ডেস্কনিউজঃ নাগরিক ঐক্যে যোগদান করেছেন মেজর (অব.) আব্দুস সালাম। দলটির শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেন।
সোমবার (১০ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে স্বৈরাচার নিপাত যাক গণতন্ত্র মুক্তি পাক এই প্রতিপাদ্যে গণতন্ত্রের প্রতীক শহীদ নূর হোসেন স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভা ও যোগদান অনুষ্ঠানে তিনি নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে যুক্ত হন। এ সময় তিনি নাগরিক ঐক্য ও মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে যুক্ত হওয়াকে নিজের সৌভাগ্য হিসেবে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, এমন একটি দলের সঙ্গে যুক্ত হতে পারছি যেখানে প্রাণ খুলে কথা বলা যায়। দলের প্রধান মাহমুদুর রহমান মান্নাকে তিনি সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব উল্লেখ করে বলেন, দেশের যেকোনো সমস্যায় দরকার হলে তিনি সহজ সমাধান এবং আপসের পথ বের করে আনতে পারেন, যা তাকে সবসময় অনুপ্রাণিত করে।
মেজর (অব.) সালাম বলেন, কুড়িগ্রামের অবহেলিত মানুষের উন্নয়ন এবং জনসেবায় নিজেকে সম্পৃক্ত করতে চান। দীর্ঘ রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা থাকলেও পূর্বে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। তবে এলাকার মানুষের ভালোবাসা ও আস্থাই তাকে রাজনীতিতে টিকিয়ে রেখেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কুড়িগ্রাম উন্নয়নে একাধিক পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন মেজর (অব.) সালাম। এর মধ্যে রয়েছে—শহরকে যানজটমুক্ত করা, বাস টার্মিনাল আধুনিকায়ন, হাসপাতাল ও ক্লিনিকের সেবার মান উন্নয়ন, মাদক নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ, রাজারহাট বাইপাস/ফ্লাইওভার নির্মাণ, নদীভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ ও ড্রেজিং, তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করা, চর এলাকায় ক্ষুদ্র শিল্প গড়ে তুলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং বেকার যুবকদের কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা।
এ ছাড়া কুড়িগ্রাম–ঢাকা ভাওয়াইয়া এক্সপ্রেস চালুসহ বিদ্যমান ট্রেন সার্ভিসে আসন সংখ্যা বাড়ানো, কুড়িগ্রাম-চিলমারী রুটে রেল যোগাযোগ জোরদার, রাজারহাট রেলস্টেশন আধুনিকায়ন এবং বিনোদন ও ক্রীড়া সুবিধা বাড়ানোর পরিকল্পনাও তুলে ধরেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, শহীদ নূর হোসেনের আত্মত্যাগ গণতন্ত্রের পথে সংগ্রামী জনগণের চেতনাকে উজ্জীবিত করে। দেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান তারা।
মেজর (অব.) আব্দুস সালাম বলেন, জন্মলগ্ন থেকে—বরং তারও আগে, ’৫২ থেকে আজ পর্যন্ত—বাংলাদেশের প্রতিটি সংগ্রাম, লড়াই ও যুদ্ধে যারা জীবন দিয়েছেন, তাদের সবার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। আল্লাহতালা সকল শহীদকে জান্নাত নসিব করুন। তাদের ত্যাগের কারণেই আজ আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক।
দেশটা এখন খুব ভালো যাচ্ছে—এ কথা পুরোপুরি বলা যাবে না। তবে দেশকে ভালো করতেই হবে। আমার সৌভাগ্য, জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এমন একটি দলে যোগ দিতে যাচ্ছি, যেখানে প্রাণ খুলে কথা বলা যায়। কথা বলার স্বাধীনতা—এ দলের অন্যতম শক্তি।
এই দলের প্রধান মান্না ভাই সর্বজন শ্রদ্ধেয় একজন ব্যক্তিত্ব। দেশের যেকোনো জটিল সমস্যায় যদি আপস, সমঝোতা বা সমাধান করার প্রশ্ন আসে, আমি বিশ্বাস করি—মান্না ভাই থাকলে তিনি একটি ফল এনে দিতে পারবেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলে আমার সত্যিই খুব ভালো লাগে। সে কারণেই আমি গর্বিত যে, জীবনের এই পর্যায়ে এসে তাঁর দলের সঙ্গে যুক্ত হতে পারছি। পরে তিনি ১৮ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেন।
বাংলাদেশ বিমানের সাবেক ডাইরেক্টর,বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) আব্দুস সালামের নাগরিক ঐক্যে যোগদানের বিষয়টি সমগ্র কুড়িগ্রাম জেলায় টক অব দ্য ডিস্ট্রিক্টে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য,কুড়িগ্রাম-২, সদর আসনটি বরাবরই বিএনপির জোটভুক্ত শরিকদল নির্বাচন করে থাকে। বিএনপি সর্বশেষ ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে এই আসনে গণফোরাম থেকে মেজর জেনারেল (অবঃ) আমসা আমিন ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিএনপি নেতা বলেন, কুড়িগ্রাম-২ আসনে মেজর (অব.) আব্দুস সালাম বিএনপি জোট থেকে নির্বাচন করলে অনেক ভালো ফলাফল লাভ করতে পারবেন। কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির প্রকট আকার ধারণ করা গ্ৰুপিং রাজনীতির কারণে মেজর (অব.) আব্দুস সালাম আগামী সংসদ নির্বাচনে সার্বজনীন প্রার্থী হিসাবে বিপুল ভোটে জয়লাভ করতে সক্ষম হবেন।
কিউএনবি/মোহাইমিনুল/১০.১১.২০২৫/রাত ৮.১৫