আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মার্কিন-সমর্থিত আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনীতে (আইএসএফ) যোগ দিতে ইন্দোনেশিয়ার সেনাদের গাজায় পাঠানোর অঙ্গীকার উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পদক্ষেপের কারণে জাকার্তা গাজা সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের পক্ষ নিয়েছে বলে বিবেচিত হতে পারে। বিশেষ করে যদি আইএসএফের ম্যান্ডেটে হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ অন্তর্ভুক্ত থাকে।
ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো বারবার গাজায় শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে সহায়তার জন্য ২০ হাজার পর্যন্ত সেনা পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। গত ১৭ই নভেম্বর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে মার্কিন খসড়া শান্তি পরিকল্পনার একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়ার পর এই মোতায়েনের পরিকল্পনা আরও স্পষ্ট হয়েছে। চীন এবং রাশিয়ার এই প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত থাকলেও প্রস্তাবটি ১৩টি দেশের সমর্থনে গৃহীত হয়।
ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর (টিএনআই) কমান্ডার-ইন-চিফ আগুস সুবিয়ান্তো নিশ্চিত করেছেন, গাজার জন্য শান্তিরক্ষী কর্মীদের নির্বাচন প্রক্রিয়া চলছে এবং একজন তিন তারকা জেনারেলের নেতৃত্বে তিনটি ব্যাটালিয়ন পাঠানো হবে। এই ব্যাটালিয়নগুলো স্বাস্থ্যসেবা, নির্মাণ প্রকৌশল এবং ত্রাণ ও যান্ত্রিক সহায়তা করবে। সেনাদের সাথে হেলিকপ্টার, সি-১৩০ হারকিউলিস পরিবহন বিমান এবং দুটি নৌবাহিনীর হাসপাতাল জাহাজ থাকবে। তবে মিশন সম্পর্কে আরও স্পষ্টতা এলে অগ্রদূত হিসেবে পরিস্থিতি এবং সেনাদের স্থান নির্ধারণের জন্য একটি রিকনেসন্স দল পাঠানো হবে।
এই মিশনের ঝুঁকি নিয়ে ইন্দোনেশিয়ায় উদ্বেগ বাড়ছে। জাতিসংঘের প্রস্তাবনায় আইএসএফকে বোর্ড অফ পিস নামে একটি আন্তর্জাতিক অন্তর্বর্তীকালীন সংস্থার সাথে কাজ করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যাদের অন্যতম লক্ষ্য হলো হামাস সহ অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীকে স্থায়ীভাবে নিরস্ত্রীকরণ করা।
যুক্তরাষ্ট্রে ইন্দোনেশিয়ার সাবেক রাষ্ট্রদূত ডিনো পাত্তি দাজাল সতর্ক করেছেন, যদি ইন্দোনেশিয়া গাজায় শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠায়, তবে টিএনআই যেন হামাসকে নিরস্ত্রীকরণের দায়িত্বে নিয়োজিত না হয়। টিএনআইর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে পারে এমন পরিস্থিতিতে হামাসের সঙ্গে শারীরিক সংঘর্ষ এড়াতে হবে। একই আশঙ্কা প্রকাশ করে ইন্দোনেশিয়ান উলেমা কাউন্সিলের সুদর্নতো আব্দুল হাকিম বলেন, আমরা গাজায় হামাসের মুখোমুখি হতে পারি। ইন্দোনেশিয়া সবসময় ফিলিস্তিনের পূর্ণ সমর্থন করেছে কিন্তু এখন সেখানে ফিলিস্তিনের বন্ধুদের মুখোমুখি হতে হতে পারে। এটা এড়ানো জরুরি। অন্যদিকে হামাস এই প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, নিরস্ত্রীকরণের দায়িত্ব আইএসএফকে সংঘাতের পক্ষে একটি পক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেবে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঝুঁকি থাকলেও আইএসএফে যোগ দিলে জাকার্তা বেশ কিছু ভূ-রাজনৈতিক সুবিধা পেতে পারে। গ্যাদজা মাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রভাষক মুহাদি সুগিয়োনো মনে করেন, এই পদক্ষেপ ওয়াশিংটনের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করবে এবং ইন্দোনেশিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক চুক্তির মতো সুবিধা পেতে পারে।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী সাফ্রিয়ে শ্যামসুদ্দিন জানিয়েছেন, আইএসএফে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদানের আগে ইসরায়েল এবং সৌদি আরব, জর্ডান, মিশর, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো আরব রাষ্ট্রগুলোর অনুমোদন প্রয়োজন হবে। অ্যাবেরিস্টউইথ ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক রাজনীতির ফেলো আহমদ উমার মনে করেন, আরব দেশগুলোর অনুমোদন ইন্দোনেশিয়ার কূটনৈতিক অবস্থানকে শক্তিশালী করবে।
সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট
কিউএনবি/অনিমা/২৭ নভেম্বর ২০২৫,/সকাল ৭:৩৮