বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৫২ অপরাহ্ন

যেভাবে নিজের ক্যারিয়ার কবর দিলেন সাকিব আল হাসান

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫
  • ১৭ Time View

স্পোর্টস ডেস্ক :  সাকিব আল হাসান, বাংলাদেশের অন্যতম সুপরিচিত ক্রিকেটার। শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরেও তার সুখ্যাতি ছিল। কেননা, তিনি ক্রিকেটের একাধিক সংস্করণে বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার ছিলেন।

বাংলাদেশের লাখো মানুষের, বিশেষত তরুণদের, আশা-ভরসা ও অনুপ্রেরণার প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন সাকিব আল হাসান। ছিলেন জাতীয় দলের অধিনায়ক। দারিদ্র্য, রাজনৈতিক সহিংসতা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে জর্জরিত একটি দেশের জন্য তিনি গৌরব ও সম্মান বয়ে এনেছিলেন। এজন্যই তিনি মানুষের কাছে প্রিয় ছিলেন। কিন্তু ১৫ বছরেরও বেশি সময় দেশ শাসন করা স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতনের পর, তার সেই জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ে। অনেক বাংলাদেশির কাছেই সাকিব আর এখন প্রিয় ক্রিকেটার নন।

ক্রিকেটার অবস্থায়ই সাকিব তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে যোগ দেন ২০২৩ সালে। ২০২৪ সালের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে অংশ নেন। সেই নির্বাচনকে দেশ-বিদেশে একপক্ষীয় ও কারচুপিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়। এখন হাজারো আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীর মতো সাকিবও নির্বাসিত জীবনে আছেন। বাংলাদেশের এক শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তা সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন, সাকিব আর কখনও জাতীয় দলের জার্সি পরতে পারবেন না। বাংলাদেশের হয়ে ক্রিকেট খেলার উপরও তার নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের প্রতি জনগণের মধ্যেও সমর্থন আছে।

বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সাকিব, তার মা শিরিন আখতার এবং আরও ১৩ জনের বিরুদ্ধে শেয়ারবাজার কারসাজির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ, জালিয়াতি ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ তদন্ত করছে। সাকিবের বিরুদ্ধে চেক জালিয়াতির অভিযোগও রয়েছে। এই অভিযোগগুলোর কিছু শেখ হাসিনার আমলেই উঠেছিল, তবে তখন তদন্ত হয়নি। সাংবাদিকরা আরও খুঁজে পেয়েছেন, সাকিবের পিতা ছাত্রনেতা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। সব মিলিয়ে সাকিব ও তার পরিবার এখন গভীর বিপদে।

সাকিবের উত্থান ও পতনের গল্প এক অদ্ভুত মিশ্রণ- ক্রিকেট, রাজনীতি ও রাষ্ট্রীয় সহিংসতার এক রঙিন কেলেইডোস্কোপ। ১৯৮৭ সালে মাগুরার এক সাধারণ পরিবারে জন্ম সাকিবের। ২০০৪ সালে বিভাগীয় লিগে খেলা শুরু করেন এবং দ্রুত নিজের সুনাম গড়ে তোলেন। ২০০৬ সালে জাতীয় দলে অভিষেক ঘটে তার। প্রায় দুই দশকের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে তিনি ৪৪৭টি ম্যাচ খেলেছেন। করেছেন ১৪,৭৩০ রান। নিয়েছেন ৭১২টি উইকেট। ইএসপিএন ক্রিকইনফো তাকে বর্ণনা করেছে, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে সহজভাবে সেরা ক্রিকেটার।’ ক্রিকেট মাঠের সাফল্য তাকে এনে দেয় খ্যাতি ও অর্থ। দেশি-বিদেশি বহু বিজ্ঞাপনে তিনি মুখপাত্র হন। ২০১৩ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত তিনি ইউনিসেফের জাতীয় শুভেচ্ছা দূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তবে বিতর্ক কখনওই সাকিব থেকে দূরে ছিল না। তিনি একাধিকবার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এবং আইসিসির শাস্তির মুখে পড়েন। একবার গ্রাউন্ডসম্যানকে হুমকি দেওয়ার জন্য, আরেকবার টেলিভিশনে অশোভন অঙ্গভঙ্গির কারণে তাকে শাস্তি পেতে হয়। ‘অশোভন আচরণ’-এর অভিযোগে বিসিবি তাকে ৮ মাসের জন্য নিষিদ্ধ করে। ২০১৯ সালে আইসিসির দুর্নীতি দমন ইউনিট এক বুকির সঙ্গে গোপন যোগাযোগের জন্য তাকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে, যার এক বছর স্থগিত রাখা হয়। এই সময়েই সাকিব তার ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে থাকেন, যার মধ্যে স্বর্ণ ব্যবসাও ছিল। কিন্তু যখন সাকিব আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তখন দলটির সরকার ভোট কারচুপি, দুর্নীতি, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, গোপন কারাগার পরিচালনা এবং হাজার হাজার বিরোধী কর্মীকে বন্দি করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র সমালোচিত।

দেশের মানুষও জানতো ক্ষমতায় টিকে থাকতে শেখ হাসিনা কী ভয়ঙ্কর কৌশল নিয়েছেন। তবুও সাকিব সেই দলে যোগ দেন। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সাকিব এক পক্ষ বেছে নেন। সেটা এমন এক পক্ষ, যেটি বহু বাংলাদেশির কাছে দমন, নির্যাতন ও হত্যার প্রতীক। জাতিসংঘ পর্যন্ত বলেছে, শেখ হাসিনার সরকার ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণবিক্ষোভে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করে থাকতে পারে। ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় সাকিব নিজের সামাজিক মাধ্যমে শেখ হাসিনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ছবি প্রকাশ করতেন। এমনকি ক্ষমতাচ্যুতির পরও তিনি সেই অভ্যাস ছাড়েননি- যা এখন তার জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে এনেছে।

বর্তমানে সাকিব যুক্তরাষ্ট্রে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করছেন। সম্প্রতি তিনি শেখ হাসিনার জন্মদিনে সামাজিক মাধ্যমে একটি ছবি পোস্ট করে লিখেছেন- ‘শুভ জন্মদিন, আপা।’

এই পোস্টের কিছুক্ষণের মধ্যেই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া সাংবাদিকদের জানান, সাকিব আর কখনও বাংলাদেশের হয়ে খেলতে পারবেন না। একজন সত্যিকার প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের এক স্বৈরশাসকের সঙ্গে রাজনৈতিক আঁতাতে জড়ানোই শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের উজ্জ্বলতম ক্রিকেট নক্ষত্রের ক্যারিয়ার ধ্বংস করেছে। শেখ হাসিনাকে প্রকাশ্যে শুভেচ্ছা জানানোয় সাকিব প্রকাশ করেছেন এক ধরনের নির্মম সংবেদনশীলতার অভাব। কারণ অসংখ্য বাংলাদেশির কাছে হাসিনা মানে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও নিপীড়ন, যা তাদের জীবন ও পরিবার ধ্বংস করেছে। নিজের রাজনৈতিক অন্ধ আনুগত্য ও বাস্তবতা অনুধাবনে ব্যর্থতার কারণেই সাকিব নিজ হাতে তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের কবর রচনা করেছেন। সূত্র: দ্য ডিপ্লোম্যাট

কিউএনবি/অনিমা/২৯ অক্টোবর ২০২৫,/দুপুর ১:২৩

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit