স্পোর্টস ডেস্ক : বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড সিরিজের তৃতীয় দিন শেষে আজ সংবাদ সম্মেলনে আসেন আশরাফুল। কোচ হিসেবে প্রথমবার আসায় স্বাভাবিকভাবেই দলের সঙ্গে কোচিংয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলতে হয়েছে আশরাফুলকে। তিনি জানান, আগে থেকেই সবার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকায় তেমন কোনো প্রতিবন্ধতার মুখে পড়তে হচ্ছে না তাকে।
বাংলাদেশ দলের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা নিয়ে আশরাফুল বলেন, ‘আমি যখন ছিলাম, মুশফিকের অভিষেক হয়েছে আমার সামনে। মুমিনুলের টেস্ট ক্যাপটাও আমি পরিয়ে দিয়েছিলাম, গলে ২০১৩ সালে। এছাড়া বাকি সবার সঙ্গে হয়তো ঘরোয়া ক্রিকেটে কিংবা বিপক্ষ দলে খেলেছি। আলহামদুলিল্লাহ সবাই খুব সুন্দরভাবে আমাকে গ্রহণ করেছে। আমিও চেষ্টা করছি আমার অভিজ্ঞতাগুলো তাদের সঙ্গে ভাগাভাগি করার।’
‘এই পর্যায়ে আপনার তেমন কিছু পরিবর্তন করার নেই। শুধু মানসিকভাবে সহায়তা দেয়াটাই জরুরি। কোন ফরম্যাটে খেলার সময় রুটিনটা কেমন হওয়া উচিত, এগুলো যদি একটু ধরিয়ে দেয়া যায়, সেটাই যথেষ্ট। আসলে এই পর্যায়ে খেলোয়াড়দের মানসিকভাবে যত ফ্রেশ এবং ফ্রি রাখা যায় তত তার জন্য পারফর্ম করা সহজ। আলহামদুলিল্লাহ, কোচিং স্টাফ ও খেলোয়াড়রা সবাই খুব সমর্থন করছে।’
আশরাফুল আসার আগে জাতীয় দলে লম্বা সময় কোনো ব্যাটিং কোচ ছিল না। এই সময়ে ব্যাটিং কোচের দায়িত্ব সামলেছেন সিনিয়র সহকারী কোচ সালাউদ্দিন আহমেদ। বর্তমানে তার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা নিয়ে আশরাফুল বলেন, ‘আসলে এই সিরিজে আমি ব্যাটিং কোচ হিসেবে আসছি। সালাউদ্দিন ভাই সিনিয়র সহকারী কোচ। আমাকে কাজ করার সুযোগটা দিয়েছেন তিনি, যেহেতু আমি ব্যাটিং কোচ হিসেবে এসেছি। আমি আমার সঙ্গে তার সম্পর্ক আগে থেকেই ভালো। আমি যে কাজটা করার চেষ্টা করি… যদি আমার অভিজ্ঞতা থেকে কোনো খেলোয়াড়কে কিছু বলতে হয়… আমি সালাউদ্দিন ভাইয়ের মাধ্যমেই যাওয়ার চেষ্টা করি। যেহেতু তিনি টিমের সাথে লাস্ট এক বছর ধরে আছেন।’
‘অধিকাংশ খেলোয়াড়ই সালাউদ্দিন ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করেন। আমি কোচিংয়ে আসছি নতুন… খেলোয়াড়দের কোনো ইনপুট দিতে সালাউদ্দিন ভাইকে ডেকেই অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করি এবং তিনি সেটা বলেন। এভাবেই কাজ করার চেষ্টা করছি আমরা।’
জাতীয় দলে আপাতত এক সিরিজের জন্য এসেছেন আশরাফুল। চুক্তি নবায়ন হবে কিনা, সে ব্যাপারেও কোনো বিস্তারিত জানানো হয়নি। গতকাল (২১ নভেম্বর) মিরপুর টেস্ট চলাকালে বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের সঙ্গে কোনো একটি বিষয়ে আলোচনা করতে দেখা গেছে অ্যাশকে। এই আলোচনা চুক্তি নিয়ে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে আশরাফুল বলেন, ‘এই বিষয়ে কোনো আলাপ হয়নি। তার সঙ্গে আমার এমনিই আলাপ হয় নিয়মিত। কিন্তু এই বিষয়ে কোন আলাপ হয়নি।’
ব্যাটিং কোচ হিসেবে প্রথম দুই টেস্টে দল নিয়ে আশরাফুলের পর্যবেক্ষণ, ‘দুই টেস্টে আসলে টিমের সঙ্গে থেকে যেটা মনে হচ্ছে যে সবাই খুব অভিজ্ঞ এবং সবাই তাদের উইকেটের যত্ন নিয়ে খেলছেন। প্রত্যেকটা বল যেভাবে আসলে খেলা উচিত সেইভাবেই তারা খেলার চেষ্টা করছেন। আলহামদুলিল্লাহ। আমরা গত ২৫ বছরে একটা টেস্ট ম্যাচ ভালো হওয়ার পরে যেই প্রতিপক্ষই হোক পরের ম্যাচে কলাপস করতাম। আল্লাহর রহমতে তিনটা ইনিংসেই আমাদের ব্যাটাররা ওই জায়গা থেকে বের হয়ে এসেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘অনেকে হয়তো বলবে দুর্বল দল, কিন্তু আমার কাছে মনে হয় ওদের বোলিং আক্রমণ বেশ ভালো। পেসাররা ১৪০- এ বল করে, বাঁহাতি স্পিনারটাও চমৎকার জায়গায় বল করে। ওদের বোলিং ইউনিট কিন্তু খারাপ না, আমরা ভালো ব্যাটিং করেছি। আমার খেলোয়াড়রা সবাই প্রায় ৫০ এর বেশি টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। সেই অভিজ্ঞতাটা তারা এই দুইটা টেস্ট ম্যাচে… এই দুইটা টেস্টই না, গত ৩–৪ বছর ধরে আমাদের টেস্ট দল ভালো ফলাফল করছে। যেখানেই আমরা যাচ্ছি, প্রথম টেস্টটা ভালো খেললে পরেরটা পরেরটা আমরা ভালো করতে পারি না। খেলোয়াড়রা ৫০–৬০ রানে আউট হওয়া নিয়ে চিন্তা করছেন, কীভাবে আউট হচ্ছেন সেটা নিয়ে ভাবছেন। সামনের বছর থেকে ২০২৭ পর্যন্ত আমাদের ১৮টা টেস্ট ম্যাচ আছে। ওই ম্যাচগুলা নিয়ে খেলোয়াড়দের ইতোমধ্যে একটা লক্ষ্য ঠিক করা আছে। তারা সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং খেলছে।’
টেস্ট ক্রিকেটে ২৫ বছর পেরিয়েছে বাংলাদেশের। তবে এখনও কোনো বড় সাফল্য ধরা দেয়নি। এর পেছনে খেলোয়াড়দের সময় না দিয়ে একাধিক পরিবর্তন আনাকে দায়ী করছেন আশরাফুল। অভিজ্ঞতা অর্জন করলে টেস্টে ভালো করা সম্ভব বলে জানান তিনি। আশরাফুল বলেন, ‘আমরা সম্ভবত ১৫০ এর অধিক টেস্ট খেলেছি গত ২৫ বছরে। আমাদের খেলোয়াড় সংখ্যা ১০৮। ১০৮টা খেলোয়াড় না হয়ে ৭০-৭৫টা হলে একটা ভালো জায়গায় থাকতে পারতাম। কারণ মাঝখানে আমাদের একটা বড় একটা গ্যাপ হয়ে গিয়েছিল। এখনকার টেস্ট দলটা ভালো কারণ ম্যাচের সংখ্যা বেশি। একেকজনের ১০০টা, ৭০টা টেস্ট আছে। ১০৮ জনকে না খেলিয়ে ৭০–৭৫ জন খেলালে দলটা আজ ভালো অবস্থানে থাকত।’
কিউএনবি/আয়শা/২২ নভেম্বর ২০২৫,/রাত ৯:০০