আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইউক্রেনের কিছু ভূখণ্ড এবং সমরাস্ত্র ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে রাশিয়ার সঙ্গে দেশটির যুদ্ধ বন্ধের যে নতুন শান্তি প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্র দিয়েছে, তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে ইউরোপের দেশগুলো।
যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রস্তাবকে রাশিয়ার কাছে ‘আত্মসমর্পণ’ করারই শামিল বলে নিন্দা করেছে তারা। ফ্রান্স বলেছে, ‘শান্তি কখনও আত্মসমর্পণ হতে পারে না।’
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-নোয়েল বারো বলেন, “ইউক্রেইনীয়রা শান্তি চায়, ন্যায়সঙ্গত শান্তি, যা প্রত্যেকের সার্বভৌমত্বের জন্য সম্মানজনক হবে, যে শান্তি দীর্ঘস্থায়ী হবে, ভবিষ্যৎ আগ্রাসনে যা প্রশ্নবিদ্ধ হবে না। কিন্তু শান্তি কখনও আত্মসমর্পণ হতে পারে না। আমরা ইউক্রেনের আত্মসমর্পণ চাই না।”
ফ্রান্স সরকার বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব মেনে চুক্তি করলে ইউক্রেন কৌশলগতভাবে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হবে এবং এতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বিপুল রাজনৈতিক জয় পেয়ে যাবেন।
তাছাড়া, ফরাসি সরকার এও অভিযোগ করেছে যে, ইউক্রেন এবং ইউরোপকে পাশ কাটিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা করেছে সেইসব শর্ত নিয়ে যেগুলো ক্রেমলিনের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল।
ব্রাসেলসের ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৈঠকে হাজির হয়ে শীর্ষ ইইউ কূটনীতিন কায়া কাল্লাস বলেন, “যে কোনও পরিকল্পনা কাজে আসতে হলে আলোচনায় ইউক্রেন এবং ইউরোপকেও রাখা প্রয়োজন। আমাদেরকে বুঝতে হবে যে, এই যুদ্ধে এক পক্ষ আগ্রাসনকারী আর অন্য পক্ষ আগ্রাসনের শিকার।”
শান্তি পরিকল্পনার বিষয়ে ইউরোপকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ। জার্মানি বলেছে, যে কোনও আলোচনার পূর্বশর্ত হওয়া উচিত নিঃশর্তে রাশিয়ার যুদ্ধবিরতি। ওদিকে, যুক্তরাজ্য বলেছে, শান্তি হওয়া উচিত ন্যায়সঙ্গত ও দীর্ঘস্থায়ী।
অন্যদিকে, বেলজিয়ামে ব্রাসেলসের বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত মন্তব্য না করলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, কিইভকে কঠিন ছাড় দিতে বাধ্য করার দাবি তারা মেনে নেবেন না।
শান্তি প্রস্তাবটি নিয়ে হোয়াইট হাউজ কোনও মন্তব্য করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এক্সে লিখেছেন, “ওয়াশিংটন যুদ্ধ অবসানে বিবাদমান দুই পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে সম্ভাব্য উপায়গুলোর তালিকা তৈরি করে যাবে। দীর্ঘস্থায়ী শান্তিতে পৌঁছাতে হলে দুই পক্ষকেই কঠিন কিন্তু প্রয়োজনীয় ছাড় দিতে রাজি হতে হবে।”
ওয়াশিংটন চায় কিইভ যেন পরিকল্পনার মূল প্রস্তাবগুলো মেনে নেয়। পূর্বাঞ্চলের যেসব এলাকা এখন ইউক্রেনের দখলে নেই তা মস্কোকে ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে কিইভ ও ইউরোপে ভবিষ্যৎ যে কোনও রুশ আগ্রাসন মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে প্রস্তাবে।
ইউক্রেনকে সেনা সংখ্যাও কমাতে বলা হয়েছে প্রস্তাবে। ইউক্রেইনও এই প্রস্তাবকে উদ্ভট বলে সমালোচনা করেছে। তবে বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত নতুন খসড়া পরিকল্পনা তারা পেয়েছে এবং আগামী দিনগুলোতে এটি নিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে জেলেনস্কি কথা বলবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
টেলিগ্রামে এক বিবৃতিতে জেলেনস্কির কার্যালয় বলেছে, “আমার আগের মতোই এখনও আমেরিকার সঙ্গে এবং সেইসঙ্গে বিশ্বজুড়ে এবং আমাদের ইউরোপীয় অংশীদারদের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে কাজ করতে প্রস্তুত, যাতে পরিণতিতে শান্তি আসে।”
কিউএনবি/অনিমা/২১ নভেম্বর ২০২৫,/সকাল ৮:১২