মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:২৩ পূর্বাহ্ন

বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে তরুণ-তরুণীর মাঝে যোগাযোগের সীমারেখা কতটুকু?

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ১৮ Time View

ডেস্ক নিউজ : বিয়ে একটি ইবাদত। স্বপ্নীল জীবনের পথ চলা। মানসিক প্রশান্তি ও স্বস্তির বন্ধন। প্রতিটি মানুষ রঙিন এই বন্ধনের স্বপ্ন দেখে । এই স্বপ্ন পূরণের পূর্বে সামাজিক ও পারিবারিক বিভিন্ন কিছুর আয়োজন করা হয়। বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে আংটি বদল বা আংটি পরানো হয়। যাকে এনগেজমেন্ট বলে। 

ছেলে-মেয়ের পরিবার বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে আনন্দ অনুষ্ঠান করে। যাকে বলে বাগদান অনুষ্ঠান। এছাড়া ব্যক্তিগতভাবেও তরুণ-তরুণীরা পরস্পরে বিয়ের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হন। 

কিন্তু প্রশ্ন হলো, বিয়ের প্রতিশ্রুতি বা এনগেজমেন্টের পর তরুণ-তরুণীর মাঝে যোগাযোগের সীমারেখা কতটুকু? এনগেজমেন্ট বা বাগদান হলে কি একে অপরের জন্য বৈধ হয়ে যান?

মূলত এসব কিছু হলো বিয়ের পূর্ব ধাপ। এনগেজমেন্ট হলেই দাম্পত্য সম্পর্ক বৈধ হয়ে যায় না। বরং একে অপরের জন্য তারা পরপুরুষ এবং পরনারী হিসেবে গণ্য হন।

প্রসিদ্ধ ফতোয়াগ্রন্থ আলমগিরীতে বলা হয়েছে, বিয়ের আগ পর্যন্ত বাগদানকারীর সঙ্গে মেয়েটির সম্পর্ক পর পুরুষের মতো। (ফতোয়ায়ে আলমগিরী, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ৩৪৭)

ফতোয়ার আরেক গ্রন্থে বলা হয়েছে- বিয়ের আগ পর্যন্ত বাগদত্তা মেয়েটি প্রস্তাবকারীর জন্য বৈধ নয়। (রদ্দুল মুখতার, ৩/৭)

এনগেজমেন্ট বা আন্টি পড়ানো হলেও বিয়ের পূর্ব পর্যন্ত  মেয়েটি পরনারী গণ্য হন। পরনারীর সঙ্গে একান্তে কথা, নির্জনে সময় কাটানো ইসলামে নিষেধ। 

নবীজি বলেন, কোনো পুরুষ যেন কোনো নারীর সঙ্গে একান্তে না থাকে। কারণ তখন শয়তান তাদের তৃতীয় সঙ্গী হয়। (সুনানে তিরমিযী, হাদিস: ২১৬৫)

বিয়ের প্রতিশ্রুতির পর প্রযুক্তির কাঁধে চড়ে তরুণ-তরুণীদের গোপন আলাপ বা চ্যাটিং মূলত হাদিসে বর্ণিত একান্ত সাক্ষাতেরই আধুনিক রূপ। আংটি বদল বা এনগেজমেন্ট সত্ত্বেও ছেলে-মেয়ের দেখা-সাক্ষাৎ, একান্তে ঘোরাঘুরি, হাসি ঠাট্টা, লং ড্রাইভ বা প্রেমালাপ বৈধ নয়। 

ভিডিও কল, হাত ধরা, একান্তে মেলামেশার অনুমোদন নেই। কারণ এখনো তারা বৈধ দম্পতি নন। ফলে তারা স্বামী–স্ত্রীর মতো স্বাধীনতা পাবেন না। বরং আকদের আগে তাদের অবারিত স্বাধীনতায় খুলে যাবে গুনাহের পথ। ভারী হবে পাপের পাল্লা।

হযরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণিত হাদিস। নবীজি বলেন- চোখের জিনা হলো হারাম কিছু দেখা। জিহ্বার জিনা হলো অন্যায় কথা বলা। কানের জিনা হলো অবৈধ কিছু শোনা। হাতের জিনা হলো নিষিদ্ধ জিনিস ধরা। পায়ের জিনা হলো অবৈধ পথে চলা। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬৫৭)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, আমি নবজিকে বলতে শুনেছি, মাহরাম ছাড়া কোনো পুরুষ যেন কোনো নারীর সাথে নির্জনে না যায়। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫২৩৩)

মাহরাম মানে যেসব আত্মীয়-স্বজনের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থায়ীভাবে হারাম।

মাহরাম ছাড়া নির্জনে তরুণ-তরুণীর সাক্ষাৎ হলে শয়তান সুযোগ নেয়। অবৈধ সম্পর্কে জড়াতে প্রলুদ্ধ করে। তাই অহরহই দেখা যায় বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে ধোকা ও ধর্ষণের সংবাদ।

বিয়ের জন্য পাত্রী দেখার নিয়ম

বিয়ের প্রতিশ্রুতি বা এনগেজমেন্ট হলে পাত্রী দেখা যাবে।

নবীজি বলেন, যখন তোমাদের কেউ কোনো নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়, যদি সে তার মধ্যে এমন কিছু দেখে নিতে পারে যা তাকে বিয়েতে উৎসাহিত করে, তবে তা করতে দোষ নেই। (সুনান আবু দাউদ: ২০৪২)

ফতোয়ার কিতাবে বলা হয়েছে, ছেলে পক্ষের বিয়ের নিয়ত থাকলে এবং মেয়ে পক্ষ প্রস্তাব গ্রহণ করবে বলে মনে হলে পাত্রী দেখা যাবে। 

“لا يجوز النظر إلى الأجنبية بشهوة، ويجوز للخاطب النظر إلى من يريد نكاحها إن غلب على ظنه الإجابة.

অর্থাৎ কোনো পরনারীর নারীর দিকে কামনা সহকারে তাকানো জায়েজ নয়। তবে যদি বিয়ের উদ্দেশ্য থাকে এবং প্রস্তাব গ্রহণ করবে বলে মনে হলে মেয়ে দেখা যাবে। (আদ্দুরুল মুখতার ২/২৮৫)

মেয়ে দেখার সময় অভিভাবক উপস্থিত থাকতে হবে। নির্জনে বা একাকী দেখা যাবে না।

বিয়ের পূর্ণ ইচ্ছা থাকলে পাত্রীর মুখ ও হাত দেখা যায়। তবে লোলুপ মানসিকতায়  নয় বরং তার সৌন্দর্য ও স্বাস্থ্যের গঠন বোঝার জন্য তাকাবে। (হেদায়া ১/২১০, ফতোয়া আলমগিরি, ১/২৮৪)

পর্দা, শালীনতা রক্ষা করে পাত্রীর সঙ্গে দেনমোহর, বাসস্থান অনুষ্ঠানের দিনক্ষণ ও প্রয়োজনীয় বিষয়ে কথা বলা যাবে। কিন্তু এই কথা বলা কোমল স্বর বা প্রলুব্ধকর ভঙ্গিতে না হতে হবে। 

আল্লাহ তাআলা বলেন-নারীগণ নরম স্বরে কথা বলো না। কারণ যার অন্তরে রোগ আছে সে যেন লোভে না পড়ে। সূরা আহযাব: আয়াত ৩২

পাত্রী দেখতে গিয়ে ছেলে তাকে স্পর্শ করতে পারবে না। ধরতেও পারবে না। নবীজী বলেন, কারও মাথায় লোহার সূই ফোটানোকে সহজ মনে করি ওই নারীকে স্পর্শ করার চাইতে যে তার জন্য বৈধ নয়। (আল মুজামূল কাবীর লিত তবরানি:২০/২১২) 

বিয়ে কোন একতরফা বিষয় নয়। বরং দু’পক্ষের সম্মতি অপরিহার্য। তাই শুধু ছেলে-মেয়েকে দেখবেনা। বরং মেয়েরও অধিকার আছে ছেলেকে দেখার। 

হযরত খুনাইসা বিনতে খিজাম আল-আনসারিয়া রা. থেকে বর্ণিত। তার পিতা এমন ব্যক্তির সঙ্গে তাকে বিয়ে দেন যাকে তিনি পছন্দ করেন নি। ফলে তিনি নবীজীর এর কাছে এ ব্যাপারে অভিযোগ করলেন। তখন নবীজি সে  বিয়ে বাতিল করে দিলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫১৩৮)  

বিয়ের প্রতিশ্রুতি বা এনগেজমেন্ট হলেই আবেগের ঝড়ে পরাজিত হওয়া যাবে না। বরং পর্দা, শালীনতা ও শরীয়তের সীমার ভিতর থেকে প্রয়োজনীয় যোগাযোগ করতে হবে । তাহলেই আল্লাহর রহমত এবং ঐশী আলোয় আলোকিত হবে নতুন জীবন। গড়ে উঠবে  একটি পবিত্র, সুন্দর ও কল্যাণকর দাম্পত্য জীবন। 

পবিত্র জীবনের পূর্ব মুহূর্তটি ধূসরিত হবে না পাপের কালিমায়।

লেখক: গবেষক আলেম ও শিক্ষক, শেখ জনূরুদ্দীন রহ দারুল কুরআন চৌধুরীপাড়া মাদরাসা, ঢাকা- ১২১৯

 

কিউএনবি/আয়শা/০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, /রাত ১১:৪৩

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

September 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit