চীনের সাথে জাপানের এই কূটনৈতিক বিবাদ শুরু হয় নভেম্বরের শুরুতে। যখন জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী তাইকাচি, যিনি অক্টোবরে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন, তাইওয়ান নিয়ে একটি মন্তব্য করেন। বলেছিলেন, যদি চীন তাইওয়ানে আক্রমণ করে তাহলে সেখানে তারা সামরিক হস্তক্ষেপ করতে পারে। এই মন্তব্যের পর বেইজিং ক্ষুব্ধ হয়েছিল।
তবে, এই বিরোধ এখন বাণিজ্য যুদ্ধে রূপ নিয়েছে, যার মধ্যে উভয় পক্ষের ব্যবসা জড়িত এবং একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ অঞ্চলের উপর নিরাপত্তা উত্তেজনা আরও তীব্র করেছে। যা দীর্ঘদিন ধরে দুই দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
তাইওয়ান সম্পর্কে জাপানের প্রধানমন্ত্রী কী বললেন?
৭ নভেম্বর সংসদে বক্তৃতা দেয়ার সময়, তাইওয়ানের দীর্ঘদিনের সমর্থক তাইকাচি বলেছিলেন, তাইওয়ানের বিরুদ্ধে চীনা নৌ অবরোধ বা অন্য কোনো পদক্ষেপ জাপানি সামরিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এই প্রতিক্রিয়াটি সাধারণ নয় বলে জানিয়েছিলেন তিনি। এর আগে তাইকাচির পূর্বসূরীরা অতীতে তাইওয়ানের প্রতি চীনা হুমকি সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন, কিন্তু কখনও কোনো প্রতিক্রিয়ার কথা বলেননি।
ওই বিবৃতির পর চীনের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবাদ জানায়। বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি করে। এর একদিন পর ওসাকায় নিযুক্ত চীনের কনসাল জেনারেল জুয়ে জিয়ান মন্তব্যের সমালোচনা করেন এবং এক্সে একটি পোস্টে কড়া হুমকি দেন।
যেখানে তিনি বলেন, ‘আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়া নোংরা ঘাড় কেটে ফেলা ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই। তুমি কি প্রস্তুত?’জুয়ের ওই পোস্ট জাপানেও ক্ষোভের সৃষ্টি করে এবং সেখানে কূটনীতিকের বহিষ্কারের দাবি উঠে।
তারপর থেকে উত্তেজনা কীভাবে বেড়েছে?
বিষয়টি পরে এক ধরনের বাণিজ্য যুদ্ধে রূপ নেয়। ১৪ নভেম্বর, চীন জাপানের জন্য একটি ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার নির্দেশিকা জারি করে। যা দেশটির পর্যটন খাতকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করার একটি প্রচেষ্টা। যেখানে এই বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রায় ৭ দশমিক ৫ মিলিয়ন চীনা পর্যটক এসেছিলেন। এরপর জাপানও চীনে তাদের নাগরিকদের জন্য একটি ভ্রমণ সতর্কতা জারি করে।
আঞ্চলিক বিরোধ ঘিরেও উত্তেজনা বাড়ছে। গত রোববার, চীনা উপকূলরক্ষী ঘোষণা করেছে, তারা পূর্ব চীন সাগরের কিছু জনবসতিহীন দ্বীপের আশেপাশের জলসীমায় টহল দিচ্ছে, যে দ্বীপপুঞ্জ উভয় দেশই দাবি করে। জাপান দ্বীপপুঞ্জগুলোকে সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জ বলে, অন্যদিকে বেইজিং তাদেরকে দিয়াওয়ু দ্বীপপুঞ্জ বলে। জবাবে জাপান চারটি চীনা উপকূলরক্ষী জাহাজের বহর দিয়ে জাপানি আঞ্চলিক জলসীমার সংক্ষিপ্ত ‘লঙ্ঘন’ বলে নিন্দা জানায়।
এছাড়া গত সপ্তাহে, চীনা কর্তৃপক্ষ কমপক্ষে দুটি জাপানি চলচ্চিত্রের প্রদর্শন স্থগিত করেছে এবং জাপানি সামুদ্রিক খাবার নিষিদ্ধ করেছে।এরপর, বৃহস্পতিবার, চীন নভেম্বরের শেষের দিকে হতে যাওয়া জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্কৃতি মন্ত্রীদের সাথে ত্রি-পক্ষীয় বৈঠক স্থগিত করেছে।