আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মিথ্যা তথ্য দিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় তথা যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্যে ‘গ্রিনকার্ড’ প্রাপ্তদের বিরুদ্ধে এখোন সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে আইস (ইমিগ্রেশন এ্যান্ড কাস্টমস এ্যানফোর্সমেন্ট) এজেন্টরা। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘অভ্যন্তরীণ দুর্বৃত্তদের কবল থেকে আমেরিকানদের রক্ষা’ শীর্ষক একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেন। এরপর ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত ৪৫ হাজার গ্রিনকার্ডের কার্যকারিতা স্থগিতের পর সংশ্লিষ্টদেরকে নিকটস্থ ইমিগ্রেশন অফিসে হাজিরার নোটিশ (এনটিএ) পাঠানো হয়েছে।
এরমধ্যে অন্তত দুই হাজার বাংলাদেশিও আছেন বলে কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে। অর্থাৎ তারা রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা অথবা অন্য কোন কর্মসূচিতে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য যে তথ্য-উপাত্ত দাখিল করেছেন সেগুলোর সত্যতা নিয়ে ইউএসসিআইএস (ইউএস সিটিজেনশিপ এ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিস)’র সন্দেহের হওয়ার পরই এনটিএ ইস্যু করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে ইউএসসিআইএস’র মুখপাত্র মাথিউ ট্র্যাগেসার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ব্যবস্থাকে যারা প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেয়ে মিথ্যা তথ্য-উপাত্ত দাখিল করেছেন এবং সে সব অসৎ মানুষেরা অভিবাসন ব্যবস্থার প্রকৃত ধারাকে অপদমিত করতে চেয়েছে, শুধু তাই নয় যারা দুর্বৃত্তপনায় লিপ্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। তাদের চিহ্নিত ও বহিষ্কারের জন্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উপরোক্ত আদেশটি মন্ত্রের মত কাজ করছে। এজন্যে এসাইলাম কিংবা অন্য কোন প্রোগ্রামে গ্রিনকার্ডপ্রাপ্তদের ব্যাকগ্রাউন্ড নতুন করে অনুসন্ধান করা হচ্ছে। আর এই প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হচ্ছে সিটিজেনশিপের আবেদনের পরই। অর্থাৎ বিদ্যমান রীতি অনুযায়ী গ্রিনকার্ড প্রাপ্তির ৫ বছর পর সিটিজেনশিপের আবেদন করা যায়। সেই আবেদনের সময়েও অনেক কিছু উল্লেখ করতে হয়।
উদ্ভূত পরিস্থিতি প্রসঙ্গে এক্সিডেন্ট কেস, মেডিক্যাল মেল প্র্যাকটিস ও ইমিগ্রেশন বিষয়ে অভিজ্ঞ আমেরিকা সুপ্রিম কোর্টে লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রথম বাংলাদেশি-আমেরিকান আইনজীবী এবং আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল বার এসোসিয়েশনের পরিচালক অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী ২৭ অক্টোবর এ সংবাদদাতাকে জানান, সিটিজেনশিপের আবেদনের পর ইউএসসিআইএস সকল তথ্য উপাত্ত খতিয়ে দেখছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ততার কারণে ক্ষমতাসীনদের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছে বলে মিথ্যা তথ্য দাখিল করা হয়েছিল এবং সে সবের মাধ্যমেই তারা গ্রিনকার্ড পেয়েছে, সে সব গ্রিনকার্ড এখোন রিকল করা হচ্ছে। অর্থাৎ সে সব গ্রিনকার্ডের কার্যকারিতা স্থগিতের পর ‘নোটিশ টু এ্যাপিয়ার’ (এনটিএ) ইস্যু করা হচ্ছে ইমিগ্রেশন আদালতে যাবার জন্যে। অর্থাৎ তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সে সময় হাতে গ্রিনকার্ড থাকলেও সেটি আর এ্যাক্টিভ থাকে না। এনটিএ প্রাপ্তরা যদি ঐ গ্রিনকার্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করতে চান কিংবা এনটিএ হাতে পাবার আগেই অন্য কোন দেশ ভ্রমণে থাকেন, তাহলে ফেরার সময় এয়ারপোর্টে তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে এবং নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটছে। আমার কিছু মক্কেল রয়েছেন এমন বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে। আরো যারা এনটিএ পেয়েছেন তাদের উচিত হবে অবিলম্বে অভিজ্ঞ একজন অ্যাটর্নির শরনাপন্ন হওয়া। সে অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা। মঈন অবশ্য উল্লেখ করেছেন যে, ইতিমধ্যেই যারা সিটিজেনশিপ পেয়েছেন তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন।
ক্যালিফোর্নিয়া, মিশিগান, টেক্সাস, নিউজার্সি, পেনসিলভেনিয়া, কানেকটিকাট, নিউইয়র্ক, ভার্জিনিয়া, ওহাইয়ো, আলাবামা, ম্যাসেচুসেটস, কানেকটিকাট প্রভৃতি স্টেট থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রতি সপ্তাহে গড়ে ১৮৪০ জনকে এনটিএ ইস্যু করা হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের আমলেও এমন পদক্ষেপ অবলম্বন করা হয়েছে। তবে বর্তমানে সে তুলনায় ২৮১১% বৃদ্ধি পেয়েছেন এনটিএ ইস্যু এবং ভুয়া ও মিথ্যা তথ্যে গ্রিনকার্ড প্রাপ্তদের বহিষ্কারের প্রক্রিয়া-এ তথ্য জানায় ইউএসসিআইএস। এনটিএ প্রাপ্তদের ৯০% হচ্ছেন রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থী।
কিউএনবি/অনিমা/২৮ অক্টোবর ২০২৫,/সন্ধ্যা ৭:৩০