শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪:১৪ পূর্বাহ্ন

ইসলামী রাজনীতির প্রধান উৎস আল-কোরআন

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ৩৭ Time View

ডেস্ক নিউজ : ইসলামী রাজনীতি ও রাষ্ট্রব্যবস্থা শুধু সামাজিক বা প্রশাসনিক কোনো কাঠামো নয়, এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে এক গুরুত্বপূর্ণ বিধান। তাই পবিত্র কোরআনে রাজনীতি, শাসনব্যবস্থা, ন্যায়বিচার, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, নাগরিক অধিকার এবং অপরাধবিষয়ক বিধানগুলো স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এগুলো ইসলামী শাসনের মূলনীতি। যার বিস্তারিত ব্যাখ্যা পাওয়া যায় নবী করিম (সা.)-এর সুন্নাহ, সাহাবিদের ঐকমত্য (ইজমা), কিয়াস, জনস্বার্থ ও শরিয়াসম্মত রীতিনীতি থেকে।

এটি ‘সিয়াসাহ শারইয়্যাহ’ নামে পরিচিত। পবিত্র কোরআনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে রাজনীতির উল্লেখ আছে। কোরআনের ভাষায়—‘বলে দাও, নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু—সবই বিশ্বজগতের রব আল্লাহর জন্য। তাঁর কোনো অংশীদার নেই।

আর আমাকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এবং আমিই প্রথম আত্মসমর্পণকারী।’
(সুরা : আনআম, আয়াত : ১৬২-১৬৩)

একজন মানুষ তখনই প্রকৃত মুসলিম হতে পারে, যখন সে আল্লাহর সব আদেশের প্রতি সম্পূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশে বিশ্বাস করো আর অন্য অংশে অস্বীকার করো? যারা এমন কাজ করে, তাদের জন্য দুনিয়াতে অপমান ছাড়া আর কী প্রতিদান হতে পারে? আর কিয়ামতের দিনে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হবে কঠোরতম শাস্তির দিকে।

আর তোমরা যা করো, আল্লাহ তা থেকে অজ্ঞ নন…।’
(সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ৮৫-৮৬)

পবিত্র কোরআনে ইসলামী রাজনীতির মূলনীতি

শাসনব্যবস্থার কর্তৃত্ব আল্লাহর : পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘নিঃসন্দেহে সৃষ্টি ও আদেশ শুধু তাঁরই (আল্লাহর)।’

(সুরা : আরাফ, আয়াত : ৫৪)

অতএব, একজন প্রকৃত মুমিন সেই, যে আল্লাহর বিচারের প্রতি সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ করে। আল্লাহ বলেন, “মুমিনদের কথা তো কেবল এই যে যখন তাদের আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের দিকে ডাকা হয়, যাতে তিনি তাদের মধ্যে বিচার করেন, তখন তারা বলে—‘আমরা শুনলাম এবং আনুগত্য করলাম।’ আর তারাই সফলকাম হবে।”
(সুরা : নুর, আয়াত : ৫১)

অন্য আয়াতে এসেছে, ‘আর যারা আল্লাহ যা নাজিল করেছেন তার দ্বারা বিচার করে না, তারাই জালিম।’

(সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৪৫)

রাষ্ট্রক্ষমতা পবিত্র আমানত : অর্পিত দায়িত্ব ও নেতৃত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও কঠিন আমানত। মহান আল্লাহ আমানত রক্ষার প্রতি অত্যন্ত জোর তাগিদ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন, তোমরা আমানতগুলো প্রাপকদের কাছে পৌঁছে দাও।’

(সুরা : নিসা, আয়াত : ৫৮)

ন্যায়বিচারের সঙ্গে শাসন পরিচালনা : ইসলামের চোখে নিজের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়, নিকটাত্মীয় কিংবা শত্রুর ক্ষেত্রের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! আল্লাহর জন্য দৃঢ়ভাবে ন্যায়বিচারক সাক্ষ্যদাতা হও। কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ যেন তোমাদের ন্যায়বিচার থেকে বিরত না করে। ন্যায়বিচার করো—এটাই তাকওয়ার সবচেয়ে নিকটবর্তী।’

(সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৮)

শাসকের প্রতি শাসিতের আনুগত্য : শাসকদের ন্যায়বিচারের প্রতিদানে শাসিতের জন্য তাদের প্রতি আনুগত্য করা বাধ্যতামূলক। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! আল্লাহর আনুগত্য করো, রাসুলের আনুগত্য করো এবং তোমাদের মধ্য থেকে যারা কর্তৃত্বশীল—তাদেরও।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৫৯)

তবে অবাধ্যতা, জুলুম ও কুফরির ক্ষেত্রে শাসকের আনুগত্য বৈধ নয়। কিয়ামতের দিন অন্যায় শাসকদের অনুসারীরা আফসোস করে বলবে, ‘হায়, যদি আমরা আল্লাহর আনুগত্য করতাম এবং রাসুলের আনুগত্য করতাম! আমাদের প্রভু, আমরা তো আমাদের নেতাদের ও প্রভাবশালীদের আনুগত্য করেছিলাম, আর তারা আমাদের পথভ্রষ্ট করেছিল।’

(সুরা : আহজাব, আয়াত : ৬৬-৬৭)

শুরার (পরামর্শ) ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা : আল্লাহ তাঁর প্রিয় রাসুল (সা.)-কে বলেন, ‘আপনি তাদের (সাহাবিদের) সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পরামর্শ করেন।’

(সুরা : আল ইমরান, আয়াত : ১৫৯)

আর রাসুল (সা.) ছিলেন সর্বাধিক পরামর্শকারী। তাই শুরা মুসলিম সমাজের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সংযম, আত্মরক্ষা ও যুদ্ধ : আল্লাহ মুসলমানদের ধৈর্য ধরতে বলেছেন, যতক্ষণ না প্রতিরোধের সামর্থ্য হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘অতএব ক্ষমা করো এবং উপেক্ষা করো, যতক্ষণ না আল্লাহ নিজেই নির্দেশ দেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছুর ওপর ক্ষমতাশালী।’

(সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১০৯)

পরবর্তী সময়ে যখন মুসলমানরা শক্তি অর্জন করল, তখন আত্মরক্ষার অনুমতি দিলেন—‘যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হচ্ছে, তাদের যুদ্ধ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, কারণ তাদের প্রতি জুলুম করা হয়েছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের সাহায্য করতে সক্ষম।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ৩৯)

এরপর শত্রুর বিরুদ্ধে সার্বিক যুদ্ধের আদেশ দেওয়া হলো—‘আল্লাহর পথে যুদ্ধ করো তাদের সঙ্গে, যারা তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে, কিন্তু সীমা অতিক্রম কোরো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমা লঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৯০)

শান্তিচুক্তি উত্তম পন্থা : মুসলিম রাষ্ট্রের স্বার্থের অনুকূলে শান্তিচুক্তি করা বৈধ, বরং উত্তম পন্থা। আল্লাহ বলেন, ‘যদি তারা শান্তির দিকে ঝুঁকে পড়ে, তাহলে তুমিও তার দিকে ঝুঁকে পড়ো এবং আল্লাহর ওপর ভরসা করো।’

(সুরা : আনফাল, আয়াত : ৬১)

হুদাইবিয়ার শান্তিচুক্তিই এর বাস্তব উদাহরণ। তবে শক্তি অর্জনের পর দুর্বলতা প্রদর্শন করা বা শত্রুর ওপর নির্ভর করা নিষিদ্ধ।

মুসলিম রাষ্ট্রে অমুসলিম নাগরিকদের মর্যাদা : মুসলিম দেশে সংখ্যালঘুরা মুসলমানের মতোই সামাজিক অধিকার ভোগ করে থাকে। সমাজে তাদের প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করার কোনো সুযোগ নেই। সমাজে সংখ্যালঘুদের সামাজিক অধিকার পরিপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে ইসলাম বদ্ধপরিকর। আল্লাহ তাআলা অমুসলিমদের সঙ্গে সুবিচারপূর্ণ ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছেন। কোরআনে এসেছে, ‘যারা দ্বিনের ব্যাপারে তোমাদের সঙ্গে লড়াই করেনি এবং তোমাদেরকে তোমাদের বাড়িঘর থেকে বের করে দেয়নি, তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার ও ইনসাফ (সাম্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা) করতে আল্লাহ নিষেধ করেননি। নিশ্চয়ই আল্লাহ ইনসাফকারীদের পছন্দ করেন।’

(সুরা : মুমতাহিনা, আয়াত : ৮)

সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে করণীয় : আল্লাহ তাআলা মানব সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে বলেন, ‘যদি মুমিনদের দুই দল যুদ্ধবিগ্রহে লিপ্ত হয়, তবে তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও। আর যদি একটি দল অন্যটির ওপর জুলুম করে, তবে সে দলটির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো যতক্ষণ না তারা আল্লাহর হুকুমে ফিরে আসে। আর যদি তারা ফিরে আসে, তবে তাদের মধ্যে ন্যায়সংগতভাবে শান্তি স্থাপন করো এবং ন্যায় বজায় রাখো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন।’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ৯)

চুরি, ডাকাতি ও সন্ত্রাসের শাস্তি : আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘চোর পুরুষ হোক বা নারী—তাদের হাত কেটে ফেলো, তাদের কৃতকর্মের প্রতিফলস্বরূপ এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হিসেবে। আল্লাহ পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা : মায়িদাহ, আয়াত : ৩৮)

দেশে সন্ত্রাস ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের শাস্তি প্রসঙ্গে বলেন, ‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং দেশে অশান্তি ও বিপর্যয় সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হয়, তাদের শাস্তি হলো—তাদের হত্যা করা হবে অথবা ক্রুশবিদ্ধ করা হবে, অথবা তাদের হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলা হবে, অথবা তাদের দেশান্তরিত করা হবে। এটা হলো তাদের জন্য দুনিয়ার লাঞ্ছনা, আর আখিরাতে আছে ভয়াবহ শাস্তি।’ (সুরা : মায়িদাহ, আয়াত : ৩৩)

হকদারকে হক দিয়ে দাও : যার যা হক, তা তাকে যথাসময়ে পৌঁছে দেবে। আল্লাহ বলেন, ‘…তোমরা তার ফল থেকে আহার করো, যখন তা ফলদান করে এবং ফল কাটার দিনেই তার হক দিয়ে দাও। আর অপচয় কোরো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১৪১)

সুতরাং ইসলামী রাজনীতি শুধু ক্ষমতার নোংরা লড়াই নয়, বরং তা ইবাদতের অংশ।

কিউএনবি/অনিমা/২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, /সকাল ৭:১৭

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

September 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit