যার সৃজনশীলতা তাকে স্পেনের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দ্য ক্রস অব অফিসার অব দ্য অর্ডার অব কুইন ইসাবেলা-এর মতো বিরল সম্মানে ভূষিত করেছে। তাঁর পাশে আছেন দেশবরেণ্য চিত্রশিল্পী অধ্যাপক আবদুর শাকুর শাহ, যিনি বাংলার লোকজ মোটিফ ও মৈমনসিংহ গীতিকার বর্ণিল আখ্যানকে আধুনিক ক্যানভাসে জীবন্ত করেছেন। এস এম সুলতান পদক বিজয়ী এ শিল্পী দেখবেন কতটা নিষ্ঠার সঙ্গে খুদে শিল্পীরা তাঁদের মুক্তির গল্প নির্মল বর্ণ ছটায় ফুটিয়ে তোলে। কারণ গুজরাটে বেস্ট প্রাইজ অব ললিতকলা একাডেমি জয়ী শাকুর শাহ অসংখ্য রেখাচিত্রের মাধ্যমে শুধু একাত্তরের ক্ষতই আঁকেননি, এঁকেছিলেন সাধারণ বাঙালির বীরত্বগাঁথা। তার বর্ষীয়ান চোখে খুঁজে ফিরবে খুদের তুলির আঁচড়ে কতটা ইতিহাস আর কতটা শেকড়ের টান আছে। আরো রয়েছেন ২০২০ সালে একুশে পদক জয়ী প্রথিতযশা শিল্পী অধ্যাপক ড. ফরিদা জামান, যিনি তাঁর বিখ্যাত সুফিয়া সিরিজের মাধ্যমে এক কাব্যিকতা সৃষ্টি করেছেন। তিনি যখন শিশুদের ক্যানভাস বিচার করবেন, তখন তিনি খুঁজবেন সেই নৈসর্গিক সরলতা এবং গভীর মানবিক আবেদন-যা একটি শিল্পকর্মকে চিরন্তন করে তোলে। দেশের বৃহৎ এই ছবি আঁকা প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে আছেন অভিনেতা ও চিত্র শিল্পী আফজাল হোসেন। আফজাল হোসেন এমন একজন শিল্পী যিনি শিল্পীর কোনো একটি নির্দিষ্ট শাখা নিজেকে বেঁধে রাখেননি। বরং প্রতিটি শাখায় তাঁর প্রতিভার দ্যুতি ছড়িয়ে বহুমাত্রিক সৃষ্টিশীলতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এই প্যানেলে এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছেন ধ্রুব এষ। স্বতন্ত্র ও নিভৃতচারী এ শিল্পী ২৫ হাজারেরও বেশি বইয়ের প্রচ্ছদ এঁকে প্রচ্ছদ শিল্পকে বাংলাদেশে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন এবং অর্জন করেছেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার। 

বসুন্ধরা স্পোর্টস সিটি ও বসুন্ধরা পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মেজর (অব.) মহসিনুল করিম বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান মহোদয়ের আগ্রহে এই চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। এতো পরিমাণ সাড়া পাব ভাবতেই পারিনি। দলে দলে মানুষ আসছে। মুন্সীগঞ্জ থেকে অনেকে একসঙ্গে বাস ভাড়া করে এসেছে। সাড়ে ৯ হাজার প্রতিযোগী নিবন্ধন করেছে। নিবন্ধনের সময় বাড়ালে এটা হয়তো ১২ হাজার ছাড়িয়ে যেত। এই বিপুল সংখ্যক প্রতিযোগির সঙ্গে তাদের অভিভাবকরা আছেন। এতো বড় আয়োজন অনেক সুশৃঙ্খলভাবে শেষ করতে পেরেছি। প্রচুর স্বেচ্ছাসেবী আয়োজনে সহযোগিতা করছে। প্রতিবন্ধী শিশুরাও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে। তাদের দেখভালের জন্য বসুন্ধরা স্পেশাল চিলড্রেন ফাউন্ডেশন স্কুল থেকে ২০ জন অভিজ্ঞ ও দক্ষ স্বেচ্ছাসেবী আনা হয়েছে। সব মিলে অনেক ভালো একটা আয়োজন সম্পন্ন করা গেছে। এই ধরণের আয়োজন নিয়মিত চলবে। 

তিনি বলেন, বসুন্ধরার চেয়ারম্যান মহোদয় এই স্কুলটিকে এশিয়ার মধ্যে সেরা স্কুল হিসেবে দেখতে চান। এজন্য যা যা সহযোগিতা দরকার সেটা দিয়ে যাচ্ছেন। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দক্ষ, শিক্ষিত ও আত্মনির্ভরশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে বসুন্ধরা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ সবসময়ই খেলাধুলা ও সহশিক্ষা কার্যক্রমকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছে। এখানকার বাচ্চাদের সাতার, গান, নাচ, চিত্রাঙ্কন, কারাতে, তায়কান্দো, ফুটবলসহ সব ধরণের সহশিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাংলার পাশাপাশি আরবি, ইংরেজি, ফ্রেন্স ও চীনা ভাষা শেখানোর ব্যবস্থা করা হবে। তাদেরকে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে আরবি শেখানো হবে। এই স্কুলের মূল লক্ষ্য এখানকার প্রতিটা শিক্ষার্থী সবদিক দিয়ে পারদর্শী হবে। তাদেরকে যেখানে ছেড়ে দেওয়া হবে, সেখানেই যেন নেতৃত্ব দিতে পারে। এখানকার শিক্ষার্থীরা চাকরি করাকে মূল লক্ষ্য ধরে লেখাপড়া শিখবে না, তারা উদ্যোক্তা হবে, অন্যদের চাকরি দেবে। 

মহসিনুল করিম বলেন, বিশ্বের মধ্যে সেরা শিক্ষা ব্যবস্থা ফিনল্যান্ডে। ফিনল্যান্ডের প্রতিটা বাচ্চা অলরাউন্ডার হয়ে গড়ে ওঠে। আমরা স্কুল চালুর আগে এক বছর ফিনল্যান্ডের কারিক্যুলামের ওপর আমাদের শিক্ষক ও স্টাফদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। বিদেশ থেকে প্রশিক্ষক এনেছি। কারিক্যুলাম নিয়ে গবেষণার জন্য গবেষক নিয়োগ দিয়েছি। এখানকার বাচ্চারা ন্যাশনাল কারিকুলাম পড়লেও তাদের শিক্ষার পদ্ধতি ও ধরণ হবে আন্তর্জাতিক মানের।

কিউএনবি/অনিমা/১২ ডিসেম্বর ২০২৫,/সন্ধ্যা ৬:৫৪

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

December 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit