শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৫৯ পূর্বাহ্ন

মালয়েশিয়ার অন্ধকারের আলো ছড়ানোর স্বপ্ন ম্লান!

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২৫
  • ২৮ Time View

ডেস্ক নিউজ : মালয়েশিয়ার বহু আকাঙ্ক্ষিত ‘সাঁঝবাতি’ প্রকল্পের আভা বছর ঘুরতেই ক্ষীণ হয়ে এসেছে এক অদ্ভুত কারণে, যা দেশটির সড়ক নিরাপত্তার উচ্চাকাঙ্ক্ষায় ধাক্কা দিয়েছে। রাতের অন্ধকারে দৃশ্যমানতা কমে যাওয়ায় গ্রামীণ অঞ্চলগুলিতে প্রায়ই সড়ক দুর্ঘটনার মুখোমুখি হতেন চালকেরা। এই সমস্যা দূর করতে মালয়েশিয়া চিরাচরিত আলোর ব্যবস্থা থেকে সরে এসে ভিন্ন পথে হেঁটেছিল। যেখানে ফোটোলুমিনেসেন্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করে রাস্তাগুলিকে উজ্জ্বল, চোখধাঁধানো সবুজ আলোয় মুড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়।

পেট্রোনাস টুইন টাওয়ারের এই দেশ ২০২৩ সালে সেলেঙ্গ প্রদেশের সেমেনিহ শহরে প্রথম এই ব্যবস্থা চালু করে, যার লক্ষ্য ছিল সীমিত বৈদ্যুতিক পরিকাঠামোযুক্ত গ্রামীণ এলাকার জন্য রাস্তার আলোর সাশ্রয়ী বিকল্প তৈরি করা। নেদারল্যান্ডস ও জাপানেও সাইকেল লেনে এই প্রযুক্তি পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহৃত হলেও মালয়েশিয়ার কর্মসূচি ছিল বৃহৎ আকারের, যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় রাতের গাড়ি চালানোর সংজ্ঞাই পাল্টে দিতে চেয়েছিল। 

ফোটোলুমিনেসেন্ট পদার্থ স্ট্রন্টিয়াম অ্যালুমিনেট দিয়ে তৈরি এই বিশেষ দাগগুলি সারাদিন সূর্যের উত্তাপ ও আলো শোষণ করত এবং রাত নামলে প্রায় দশ ঘণ্টা ধরে বিদ্যুতের ব্যবহার ছাড়াই সবুজ আভা ছড়াত। মালয়েশিয়ার পূর্ত বিভাগ (জেকেআর) দাবি করেছিল, কুয়াশা বা ভারী বৃষ্টিতেও এই আলোর দৃশ্যমানতা পরিপূর্ণভাবে বজায় থাকে এবং সমাজমাধ্যমেও এই ‘ভিনগ্রহী’ সবুজ আলো ঝলমলে রাস্তা ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছিল। 

তবে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে শুরু হওয়া এই আলোকসজ্জার প্রকল্পটি ২০২৪ সালের শেষের দিকে আক্ষরিক এবং রূপক উভয়ে অর্থেই তার উজ্জ্বলতা হারায়। সবচেয়ে বড় বাধা আসে বিপুল খরচ থেকে; স্ট্রন্টিয়াম অ্যালুমিনেটের তৈরি এই আবরণটির দাম প্রতি বর্গমিটারে প্রায় পনেরো হাজার টাকা, যা রাস্তার সাধারণ সাদা রঙের দামের প্রায় কুড়ি গুণ বেশি। ফলস্বরূপ, বৃহৎ আকারে এই প্রকল্পটির বাস্তবায়ন মালয় সরকারের কাছে অসম্ভব হয়ে ওঠে। দ্বিতীয় প্রধান অন্তরায় ছিল মালয়েশিয়ার আর্দ্র গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আবহাওয়া। ক্রমাগত বৃষ্টি, অসহনীয় তাপ এবং অতিবেগনি রশ্মির সংস্পর্শে আসার ফলে ফোটোলুমিনেসেন্ট দাগগুলি দ্রুত ক্ষয়ে যেতে শুরু করে, যার ফলে সেগুলি এক থেকে দেড় বছরের বেশি টিকে থাকতে পারেনি এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এক দফা বিপুল খরচের প্রয়োজন পড়ছিল। সেলাঙ্গর জুড়ে পনেরোটি স্থানে এবং জোহরের একত্রিশটি সড়কে প্রকল্পটি সম্প্রসারণের প্রাথমিক পরিকল্পনা নেওয়া হলেও খরচের বহর দেখে রাজ্য সরকারগুলি আর কোনো আগ্রহ দেখায়নি। 

এই আলোকসজ্জাটির সীমাবদ্ধতা স্পষ্ট হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে জনসাধারণের উৎসাহও দ্রুত কমে আসে এবং নাগরিকেরা রাস্তার গর্ত, বিবর্ণ দিকনির্দেশের সাইনবোর্ড ও নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবের মতো সমস্যাগুলি সরকারের অগ্রাধিকারের বিষয় হওয়া উচিত বলে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন।

কিউএনবি/অনিমা্/১৮ নভেম্বর ২০২৫,/রাত ৯:১৯

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

November 2025
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit